যুদ্ধ বলেন আর জীবন বলেন, কোনোমতে সারভাইভ করার কোনো জায়গা নেই পৃথিবীতে

দল জিতেছে। কিন্তু রূপগঞ্জ টাইগার্সের সুপার লিগে জায়গা হয়নি। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে রূপগঞ্জের ড্রেসিংরুমে তাই মিশ্র অনুভূতি। ক্রিকেটাররা ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। ব্যতিক্রম শুধু মুমিনুল হক, তাঁর কোনো হেলদোল নেই। সবাই যখন মাঠ ছাড়ায় ব্যস্ত, তখন তিনি ড্রেসিংরুমের সোফায় হাত–পা ছড়িয়ে আছেন। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেও যেন বাড়ি ফেরার তাড়া নেই। টেস্টের অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো থেকে শুরু করে নিজের ব্যাটিং আর টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে মুমিনুলের সঙ্গে কথা হলো তখনই।

ডিফেন্সিভ থাকা যাবে না, মুমিনুলের সাফ কথাছবি: এএফপি
প্রশ্ন:

ব্যাটিং কেমন উপভোগ করছেন? গত ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে ৮৪ রানের ইনিংসটা দেখে মনে হয়েছে কিছুটা হলেও ছন্দে ফিরেছেন।

মুমিনুল হক: ম্যাচের সময় তেমন কিছু মনে হয়নি। তবে পরে অবশ্যই ভালো লাগে। ওই ইনিংসটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

অধিনায়ক হিসেবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট জয় মুমিনুলের সেরা মুহূর্ত
ছবি: এএফপি
প্রশ্ন:

মাঝে অনেক দিন রান পাচ্ছিলেন না। সে সময়ের কথা একটু বলুন।

মুমিনুল: আপনি তো জানেন, আমি ৫৫ টেস্ট খেলে ফেলেছি। এই পর্যায়ে এসে আসলে টেকনিক্যাল বিষয়টা অতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না। আমি টেস্ট খেলার সিস্টেমটা জানি। জানি, আমি কীভাবে রান করি। ওই সময় হয়তো মানসিকভাবে ভালো অবস্থায় ছিলাম না। আমি ক্যাপ্টেন ছিলাম। দল নিয়ে অনেক বেশি চিন্তাভাবনা করেছি। আমি যখন ক্যাপ্টেনসি নিই, তখন আমার অনেক বড় স্বপ্ন ছিল। যেটা আমি আপনাদেরও বলেছিলাম। আমি যখন স্বপ্ন বুনতে শুরু করলাম, তখনই মনে হয় ছোটখাটো একটা ধাক্কা খেলাম। ওটার কারণে আমার ফোকাসটা হয়তো সরে গেছে।

ক্যাপ্টেন্সি না করলে তো প্রেশার অবশ্যই কমে আসে। তখন আপনি আপনার নিজের খেলা নিয়ে বেশি ফোকাস করবেন। নিজেকে নিয়ে ভাববেন। কিন্তু স্বপ্নটা তো কোনো সময় শেষ হয় না।
মুমিনুল হক, নিজের খারাপ সময়ের বর্ণনা দিয়ে
প্রশ্ন:

ধাক্কা বলতে কী বোঝাচ্ছেন…

মুমিনুল: ধাক্কা মানে…আসলে আপনি যখন দল নিয়ে স্বপ্ন দেখবেন, তখন আপনার নিজেকেও পারফর্ম করতে হবে। আমার নিজের পারফরম্যান্স ভালো হচ্ছিল না।

কোচ সালাউদ্দিনের সঙ্গে। বাজে সময়ে তাঁর ‘স্যার’কে সব সময় পাশে পেয়েছেন মুমিনুল
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

সেটা তো বেশ লম্বা সময় ধরেই। ২০২২ সালের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে জেতা টেস্ট রান করেছিলেন। এরপর থেকেই তো আপনার ব্যাটে খরা...

