বিপিএল: প্রথম ২০০ রানের পর রংপুরের বড় জয়
অবশেষে ২০০ রানের ইনিংস দেখতে পেল বিপিএল। আজ চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে আগে ব্যাট করে ৩ উইকেটে ২১১ রান করে রংপুর রাইডার্স। দক্ষিণ আফ্রিকার রিজা হেনড্রিকস ও নিউজিল্যান্ডের জিমি নিশাম এবারের বিপিএলের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই অর্ধশত করেছেন। রান পেয়েছেন রনি তালুকদার, সাকিব আল হাসান ও নুরুল হাসানও।
দুই শর বেশি রান তাড়া করতে নেমে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের শুরুটা ছিল বেশ ধীর। সৈকত আলীর ৬৩ রানের সৌজন্যে শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেটে ১৫৮ রানে থেমেছে তারা। ৫৩ রানের বড় জয়ে ১২ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে রংপুর রাইডার্স।
বড় রান তাড়া করতে যেমন শুরু দরকার, তা পায়নি চট্টগ্রাম। দুই শর বেশি রান টপকাতে হলে অস্ট্রেলীয় হার্ড হিটার জশ ব্রাউনের বিশেষ কিছু করতেই হতো। সাকিব অবশ্য তা হতে দেননি। একটি বিশাল ছক্কায় ৯ বলে ১০ রান করেই সাকিবের বলে বোল্ড। আরেক অভিজ্ঞ স্পিনার ইমরান তাহিরের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন টম ব্রুস। ওদিকে উদ্বোধনে নামা সৈকত আলী খেলছিলেন মন্থর গতিতে।
একটা পর্যায়ে তিনি ২৮ বলে ১৬ রানে অপরাজিত ছিলেন। সব মিলিয়ে চট্টগ্রামের পাওয়ার প্লে রান ছিল মাত্র ৩২, ১০ ওভার শেষে ২ উইকেটে ৪৯। মূলত তখনই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে চট্টগ্রাম। ওপেনিংয়ে নামা সৈকত টিকে ছিলেন ইনিংসের ১৯তম ওভার পর্যন্ত। ৪৫ বলে ১টি চার ও ৬টি ছক্কায় ৬৩ রান করে রানআউট হয়েছেন এই ডানহাতি। শেষের দিকে অধিনায়ক শুভাগত হোম ১৩ বলে ৩১ রানে অপরাজিত ছিলেন। চট্টগ্রামের রান তাতে দেড় শ ছাড়ায়।
রংপুরের ব্যাটিংয়ের ছবিটা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। আজ দলটির টপ অর্ডারে বাবর আজম ছিলেন না। মিডল অর্ডারে নেই আজমতউল্লাহ ওমরজাই ও মোহাম্মদ নবীরাও। এই তিন বিদেশি বিপিএল ছাড়ার পর রংপুরের ব্যাটিংটা কেমন হবে, তা নিয়ে একটা শঙ্কা ছিল। কিন্তু সে শঙ্কা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন সাকিব-নুরুলরা। তাদের শক্তি বাড়িয়েছেন প্রথমবারের মতো বিপিএল খেলতে নামা রিজা হেনড্রিকস, জিমি নিশাম। দক্ষিণ আফ্রিকার এসএ টি-টোয়েন্টি খেলে আসা এই দুই বিদেশি প্রথম ম্যাচেই দেখিয়েছেন কত দ্রুত ভিন্ন কন্ডিশনে মানিয়ে নেওয়া যায়।
শুরুটা করেন দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনার হেনড্রিকস ও রনি তালুকদার। দুজন মিলে পাওয়ার প্লেতে যোগ করেন ৫২ রান। রনি ১৭ বলে ২৪ রান করে আউট হন ইনিংসের সপ্তম ওভারে। উইকেট পতনের পর দলগুলোর রানের গতি কিছুটা হলেও কমে আসে। আজ তা হতে দেননি সাকিব। তিনে নেমে তিনি ব্যাট চালিয়েছেন শুরু থেকেই। ১৬ বলে ২৭ রান করে সালাউদ্দিন শাকিলের করা ১৩তম ওভারে আউট হন তিনি। ৩টি চার ও ১টি ছক্কা ছিল সাকিবের ১৬৮ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসে।
একই ওভারে আউট হন হেনড্রিকসও। ততক্ষণে বিপিএলের প্রথম ম্যাচেই অর্ধশত করে ফেলেছেন এই প্রোটিয়া। ৪১ বল খেলে ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৫৮ রান করেন তিনি। ১৪১ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসটি রংপুরের ফিনিশারদের জন্য মঞ্চ গড়ে দেয়। বাকি কাজটা করেন নুরুল হাসান ও নিশাম। চতুর্থ উইকেট জুটিতে দুজন মাত্র ৪৬ বলে যোগ করেছেন ৮৯ রান।
নুরুল ৩১ রান করেছেন ২১ বলে। ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৪৭ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসটিকেও মন্থর মনে হয়েছে নিশামের কারণে। তাঁর ৫১ রান এসেছে আরও দ্রুতগতিতে। মাত্র ২৬ বল খেলেছেন এই কিউই অলরাউন্ডার। ৫টি চার ও ৩টি ছক্কার সৌজন্যে ১৯৬ স্ট্রাইক রেটে খেলেছেন এই বাঁহাতি। তাতে মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে ২১১ রানের পাহাড় গড়ে রংপুর।
ডেথ ওভারে রংপুরের এই বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে চট্টগ্রামের অদ্ভুত কৌশলেরও দায় আছে। শুভাগত হোম আজ ৮ বোলার ব্যবহার করেছেন। মাঝের ওভারে বল করতে এসে ২ ওভারে মাত্র ১৫ রান দিয়ে ২ উইকেট নেওয়া পেসার সালাউদ্দিনকে তিনি ডেথ ওভারে বোলিং করাননি। আল আমিন ও বিলাল খানকে দিয়ে বল করিয়েছেন শেষের ৪ ওভার, নুরুল-নিশাম জুটি সেই ৪ ওভারে ৬৫ রান নিয়েছেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রংপুর রাইডার্স: ২০ ওভারে ২১১/৩ (রনি ২৪, হেনড্রিকস ৫৮, সাকিব ২৭, নুরুল ৩১*, নিশাম ৫১*; বিলাল ৪-০-৫১-০, আল-আমিন ৪-০-৪০-০, শহীদুল ৪-০-৪২-০, সালাউদ্দিন ২-০-১৫-২, নিহাদ ৩-০-২৭-১, সৈকত ১-০-১৫-০, শুভাগত ১-০-১০-০, ক্যাম্ফার ১-০-৬-০)।
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ২০ ওভারে ১৫৮/৬ (ব্রাউন ১০, সৈকত ৬৩, ব্রুস ১৪, শাহাদাত ৯, ক্যাম্ফার ২৪, শুভাগত ৩১*, শহীদুল ১, নিহাদ ২*; আশিকুর ২-০-২২-০, মেহেদী হাসান ৩-০-৩৩-০, সাকিব ৪-০-২৪-২, হাসান ৩-০-১৮-০, নিশাম ৪-০-৩২-২, তাহির ৪-০-২৮-১)।
ফল: রংপুর রাইডার্স ৫৩ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: জিমি নিশাম।