হ্যাটট্রিকের শুরুতে বাংলাদেশ, ফিফটিতেও বাংলাদেশ
ম্যাচটা যে শেষ ওভারে এমন নাটকীয় রূপ নেবে, বাংলাদেশ বা আফগানিস্তান কারও ভাবনাতেই ছিল না। ৫ বলে দরকার মাত্র ২ রান, হাতে ৫ উইকেট—এমন সমীকরণের ম্যাচে ব্যাটিং দলের জয় ছাড়া অন্য কী ঘটার আছে?
কাল সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ–আফগানিস্তান সিরিজের প্রথম টি–টোয়েন্টিতে অন্য কিছু ঘটেওনি। শেষ ওভারের পঞ্চম বলে চার মেরে প্রত্যাশিত জয়ই তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু ১ বল বাকি থাকতে জয়টা এসেছে মাত্র ২ উইকেট ব্যবধানে। কারণ, করিম জানাতের করা ওভারটির দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ—টানা তিন বলে তিন উইকেট হারায় বাংলাদেশ। মেহেদী হাসান মিরাজের পর তাসকিন আহমেদ ও নাসুম আহমেদ আউট হন। শেষ ওভারে তিন বলে উইকেট হারানোয় বাংলাদেশের মুঠোয় থাকা জয় প্রায় ফসকে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। উল্টো দিকে ম্যাচে মাত্র দ্বিতীয় ওভার করতে আসা জানাত হ্যাটট্রিক করে আফগানিস্তানকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন জয়ের কাছে।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য আফগানিস্তান জিততে পারেনি, শরীফুল ইসলামের চারে আচমকা ঝড় সামলে নিয়েছে বাংলাদেশ। তবে এর মধ্যে যা ঘটে গেছে—হ্যাটট্রিক—তাতে আলাদা একটা দাগ বসে গেছে বাংলাদেশের নামের পাশে। সেটা কেমন, তা–ই জানা যাক সংখ্যায় সংখ্যায়।
বাংলাদেশের বিপক্ষে করিম জানাতের হ্যাটট্রিকটি আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে ৫০তম। এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টি হয়েছে ২ হাজার ১৩৮টি। গড়ে ৪২ ম্যাচ পর একটি করে হ্যাটট্রিক দেখেছে ক্রিকেট–বিশ্ব।
শুধু হ্যাটট্রিকের ফিফটিই নয়, আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে প্রথম হ্যাটট্রিকের শিকারও বাংলাদেশ।
২০০৭ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার ব্রেট লি ১৭তম ওভারে সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মুর্তজা ও অলক কাপালিকে তুলে নিয়েছিলেন। টি–টোয়েন্টির প্রথম হ্যাটট্রিকই হয়েছিল বিশ্বকাপে।
১ম ও ৫০তম—টি–টোয়েন্টি হ্যাটট্রিকের দুটি মাইলফলকেই জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের নাম। তবে ‘দুর্গতি’র শেষ এখানেই নয়। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ৫ বার হ্যাটট্রিকের শিকার দলটির নামও কিন্তু বাংলাদেশ।
২০০৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার ব্রেট লি আর ২০২৩ সালে আফগানিস্তানের করিম জানাত—মাঝের তিনটি হচ্ছে ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার লাসিথ মালিঙ্গা, ২০১৯ সালে ভারতের দীপক চাহার ও ২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ার নাথান এলিস।
বাংলাদেশের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪টি হ্যাটট্রিকের শিকার হওয়া দল শ্রীলঙ্কা।
প্রতিপক্ষ বাংলাদেশের বিপক্ষে পাঁচবার হ্যাটট্রিক করতে পারলেও এখন পর্যন্ত একটি হ্যাটট্রিক নেই বাংলাদেশের বোলারদের।
টি–টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি ৫টি করে হ্যাটট্রিক আছে শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ডের বোলারদের। অস্ট্রেলিয়ার হ্যাটট্রিক করা বোলার আছে তিনজন। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ ২টি করে হ্যাটট্রিক আছে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, আয়ারল্যান্ড, বেলজিয়াম, মাল্টা ও সার্বিয়ার। এ ছাড়া ১টি হ্যাটট্রিক আছে ২৫টি দেশের।
বাংলাদেশের হ্যাটট্রিকের শিকার হওয়া ম্যাচগুলোর মধ্যে একটা মজার দিক আছে। পাঁচ হ্যাটট্রিকের সব কটি ভিন্ন ভিন্ন মাঠে। ব্রেট লিরটি কেপটাউনের নিউল্যান্ডসে, মালিঙ্গারটি কলম্বোর প্রেমাদাসায়, চাহারেরটি নাগপুরের বিদর্ভে, এলিসেরটি ঢাকার শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আর জানাতেরটি সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে।
পাঁচ হ্যাটট্রিকে বাংলাদেশের যে ১৫ ব্যাটসম্যান আউট হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে তিনজন খেলোয়াড় দুটি হ্যাটট্রিকের অংশ ছিলেন।
এর মধ্যে ব্রেট লি ও মালিঙ্গার শিকারের মধ্যে ছিলেন মাশরাফি, মালিঙ্গা ও জানাতের শিকার মিরাজ আর চাহার ও এলিসের শিকারে মোস্তাফিজুর রহমান।
আরেকটি মজার বিষয় হচ্ছে, হ্যাটট্রিকের শিকার হলেই যে বাংলাদেশের বড় ক্ষতি হয়েছে, তা নয়। কারণ, ৫ বার হ্যাটট্রিকের শিকার হলেও এর মধ্যে আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া (২০২১) ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। হেরেছে ২০০৭ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া ও ২০১৯ সালে ভারতের কাছে।