মুমিনুল: টেস্টে আমার যে ধারাবাহিকতা ছিল, সেটা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। মাউন্ট মঙ্গানুইতে রান করেছি। ওটা কিন্তু টেস্ট ম্যাচ জেতানো রান। তারপর অনেকদিন পর এখানে (মিরপুরে ভারতের বিপক্ষে) ৮৫-রানের মতো (আসলে ৮৪) একটা ইনিংস খেলেছি। ওই সময় আমার যে মানসিক অবস্থা ছিল, সেটার কারণে ব্যাড প্যাচটা এসেছিল। তখন আমি সবচেয়ে বেশি কাছে পেয়েছি আমার ফ্যামিলি, ওয়াইফ আর স্যারকে (মোহাম্মদ সালাউদ্দিন)। ওই সময় পরিবার ছাড়া, আপনজন ছাড়া আর কেউ কাছে থাকে না। যে যার জায়গা থেকে ব্যস্ত থাকে। এখন দুনিয়াটা এমনই।

ওই সময় ফ্যামিলির বাইরে স্যারের সঙ্গে খুব ক্লোজ যোগাযোগ ছিল। তাঁর সাপোর্টটা অনেক বেশি ইম্পর্ট্যান্ট ছিল। যেটার জন্য সালাউদ্দিন স্যারকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। ওই সময় তিনি একটা পরিসংখ্যান বের করে আমাকে পাঠিয়েছিলেন। সেখানে আমার যতগুলো ১০০ আছে, সেগুলোর ব্রেক ডাউন ছিল। সেটা হলো, প্রত্যেকটা ১০০-তে আমার স্ট্রাইক রেট ছিল ৫০-৫৫ পর্যন্ত। আর ফিফটিগুলো এসেছে আরও দ্রুত। যেগুলোতে আমি রান করিনি, সেগুলোতে স্ট্রাইক রেট ৩০-৩৫।

প্রশ্ন:

মানে, আপনি একটু বেশি ডিফেন্সিভ ছিলেন?

মুমিনুল: মানে আমি যথেষ্ট অ্যাগ্রেসিভ না। আমি সর্বশেষ যে কয়টা ইনিংস খেলেছি, সবগুলোতে আমার স্ট্রাইক রেট ৩০–এর আশপাশে। তিনি এটাও বলেছিলেন, তুমি যতই রান করো না কেন, তুমি যদি ১০০-ও করো, কিন্তু স্ট্রাইক রেট যদি ৩০ হয়, তার মানে তুমি ফর্মে ফেরোনি।

মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের পর মুশফিকের সঙ্গে
ছবি: প্রথম আলো
প্রশ্ন:

কারণ আপনি আপনার ন্যাচারাল খেলাটা খেলেননি, তা–ই না?

মুমিনুল: হ্যাঁ, এই জিনিসটা আমার খুব কাজে দিয়েছে। আমি এরপর চিন্তা করলাম, আসলেই তো! আমার যে অ্যাগ্রেসিভনেসটা ছিল, সেটা তো নেই। ভারতের সঙ্গে হয়তো আমি ৮৪ করেছি, সেটায় কিন্তু স্ট্রাইক রেট ঠিক ছিল।

মুমিনুল হক
ছবি: এএফপি
প্রশ্ন:

আপনার ফিফটিটাও খুব দ্রুত এসেছিল...

মুমিনুল: হ্যাঁ, এটাই আমার ন্যাচারাল খেলা, যেটা আমি খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ওই যে বললাম না, অধিনায়কত্বের দায়িত্ব, দল নিয়ে চিন্তাভাবনা থেকে এই জিনিসটা হয়েছে। মাউন্ট মঙ্গানুইতে আমি রান করেছিলাম। কিন্তু সেখানেও আমি অনেক সময় নিয়েছি।

প্রশ্ন:

কিন্তু সেই ইনিংসে তো দল জিতেছে।

মুমিনুল: কিন্তু ওটা তো আমার ন্যাচারের বাইরে। আমি যদি ওভাবে ১০টি ইনিংস খেলি, তাহলে হয়তো ৩টায় সফল হব। আমি আমি যেভাবে খেলে বড় হয়েছি, সেভাবে খেললে আমার সাফল্যের হার বাড়বে। হয়তো ১০টার মধ্যে ৭টায় সফল হব। মাউন্ট মঙ্গানুইতে আমি যেটা খেলেছি, সেটা আমার ন্যাচারাল খেলা না।

অধিনায়কত্বের চাপটা একটু বেশিই বোধ করছিলেন মুমিনুল
ছবি: প্রথম আলো
প্রশ্ন:

এখন তো সব ফরম্যাটেই প্রায় সবাই মেরে খেলে।

মুমিনুল: মেরে খেলা মানে পজেটিভ ইনটেন্ট নিয়ে খেলা। পজেটিভ ইনটেন্ট মানে এই না যে, সব বল মারব।

প্রশ্ন:

যেহেতু ক্যাপ্টেনসি নেই, এখন কি একটু চাপ কম লাগছে?

