এবার প্রেমাদাসায় বাংলাদেশের পেস–দাপট
পাল্লেকেলে, লাহোর কিংবা প্রেমাদাসা…ভেন্যু যা-ই হোক, বাংলাদেশ দলের পেস বোলিং আক্রমণ দাপট দেখাবেই। এ যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ যেমন শ্রীলঙ্কাকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে ৯ উইকেটে ২৫৭ রানে থামানোর কাজটা করেছেন পেসাররাই। লঙ্কানদের ৯ উইকেটের ৮টিই ভাগাভাগি করে নিয়েছেন তাসকিন আহমেদ, শরীফুল ইসলাম ও হাসান মাহমুদ। শ্রীলঙ্কার ইনিংসে রান আউট ছিল একটি, সেটাও করেছেন পেসার হাসান। পেস দাপটের মধ্যে লঙ্কানদের রানটাকে আড়াই শ’র ওপারে নিতে সাহায্য করেছেন সাদিরা সামারাবিক্রমা। চারে নেমে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৭২ বলে ৯৩ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস।
টসে জিতে বোলিং নেওয়ার পর বোলিং দলের কাছে ব্যাটিং পাওয়ার প্লে’তে ভালো করার একটা প্রত্যাশা থাকেই। শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনার পাতুম নিশাঙ্কা ও দিমুথ করুনারত্নের বিপক্ষে যে প্রত্যাশা ছিল বাংলাদেশ দলের বোলারদেরও। বিশেষ করে তাসকিনরা যখন দারুণ ছন্দে, তখন ভালো কিছু আশা করাই যায়। কিন্তু হাসান মাহমুদের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে করুনারত্নে আউট হলেও শুরুর দিকে শ্রীলঙ্কার রান থামাতে পারছিল না বাংলাদেশ দল।
পাওয়ার প্লে’তে অভিজ্ঞ ওপেনারকে হারালেও নিশাঙ্কা ও তিনে নামা কুশল মেন্ডিসে রান আসছিল সহজেই। প্রথম ১০ ওভারে ১ উইকেটে ৫১ রান করে ফেলে শ্রীলঙ্কা। এমন শুরুর পর বড় স্কোর পথে এগোনোর কথা যে কোনো দলের। কিন্তু তা হতে দেননি নাসুম আহমেদ। এক প্রান্ত থেকে ১ ওভার করার পর অন্য প্রান্ত থেকে করেছেন টানা ৬ ওভার। কোনো উইকেট না নিলেও রান দিয়েছেন মাত্র ১৯।
রান থামিয়ে চাপ সৃষ্টি করার যে কাজটা নাসুম করেছেন, সেটা কাজে লাগিয়েছেন বাকি বোলাররা। সাকিব অন্য প্রান্ত থেকে শরীফুল, তাসকিন ও হাসানকে ছোট ছোট স্পেল করিয়ে উইকেট বের করার চেষ্টা করেছেন। সেটা কাজেও লাগে। হাসানের বলে ১৯ তম ওভারে উইকেটের পেছনে ক্যাচ তুললেও বেঁচে যান নিশাঙ্কা। উইকেটকিপার মুশফিকুর রহিম লাফিয়েও সে বলটা গ্লাভস বন্দী করতে পারেননি। তখন তিনি খেলছিলেন ৩৬ রানে। ব্যক্তিগত ২৯ রানের সময় জীবন পেয়েছেন মেন্ডিসও। শরীফুলের বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে স্কয়ার লেগ বাউন্ডারিতে ক্যাচ তুলেছিলেন। কিন্তু শামীম হোসেন লাফিয়েও সে ক্যাচ ধরতে পারেননি।
তবে দুজনের ইনিংস দীর্ঘ হয়নি। ইনিংসের ২৪ তম ওভারে নিশাঙ্কাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন শরীফুল। ৬০ বল খেলে ৪০ রান করে মাঠ ছাড়তে হয় তাঁকে। শরীফুলের শিকার মেন্ডিসও। ২৬ তম ওভারে এই বাঁহাতি পেসারের বাউন্সারে র্যাম্প শট খেলতে গিয়ে থার্ড ম্যানে তাসকিনের হাতে ক্যাচ। আউট হওয়ার আগে ৫০ রান করতে ৭৩ বল খেলেন মেন্ডিস। এই দুটি উইকেটই ছুটতে থাকা শ্রীলঙ্কাকে একটু থমকে দেয়।
মাঝের ওভারে উইকেট শিকারে যোগ দেন তাসকিনও। ৩২ তম ওভারে ফর্মে থাকা চারিত আসালাঙ্কাকে (২৩ বলে ১০ রান) ড্রেসিংরুমে ফিরিয়েছেন। স্লো লেংথ বলে তাসকিনকে মিড অনের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সাকিবের হাতে ধরা পড়েন এই বাঁহাতি। রান রেট বাড়ানোর চাপে স্বচ্ছন্দে খেলতে পারেননি ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাও। ছয়ে নেমে তাঁকে নিজের সহজাত ব্যাটিং করতে দেয়নি বাংলাদেশের আঁটসাঁট বোলিং। ৩৮ তম ওভারে হাসানের বলে কট বিহাইন্ড হওয়ার আগে করতে পারেন ১৬ বলে ৬।
৫ উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কার রান তখন ১৬৪, সেখান থেকে বেশি দূর এগোতে হলে একটা বিশেষ ইনিংস দরকার ছিল। সেটি এসেছে সাদিরা সামারাবিক্রমার ব্যাট থেকে। তিনি চাপের মুখেও ফিফটি করেছেন ৪১ বলে, যেখানে বাউন্ডারি মেরেছেন মাত্র ৪টি। এক-দুই রানে তিনি চাপ সরিয়েছেন। অধিনায়ক দাসুন শানাকার সঙ্গে ৫৭ বলের জুটিতে যোগ করেছেন ৬০ রান। হাসান ও তাসকিনের ডেথ ওভারের বোলিংয়ে লঙ্কান লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানরা আউট হলেও সামারাবিক্রমাকে আউট করার জন্য অপেক্ষা করতে হয় ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত। তাসকিনের স্লোয়ার বল ছক্কায় ওড়াতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় ৭২ বলে ৯৩ রানের দারুণ এক ইনিংস। ৮টি চার ও ২টি ছক্কায় সাজানো ছিল সামারাবিক্রমার ১৩০ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসটি। যেটির সৌজন্যে শ্রীলঙ্কার রানটা এমন একটা জায়গায় পৌঁছেছে, যেখান থেকে জয়ের স্বপ্নও দেখতে পারে স্বাগতিকেরা।