মেন্ডিস–হারিস–নজিবুল্লাহরাই ভরসা চট্টগ্রামের
বিনোদনের ক্রিকেট টি-টোয়েন্টি, গ্যালারি ভরে বেশি এই খেলাতেই। তবে বাংলাদেশে ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি বলতে আছে বিপিএল-ই, ক্রিকেটার-দর্শক-সমর্থকদের অপেক্ষা থাকে এই ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের জন্য। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বছর বলে এবার সে অপেক্ষা আরও বেশি। ১৯ জানুয়ারি শুরু হতে যাওয়া বিপিএলের দশম আসর সামনে রেখে প্রতিদ্বন্দ্বী সাত দলকে পরিচয় করিয়ে দিতেই এই আয়োজন। আজ তৃতীয় পর্বে থাকছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স—
চট্টগ্রামের দলটা ‘চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স’ হওয়ার পর প্রথম দুই বছর ছিল বিপিএলের তৃতীয় সেরা দল। সর্বশেষ বিপিএলে সেই চট্টগ্রামই বিপিএল শেষ করেছে ৭ নম্বরে থেকে। লিগ পর্বের ১২ ম্যাচের মধ্যে চট্টগ্রাম জিতেছে মাত্র ৩টি। ২০২২-২৩ মৌসুমের সেই ব্যর্থতা থেকে বেরিয়ে আসতে নতুন মৌসুমে ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে দলের খেলোয়াড় তালিকাটাও ঢেলে সাজিয়েছে চ্যালেঞ্জার্স।
গত মৌসুমের অধিনায়ক শুভাগত হোম, অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার জিয়াউর রহমান, বাঁহাতি স্পিনার নিহাদউজ্জামানকে তারা ধরে রাখলেও কোচ জুলিয়ান উড ও ম্যানেজার ফাহিম মুনতাসির এবার থাকছেন না। শুভাগত এবারও দলটির নেতৃত্বে দেবেন কি না, সেটিও ঘোষণা করেনি চট্টগ্রাম। বিপিএলের দশম আসরে দলের প্রধান কোচ তুষার ইমরান। গতবার তিনি ছিলেন সিলেট স্ট্রাইকার্সের ব্যাটিং কোচ। জাতীয় দলের সাবেক এই ক্রিকেটারের অধীনে এবার কি বদলাবে চট্টগ্রামের ভাগ্য?
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স বরাবরই বিদেশি খেলোয়াড়নির্ভর দল। আখতার গ্রুপ ফ্র্যাঞ্চাইজি কিনে নেওয়ার পর থেকেই হাই স্কোরিং টপ অর্ডার ও ফিনিশার দিয়ে দল সাজিয়ে আসছে। ২০১৯-২০ মৌসুমে টপ অর্ডারে ছিলেন ক্রিস গেইল ও চ্যাডউইক ওয়ালটনের মতো বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান। ২০২১-২২ মৌসুমে চট্টগ্রামের উইল জ্যাকস ছিলেন বিপিএলের সেরা ব্যাটসম্যান। বেনি হাওয়েল বেশ কয়েকটি ম্যাচে বিধ্বংসী ব্যাটিং করেছেন। সেই দুই মৌসুমেই প্লে-অফে জায়গা করে নিয়েছিল চট্টগ্রাম। কিন্তু সর্বশেষ আসরে চট্টগ্রাম সেই অর্থে বড় বিদেশি নাম দলে ভেড়াতে পারেনি, মাঠেও হয়েছে ব্যর্থ।
এবার সে ঘাটতি পুষিয়ে দিতে চট্টগ্রামের টপ অর্ডারে নেওয়া হয়েছে পাকিস্তানের মোহাম্মদ হারিসকে। ২২ বছর বয়সী তরুণের টি-টোয়েন্টি স্ট্রাইক রেট ১৪৬.৬১। দুই লঙ্কান তারকা কুশল মেন্ডিস, আভিস্কা ফার্নান্ডোও খেলবেন চট্টগ্রামের হয়ে। ইংলিশ ব্যাটসম্যান স্টিভ এসকিনাজি হতে পারেন চট্টগ্রামের নতুন ‘উইল জ্যাকস’
