সাকিবকে নিয়ে খুব আশাবাদী
আজকের দিনটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। শুধু বিশ্বকাপ নয়, সামগ্রিকভাবে এ মুহূর্তে বাংলাদেশের একটা জয় দরকার। এমন দিনে বাংলাদেশের সামনে অপেক্ষমাণ চেনা প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে। এ ম্যাচটা জিততে পারলে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে দ্বিতীয় পর্বে দুটি ম্যাচ জেতার কৃতিত্বের দাবিদার হতে পারবে বাংলাদেশ। এটা আমাদের জন্য বড় অর্জন হবে। ক্রিকেট জাতি হিসেবে এ মুহূর্তে আমাদের যে ভাবমূর্তি, আজ জিতলে সেখান থেকেও উত্তরণ হতে পারে। সঙ্গে বিশ্বকাপের সেমিতে যাওয়ার কাগুজে সম্ভাবনাও থাকবে।
কিন্তু বাংলাদেশ দলের কাছ থেকে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের আশা করা কঠিনই। দলটা এখন খুবই অস্থিতিশীল অবস্থায় আছে। তারপরও এ দলের কিছু খেলোয়াড় আছে, যাদের ম্যাচ জেতানোর সামর্থ্য আছে। বোলিং, ব্যাটিং—দুই বিভাগেই সে শক্তি আছে। সেটাই ভরসার জায়গা। প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে দলের আবহটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ধারাবাহিকভাবে তারা ভালো খেলছে। পাকিস্তানকে হারানোর পর আত্মবিশ্বাসটাও চাঙা থাকবে।
আমি খুব আশাবাদী সাকিব আল হাসানকে নিয়ে। সাকিব ব্যর্থতাকে বয়ে বেড়ায় না। সে যেহেতু অধিনায়ক, অন্যরাও তাকে অনুসরণ করবে। আশা করছি, সাকিবের জন্যই গত ম্যাচের ধাক্কাটা সেভাবে অনুভূত হবে না।
আমাদের এ মুহূর্তে টপ অর্ডার থেকে একটা জুটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেদিন আমরা খুব ভালো শুরু করেছিলাম। আমরা যে বিস্ফোরক ব্যাটিং করতে পারি, সেটার একটা উদাহরণ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ। তবে আমার মনে হয় না আজ বড় রানের ম্যাচ হবে। খুব ভালো ব্যাটিং করলে ১৫০-১৬০ রান হতে পারে। এখন পর্যন্ত সাকিব, লিটন, ইয়াসিররা একটুও পারফর্ম করেনি। আমরা যদি তাদের কাছ থেকে একটু পারফরম্যান্স পাই, তাহলে ব্যাটিং দুর্দশাটা কিছুটা হলেও কেটে যাবে।
আমাদের বোলাররা যে ছন্দে আছে, কিছুটা পুঁজি পেলে তারা ভালো করবে। তবে স্পিন নিয়ে দুশ্চিন্তা আছে। তাদের ভালো করতে হবে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পুরোপুরি পেসনির্ভরতার সুযোগ নেই। স্পিনারদের ব্যবহার করতেই হবে। সাকিবকে বলতে শুনেছি স্পিনাররা ভালোই করছে। কিন্তু আমার তেমন মনে হচ্ছে না।
ভয়েরও কারণ আছে। জিম্বাবুয়ের পেস বোলাররা পাকিস্তানের বিপক্ষে অসাধারণ বোলিং করেছে। ব্র্যাড ইভাসু, ব্লেসিং মুজারাবানি, রিচার্ড এনগারাভা—ওদের যে উচ্চতা আর যেভাবে তারা উইকেটের সুবিধাটা নিয়েছে, সেটাকে খুবই বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং বলতে হবে। উইকেটের কী চমৎকার ব্যবহার তারা করেছে! যে কারণে পাকিস্তানের বাবর-রিজওয়ানদের মতো ব্যাটসম্যানরাও রান বের করতে পারেনি। আমাদের সে জায়গায় সতর্ক হতে হবে। টানা বড় শট খেলার যে চেষ্টা দলের মধ্যে দেখছি, সেটা করা যাবে না। ব্যাটিং শৃঙ্খলাটা থাকতেই হবে।
কাল নিউজিল্যান্ড যা করেছে, সেটা আদর্শ উদাহরণ। ওরা দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়েও জুটি গড়ে শেষ পর্যন্ত ১৬০–এর ঘরে পৌঁছে গেছে। ওপরে একটা জুটি খুবই জরুরি। দ্রুত উইকেট না হারিয়ে যদি ৫০-৬০ রানের জুটি গড়তে পারি, তাহলে ম্যাচের আবহ পাল্টে যাবে। আমরা প্রথম ১০ ওভারে ৬০-৬৫ রান করলেও ক্ষতি নেই। ওই ভিত্তিটা শেষ ১০ ওভারে আমাদের অনেক দূর এগিয়ে নেবে। পরের ব্যাটসম্যানরা এই উইকেটে রান করার সামর্থ্য রাখে, সেটা কিন্তু আফিফ-মোসাদ্দেকরা প্রথম ম্যাচেই দেখিয়েছে।
জিম্বাবুয়েও একটু চাপে থাকবে। তারা বাংলাদেশকে হারালেই শেষ চারের দৌড়ে এগিয়ে যাবে। সে দিক থেকে তাদের নিজেদের কাছেই একটা প্রত্যাশা থাকবে। ব্যাটিং-বোলিংয়ে ওরা আক্রমণাত্মক হতে চাইবে। সে সুযোগটা আমরা নিতে পারি। জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশি মানসিকতাটা ভালো জানে। বিশেষ করে সিকান্দার রাজা। সে খুবই বুদ্ধিদীপ্ত ক্রিকেটার। ব্যাটিং তো আছেই। এখন বোলার হিসেবে অনেক দূর এসেছে। কিছুদিন আগেও বোলার হিসেবে অতটা পরিচিত ছিল না। আর যেহেতু মিস্ট্রি স্পিনারে পরিণত হয়েছে, ভালো করার জন্য তার কন্ডিশনের সাহায্য দরকার হচ্ছে না। সে একাই ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে। জিম্বাবুয়ে দলে অনেক ভালো ক্রিকেটার আছে। কিন্তু রাজাই বড় হুমকি বাংলাদেশের।