পরশু রাত ১-২০ মিনিট। নিজের ফেসবুক পেজের প্রোফাইল ছবিটা বদলানোর সময় মুনিম শাহরিয়ার লিখলেন, ‘কারও সহমর্মিতা চাই না, তবে আমি আবার উড়ব। আজ অথবা কাল, অথবা কালকের পরদিন।
সেটিও না হলে তার পরের দিন, শুধু আমি ও আমার আল্লাহ জানেন, আমি কোথায় ছিলাম। কেউ জানুক বা না জানুক, ব্যাপার না। আমি শুধু আশা করি, সবাই একদিন দেখবে—আমি পারি। ইনশা আল্লাহ, অবশ্যই ফিরে আসব আমি, সেটিও দ্রুতই।’
আগের দিন ব্যক্তিগত ইনস্টাগ্রাম থেকে সস্ত্রীক বিমানবন্দরে ছবি পোস্ট করেছেন নাজমুল হোসেনও। ঘুরতে যাচ্ছেন, সেই ছবি দিয়ে লিখেছেন, ‘পারিবারিক সময়।’ এশিয়া কাপের বাংলাদেশ দলে সুযোগ হয়নি এ দুই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের। বাদ পড়াটাকে যে দুজন দুইভাবে নিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্টেই তা পরিষ্কার। একজন ফিরে আসতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আরেকজন পরিবারের সান্নিধ্যে ভুলতে চাইছেন হতাশা। হয়তো নতুন আত্মবিশ্বাসও খুঁজে নিতে চাইবেন এ সময়।
জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া মানেই সবকিছু থেকে হারিয়ে যাওয়া নয়। ফেরার সুযোগ সব সময়ই থাকে। তবে আগামী অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এ দুজনের সুযোগ সঙ্কুচিতই। দেশের একমাত্র নিয়মিত ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগ বিপিএল শুরু হবে বিশ্বকাপের পর। এর আগে আগামী মাসে জাতীয় লিগ টি-টোয়েন্টি হওয়ার কথা। তবে নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ শুরু অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে, এরপরই বিশ্বকাপ। অর্থাৎ তার আগে নাজমুল ও মুনিম নিজেদের প্রমাণের জন্য যথেষ্ট সুযোগ পাচ্ছেন না। আপাতত দুজনেরই ঠাঁই হতে পারে বাংলা টাইগার্সে। লিটন দাস, ইয়াসির আলী, নুরুল হাসানরা সুস্থ হয়ে উঠলে তো কাজটা আরও কঠিন হয়ে যাবে।
বিশ্বকাপে নাজমুল-মুনিমের দলে থাকা নিয়ে তেমন আশা দেখেন না বিকেএসপির ক্রিকেট পরামর্শক ও কোচ নাজমুল আবেদীনও। কাল প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘সেপ্টেম্বরে কোনো ঘরোয়া টুর্নামেন্ট যদি হয়ও, সেটির জন্য অক্টোবরের বিশ্বকাপের দল নির্বাচনের অপেক্ষা করার সুযোগ নেই। ফলে বড় কিছু না ঘটলে বিশ্বকাপে এ দুজনের ফিরে আসার আশা করার সুযোগ খুবই কম।’
যথেষ্ট সুযোগ পাওয়া নাজমুলকে বাদ দেওয়া ছাড়া নির্বাচকদের কোনো উপায় ছিল না মনে না করলেও মুনিমকে আরেকটু সুযোগ দেওয়া যেত বলে মনে করেন নাজমুল আবেদীন। মুনিম নিজের সহজাত খেলা থেকে সরে আসার কারণেই বিপত্তি ঘটেছে বলেও মনে হচ্ছে তাঁর, ‘মুনিমকে দেখে মনে হয়নি, ও যেভাবে খেলে অভ্যস্ত, সেভাবে খেলার চেষ্টা করেছে। নিজের খেলার মধ্যে একটু পরিবর্তন আনতে চেয়েছে, হয়তো কোচের নির্দেশে বা যেকোনো কারণেই হোক না কেন। তার মধ্যে আক্রমণাত্মক মানসিকতা দেখিনি।’
নিজেদের ফিরে পাওয়ার চেষ্টা যেমন নাজমুল–মুনিমকে করতে হবে, তেমনি নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকেও তাঁদের প্রতি দৃষ্টি রাখাটা জরুরি মনে করেন নাজমুল আবেদীন, ‘এ বিশ্বকাপই শেষ কথা নয়। শান্ত (নাজমুল), মুনিম, শামীম (হোসেন)—এদের বয়স কম। আমাদের উচিত হবে এদের ঠিকঠাক প্ল্যাটফর্ম দেওয়া। এরা যে গুরুত্বপূর্ণ, সেটি জানি।
ফলে প্ল্যাটফর্মটা দিতে হবে, যাতে ওরা ওদের খেলাটা ওই জায়গায় নিয়ে যেতে পারে। ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের ভেতর থাকা দরকার। নির্বাচকদের দিক থেকে যোগাযোগ থাকা দরকার। এতে খেলোয়াড়েরা বুঝবে তাদের দিকে নজর আছে, এটা ওদের অনুপ্রাণিত করবে।’
ফিরে আসার লড়াইয়ে নাজমুল-মুনিমদের সবার আগে দরকার সে প্রেরণাটাই।