মুমিনুল: ক্যাপ্টেনসি না করলে তো প্রেশার অবশ্যই কমে আসে। তখন আপনি আপনার নিজের খেলা নিয়ে বেশি ফোকাস করবেন। নিজেকে নিয়ে ভাববেন। কিন্তু স্বপ্নটা তো কোনো সময় শেষ হয় না। আমার যে স্বপ্ন ছিল…সেটা।

পুল শট নিয়ে কাজ করছেন মুমিনুল
ছবি: প্রথম আলো
প্রশ্ন:

টেস্ট দল দাঁড় করানোর স্বপ্ন ছিল, সেটা কতটা করতে পেরেছেন?

মুমিনুল: অলমোস্ট। পেস বোলিংয়ের ক্ষেত্রে আমরা অনেকটা এগিয়েছি।

প্রশ্ন:

আপনি বললেন টেকনিক নিয়ে খুব একটা চিন্তা করেন না। তাহলে এই নতুন স্টান্সের ব্যাখ্যাটা কী?

মুমিনুল: এই স্টান্সটা নতুন। আমি হয়তো এটা এখনই টেস্ট ক্রিকেটে ট্রাই করব না। যখন সাদা বলে খেলব, তখন করব। আমি প্র্যাকটিস করে দেখেছি, মনে হয়েছে টেস্টে করাটা ঠিক হবে না। এই স্টান্সে সাদা বলে আপনি সব দিকে খেলতে পারবেন।

এবার বিপিএলে দল পাননি
ছবি: শামসুল হক
প্রশ্ন:

একটু ব্যাখ্যা করবেন?

মুমিনুল: বলটা ভালো দেখা যায়। পাঁজরের দিকে বল এলে সহজে শট খেলা যায়।

প্রশ্ন:

এবারের বিপিএলে দল পাননি। তখনই কি সাদা বলের টেকনিক নিয়ে কাজ করা শুরু?

মুমিনুল: না। এর আগের বিপিএলে যখন খেলেছিলাম, তখন মনে হয়েছিল, সাদা বলে একরকম খেলতে হবে, লাল বলে আরেক রকম। আমার যত বয়স হবে, আমাকে তত বেশি এই ছোট ছোট জিনিসগুলো পরিবর্তন করতে হবে। বল নতুন থাকলে একরকম, পুরোনো হলে আরেক রকম। স্পিনে একরকম, পেসে আরেক রকম।

বাংলাদেশের বর্তমান টেস্ট অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের সঙ্গে
ছবি: প্রথম আলো
প্রশ্ন:

ব্যাটিংয়ের এক ধরন থেকে আরেক ধরনে যাওয়া নিশ্চয়ই কঠিন।

মুমিনুল: এটা করতে করতে মনের ভেতর গেঁথে যাবে। মাসল মেমোরি তৈরি হবে।

প্রশ্ন:

আপনাকে শাফল করতেও দেখা যাচ্ছে এখন। এটাও তো আগে ছিল না।

মুমিনুল: না। এটা প্রথম ১৫-২০ বলের জন্য। লাল বলে করার ক্ষেত্রে একটু ঝামেলা হতে পারে। কারণ সুইংটা বেশি থাকে। তখন নড়াচড়া বেশি করলে হেড পজিশন এলোমেলো হয়ে যেতে পারে।

প্রশ্ন:

বিপিএলে যে এবার দল পাননি, সাদা বলের ক্রিকেট নিয়ে এখন কীভাবে চিন্তা করেন?

মুমিনুল: আমি আসলে কীভাবে লাল বলে শট বাড়ানো যায়, সেই চিন্তা করি। আমি যদি লাল বলে শট বাড়াতে পারি, তাহলে সেটা তো সাদা বলেও কাজে লাগছে। আমার মনে হয় টেস্টের জন্য আরও দুই-একটা শট বাড়ানো উচিত।

প্রশ্ন:

পুল শট নিয়ে ভাবছেন নিশ্চয়ই…

মুমিনুল: হ্যাঁ। মানে যেটা লিটনরা মারে, ওদেরটা দেখবেন মারলেই ছয় হয়।

প্রশ্ন:

শাফল করা নিয়ে ওয়াসিম জাফরের সঙ্গে কাজ করেছেন শুনেছি।

মুমিনুল: হ্যাঁ। উনি তখন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সঙ্গে কাজ করছিলেন। স্যার ব্যস্ত ছিলেন বিপিএলের কারণে। তখন ওয়াসিম ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করেছি। আমি তখন মেন্টালি ভালো ছিলাম না। স্যারও ব্যস্ত। কাউকে পাচ্ছিলাম না। নাফীস (শাহরিয়ার নাফীস) ভাইয়ের কথা বলতে হয়। উনি ওই সময় আমার অনুশীলনের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। এখন যখন সাদা বলে খেলি, তখন শাফল করি।