ফিনিশারের ভূমিকায় দেখা যাবে আফগান হার্ড হিটার নাজিবউল্লাহ জাদরান ও আয়ারল্যান্ডের অলরাউন্ডার কার্টিস ক্যাম্ফারকে। আর চট্টগ্রামের ব্যাটিং আগলে কাজটা করতে হবে আবদুল্লাহ শফিককে। পাকিস্তানের এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের টেস্ট ও ওয়ানডে ক্যারিয়ারের শুরুটা হয়েছে দারুণ। পিএসএল রেকর্ডও খারাপ নয়। ১৩০ স্ট্রাইক রেটে রান করা শফিকের টি-টোয়েন্টিতে শতকও আছে। স্থানীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দুই তরুণ ব্যাটসম্যান তানজিদ হাসান ও শাহাদাত হোসেন কেমন করেন, সেদিকে চোখ থাকবে অনেকের।
আমরা বিদেশিনির্ভর দল, এটা বললে ভুল হবে না।তুষার ইমরান, চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের কোচ
চট্টগ্রামের বোলিংয়ে অবশ্য বিদেশি-নির্ভরতা নেই। নিহাদউজ্জামান ছিলেন গত মৌসুমে দলের সেরা বোলার। নিষেধাজ্ঞা থেকে ফেরা শহীদুল ইসলামের ঘরোয়া রেকর্ডও দুর্দান্ত। চট্টগ্রামের বোলিং অনেকটাই নির্ভর করবে তাঁর ওপর। অভিজ্ঞ পেসার আল আমিন হোসেন ও সালাউদ্দিন শাকিল কিছু ম্যাচ পেতে পারেন। চোট থেকে ফেরা পাকিস্তানি ফাস্ট বোলার মোহাম্মদ হাসনাইনকে দলে নিয়েছে চট্টগ্রাম। খেলা থেকে দীর্ঘ বিরতির পর তিনি কেমন করেন, সেটি দেখার বিষয়। গতবারের মতো এবারও থাকবেন আইরিশ অলরাউন্ডার ক্যাম্ফার। গত মৌসুমে ক্যাম্ফারকে ডেথ ওভারে বোলিং করতে দেখা গেছে। হাসনাইনের সঙ্গে এবারও সে দায়িত্বে দেখা যেতে পারে তাঁকে।
চট্টগ্রামের বিদেশি-নির্ভরতার কথা বলেছেন দলের কোচ তুষার ইমরানও, ‘আমরা বিদেশিনির্ভর দল, এটা বললে ভুল হবে না।’ তবে কোচ মনে করিয়ে দিয়েছেন, টুর্নামেন্টের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত টিকে থাকতে হলে চট্টগ্রামের দরকার হবে দলীয় সাফল্য, ‘সব মিলিয়ে আমরা ভালো সমন্বয় দাঁড় করাতে পেরেছি। এখন সবাই মিলে ভালো খেলতে হবে এবং সেটা দলগতভাবে। একজন-দুইজন ভালো খেললে হবে না। দুই-তিনটা দল আমাদের চেয়ে ভালো মনে হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে হলে আমাদের স্কোয়াডের সবাইকে ভালো করতে হবে।’
স্থানীয় খেলোয়াড়
শুভাগত হোম, জিয়াউর রহমান, নিহাদউজ্জামান, শহীদুল ইসলাম, তানজিদ হাসান, আল আমিন হোসেন, সৈকত আলী, ইমরানুজ্জামান, শাহাদাত হোসেন, সালাউদ্দিন শাকিল, হুসনা হাবিব।
বিদেশি খেলোয়াড়
কুশল মেন্ডিস, আভিস্কা ফার্নান্ডো, মোহাম্মদ হারিস, নজিবউল্লাহ জাদরান, আবদুল্লাহ শফিক, মোহাম্মদ হাসনাইন, স্টিভ এসকিনাজি, কার্টিস ক্যাম্ফার, বিলাল খান।
অধিনায়ক: এখনো ঘোষণা হয়নি।
কোচ: তুষার ইমরান।
গত বিপিএলে অবস্থান: সপ্তম।