সালমা-রুমানাকে নিয়ে বিসিবির অন্য চিন্তা

২০২৪ নারী টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাংলাদেশ দলে জায়গা হয়নি সালমা খাতুন (বাঁয়ে) ও রুমানা আহমেদেরআইসিসি

চেন্নাইয়ে আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত প্রথম টেস্ট। স্বাভাবিকভাবেই দেশের ক্রিকেটের দৃষ্টিটা এখন সে দিকে। তবে আজ বিসিবি যে রকম অভিনব উপায়ে আসন্ন নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করল, তাতে অন্তত দিনের আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়াল এটাই।

দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক ভিডিও বার্তায় ১৫ সদস্যের দল ঘোষণা করেছে বিসিবি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা সেই ভিডিওতে জানিয়েছেন কারা আছেন এবারের নারী বিশ্বকাপের দলে।

সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশের ক্রিকেটের সমর্থক-অনুসারীদের সম্মান জানাতেই বিসিবির এমন দল ঘোষণা। ২ মিনিট ৪১ সেকেন্ডের ভিডিওর শেষাংশে বাংলাদেশ ছেলেদের দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শুভকামনা জানিয়েছেন নিগার সুলতানার দলকে।

এর পরপরই মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে বিশ্বকাপের দল নিয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন বিসিবির নারী ক্রিকেটের প্রধান হাবিবুল বাশার ও নারী ক্রিকেটের প্রধান নির্বাচক সাজ্জাদ আহমেদ।

১৫ সদস্যের দলে নেই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার রুমানা আহমেদ। দলে চমক বলতে আন্তর্জাতিক অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা তাজ নেহার। ২৬ বছর বয়সী এই টপ অর্ডার ব্যাটার শ্রীলঙ্কা সফরে বাংলাদেশ ‘এ’ দলে ছিলেন। প্রধান নির্বাচক সাজ্জাদ আহমেদ জানিয়েছেন, তাজকে দলে নেওয়া হয়েছে মূলত সাবেক অধিনায়ক রুমানার জায়গায়, ‘রুমানা এশিয়া কাপে ভালো করেনি। তার ব্যাটিংটাও আপাতত টি-টোয়েন্টির সঙ্গে যাচ্ছে না। তার জায়গায় তাজ নেহারকে নেওয়া হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে বিসিবির নারী ক্রিকেটের প্রধান হাবিবুল বাশার (বাঁয়ে) ও নারী ক্রিকেটের প্রধান নির্বাচক সাজ্জাদ আহমেদ। আজ মিরপুরে
বিসিবি

রুমানার বাদ পড়ার প্রসঙ্গে এসেছে আরেক সিনিয়র ক্রিকেটার সালমা খাতুনের নামও। প্রায় এক বছর ধরেই তিনি জাতীয় দলে নেই। প্রধান নির্বাচক জানিয়েছেন, তাঁদের ভবিষ্যৎ চিন্তায়ও নেই নারী দলের সাবেক এই অধিনায়ক। বরং সালমা আর রুমানাকে নিয়ে বিসিবির অন্য চিন্তাই আছে বলে জানিয়েছেন তিনি, ‘সালমা, রুমানা দুজনের সঙ্গেই আমরা কথা বলেছি। তারা যদি দেশের হয়ে শেষ কোনো ম্যাচ খেলতে চায়, অবশ্যই আমরা চেষ্টা করব, তাদের মাঠ থেকে বিদায় দিতে। খেলা ছাড়ার পরও বোর্ডে তাদের অন্য ভূমিকায় রাখা যেতে পারে। তবে সিদ্ধান্তটা তো তাদেরই নিতে হবে।’

দলে সুযোগ পাওয়া ব্যাটার সোবহানা মুশতারীর সাম্প্রতিক ফর্ম যে ভালো নয়, সেটা স্বীকার করেছেন সাজ্জাদ আহমেদও। তবে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর শেষ পর্যন্ত তাঁকেই নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেছেন, ‘এটা ঠিক, যে রকম আশা করেছি, ও সেরকম খেলতে পারছে না। কিন্তু এই মুহূর্তে আমাদের হাতে আর কোনো বিকল্পও নেই। এশিয়া কাপে আমরা ইশমা তানজিমকে চেষ্টা করেছি। কিন্তু এশিয়া কাপ বা এর আগে জাতীয় লিগেও সে ভালো করেনি।’ সোবহানার ব্যাপারে প্রধান নির্বাচক বাড়তি যোগ করেছেন, ‘ও মূলত তিন নম্বরে খেলে। তবে প্রয়োজনে পেছনের দিকেও সে খেলতে পারে। তাকে চাইলে ফ্লোটার হিসেবেও কাজে লাগানো যায়।’

সালমা ও রুমানাকে মাঠ থেকে বিদায় দিতে চায় বিসিবি
আইসিসি

মেয়েদের এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটা হওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশে। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সেটি চলে যায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে, তবে আয়োজক থাকছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডই।

বাংলাদেশে খেলা হলে বাংলাদেশের মেয়েদের জন্য যে এর চেয়ে ভালো আর কিছুই হতে পারত না, সেটা মানেন উইমেন্স উইং প্রধান হাবিবুল বাশার। তবু বছরের এই সময়ে শারজার আবহাওয়া অতটা গরম নয় বলে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন তিনি। সঙ্গে আমিরাত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সমর্থনটাও নিগারের দলের প্রতি থাকবে বলে আশাবাদী তিনি।

এ বছর মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে ঢাকা ও সিলেটে অস্ট্রেলিয়া এবং ভারত নারী দলের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে দুটিতেই ধবলধোলাই হয়েছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। এরার জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া নারী দলের বিপক্ষে জিতলেও হারতে হয়েছে ভারত আর শ্রীলঙ্কার কাছে।

আরও পড়ুন

বিসিবির উইমেন্স উইংয়ের তাই মনে হয়েছে, বিশ্বকাপের আগে মেয়েদের যে কোনোভাবে জয়ের আবহে রাখতে হবে। তাদের হারের স্রোত থেকে বের করতে সে কারণেই শ্রীলঙ্কায় ‘এ’ দলের পরিচয়ে পাঠানো হয় মূলত জাতীয় দলের ক্রিকেটারদেরই, যাদের বেশির ভাগই আছেন বিশ্বকাপ দলে। এই দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে বিশ্বকাপের দলে রুমানা ছাড়াও নেই রুবাইয়া হায়দার, ইশমা তানজিম, সাবিকুন নাহার জেসমিন ও শরীফা খাতুন।

সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় টি–টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ নারী ‘এ’ দল
এসএলসি

শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলের বিপক্ষে ২ ম্যাচ বাকি থাকতেই টি–টোয়েন্টি সিরিজ জিতে যাওয়ায় প্রধান নির্বাচকের আশা, জয়ের এই অভিজ্ঞতা মেয়েদের কাজে লাগবে বিশ্বকাপেও।
সাজ্জাদ আহমেদ বলেছেন, ‘আমি আশাবাদী আমরা যদি আমাদের সামর্থ্যের শতভাগ দিয়ে খেলতে পারি, তাহলে অবশ্যই ভালো কিছু হবে। আর যদি সামর্থ্যের ১১০ ভাগ দিয়ে খেলতে পারি, তাহলে সেমিফাইনালে যাওয়ারও সম্ভাবনা আছে।’