আফগানিস্তান সিরিজের প্রস্তুতি শুরু করে দেবেন কয়দিন পরই
ছবি: প্রথম আলো
প্রশ্ন:

ব্যাটিংয়ের মেন্টাল সাইডটা নিয়ে যদি একটু বলতেন…টেকনিক নিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষা তো চলমান প্রক্রিয়া। এর মধ্যে মানসিকতার বিষয়টা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

মুমিনুল: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি মেন্টালি স্ট্রং হন, বাঁকাত্যাড়া হয়েও আপনি রান করবেন। অনেকেই আছেন এমন ওয়ার্ল্ড ক্রিকেটে। অনেকে ভালো স্টান্স নিয়েও রান পান না।

প্রশ্ন:

কোচিং স্টাফে পরিবর্তন এসেছে গত কয়েক মাসে। চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ফিরেছেন। আগেও তাঁর সঙ্গে কাজ করেছেন। এবার তাঁকে কেমন দেখছেন?

মুমিনুল: আগে যেমন ছিলেন, তার চেয়ে আরও ম্যাচিউরড মনে হয়েছে। সব দিক থেকেই আগের চেয়ে অনেক ভালো।

প্রশ্ন:

আগেরবার তো আপনার সঙ্গে ঝামেলা হয়েছিল…

মুমিনুল: আমার সঙ্গে কোনো ঝামেলা হয়নি। ঝামেলাটা আপনারা বানিয়েছেন (হাসি)।

চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে আগের চেয়ে অনেক পরিণত মনে হচ্ছে মুমিনুলের
ছবি: প্রথম আলো
প্রশ্ন:

জাতীয় দলের সবাইকে টেস্টেও দ্রুত রান করার বিষয়টি বলতে শুনছি। এটাকে আপনি কীভাবে দেখেন?

মুমিনুল: এটা নির্ভর করে কন্ডিশন ও প্রতিপক্ষের ওপর। কন্ডিশন যদি ভালো থাকে, আপনি ১০০ ওভারে ৪০০–ও করতে পারেন। এখন যদি খেলা ভারত বা অন্য কোন বড় দলের সঙ্গে হয়, তাহলে ভিন্ন অ্যাপ্রোচে খেলতে হবে। কন্ডিশন যদি ভালো থাকে, যেখানে আপনি এক দিনেই ৪০০ করতে পারবেন, তাহলে আপনি কেন করবেন না? উইকেট পড়ুক না, ৫টা উইকেট পড়ুক।

প্রশ্ন:

আপনি নিশ্চয়ই এই ধাঁচের ক্রিকেট উপভোগ করেন…

মুমিনুল: আমার এটা খুবই ভালো লাগে।

প্রশ্ন:

আপনার ব্যাটিংয়ের সঙ্গে যায় এই কারণে?

মুমিনুল: হ্যাঁ, এই কারণেই। বেশি ডিফেন্সিভ খেললে আমার জন্য কঠিন। আপনি যদি ৩০০ বল খেলে ১০০ করেন, তাহলে বুঝতে হবে উইকেট ভালো। কারণ আপনি ৩০০ বল খেলেছেন। ৩০০ বল খেললে আপনাকে কমপক্ষে ২০০ মারতে হবে। সুযোগ থাকলে আপনি এক দিনে ৪০০ করেন। পাঁচ দিনের খেলা চার দিনে শেষ করে দেন।

প্রশ্ন:

সামনে কি এটাই দেখব আমরা?

মুমিনুল: অবশ্যই। ক্রিকেট সেদিকেই যাচ্ছে। টেস্টের ড্রিংকস ওভার, লাঞ্চ ওভারে সব ফিল্ডার ওপরে আনা হয়। কারণ ব্যাটসম্যানের মানসিকতাই থাকে উইকেট না হারিয়ে বিরতিতে যাওয়ার। সামনে দেখবেন, ফিল্ডার ওপরে এলে মাথার ওপর দিয়ে ছয় মেরে দিচ্ছে ব্যাটসম্যানরা। মিড অফ, মিড অন ওপরে, স্পিনার বল করছে, একটা সুযোগ নিই। দিন শেষে এটা রানের খেলা। হ্যাঁ, এভাবে খেলতে গেলে শুরুর দিকে হয়তো সফল হবেন না। কিন্তু আলটিমেটলি সফল হবেন। আপনি যত ডিফেন্সিভ থাকবেন, তত মরবেন। শুধু টিকে থাকার চিন্তা করলেই মরবেন। যুদ্ধ বলেন আর জীবন বলেন, কোনোমতে সারভাইভ করার কোনো জায়গা নেই পৃথিবীতে। আপনি যদি ডমিনেট করতে চান, প্রথমে বিপদে পড়লেও পরে সফল হবেন।

প্রশ্ন:

টেস্টের দর্শকের জন্যও তো এটা ভালো…

মুমিনুল: হ্যাঁ, অবশ্যই। দর্শকও মজা পাবে। ক্রিকেটাররাও উপভোগ করবে। এই এক ধরনের খেলা খেলতে কার ভালো লাগে।

প্রশ্ন:

প্লেয়ারদের সামর্থ্যের সঙ্গে নিশ্চয়ই এই খেলার ধরনটা মিলতে হবে। যেমন ইংল্যান্ড পারছে, কারণ তারা দল সাজায় সাদা বলের হিটারদের দিয়ে।

মুমিনুল: হ্যাঁ, এটা ক্রিকেটারদের থেকেই আসতে হবে। আর এটা পুরোপুরি মানসিকতার ব্যাপার। আপনি যদি একবার মনে গেঁথে নেন, এক দিন, দুই দিন না হলেও তিন দিনের দিন ঠিক পারবেন।

আমার সঙ্গে কোনো ঝামেলা হয়নি, ঝামেলাটা আপনারা বানিয়েছেন
মুমিনুল হক
প্রশ্ন:

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও কি একই ধাঁচে খেলতে চাইবেন?

মুমিনুল: আমার ইচ্ছা আছে। আগামী এনসিএলে আমাদের চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে এটা শুরু করব। যদি উইকেট ভালো হয়, খেলা হবে ফাস্ট স্কোরিং।

প্রশ্ন:

কন্ডিশন চ্যালেঞ্জিং হলে?

মুমিনুল: তখন কঠিন। কন্ডিশন ভালো হলে আপনি মারতে পারবেন।

দল জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন মুমিনুল হক
ছবি: টুইটার
প্রশ্ন:

ধরুন বাংলাদেশে তো নতুন বলে অন্তত প্রথম ২০ ওভারে ব্যাটিং কঠিন। এরপর কিন্তু কুকাবুরা বা এসজি বলে কিছুই থাকে না।

মুমিনুল: হ্যাঁ, এটাই বুঝাতে চাচ্ছি। এখন যদি আপনার ওপেনার ২০ ওভার খেলে ফেলে, তার জন্য কিন্তু মেরে খেলা সহজ। ধরুন তামিম ভাই ২০ ওভার খেলে ফেলেছেন, উনি কিন্তু সমানে অ্যাটাক করবেন। উনি তো নতুন বলেই অ্যাটাক করেন। পরে আরও বেশি করবেন। পরে যে আসবে, তার জন্য বলটা কিন্তু পুরোনো। সে মেরে খেলতে পারবে। এটা কিন্তু বুঝতে হবে, সবটাই কন্ডিশনের ওপর নির্ভর করবে। আর শুধু মেরে খেলাই কিন্তু পজেটিভ ইনটেন্ট না। আপনি ভালো বলটাকে পা নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছেন, সেটাও কিন্তু পজেটিভ ইনটেন্ট। তার মানে কী, আপনার পা ঠিক চলছে।

প্রশ্ন:

টেস্ট সংস্কৃতির কথা শুনেছি আপনার অধিনায়কত্বের সময়। কী মনে হয়, আমরা এখন কোথায় আছি?

মুমিনুল: আস্তে আস্তে হবে। এখন হয়তো বিষয়টা কঠিন। একটা সময় আসবে সেটা কঠিন মনে হবে না। সময়ের সঙ্গে উন্নতি আসছে। সামনেও আসবে।

ভালো টেস্ট সংস্কৃতির ব্যাপারে আশাবাদী মুমিনুল হক
ছবি: এএফপি
প্রশ্ন:

জুনে তো আফগানিস্তান সিরিজ, এটা নিয়ে কাজ শুরু করবেন কবে থেকে?

মুমিনুল: আমার তো প্রিমিয়ার লিগ শেষ। কদিন পরই শুরু করব। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দল আসবে। আমি হয়তো সেখানে দুটি চার দিনের ম্যাচ পাব। সেগুলো নিশ্চয়ই সাহায্য করবে। আমি লম্বা সময় মাঠে থাকব। এটা কাজে দেবে।