ধর্মশালার আউটফিল্ড নিয়ে কেন এত আলোচনা
প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ দল, প্রথম ম্যাচের হার থেকে ঘুরে দাঁড়ানো কিংবা একাদশের ধরন নয়—আজ ধর্মশালায় ইংল্যান্ড অধিনায়ক জস বাটলারের সংবাদ সম্মেলনে সবচেয়ে বেশি আলোচিত প্রসঙ্গ ছিল মাঠের আউটফিল্ড। একই প্রসঙ্গ উঠেছে বাংলাদেশের স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথের সংবাদ সম্মেলনেও।
শুধু হেরাথ বা বাটলারের সংবাদ সম্মেলনে নয়, ধর্মশালার হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামের (এইচপিসিএ) আউটফিল্ড নিয়ে আলোচনা চলছে গত তিন-চার দিন ধরেই। বিশেষভাবে শনিবারের বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচ থেকে। সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ থেকে শুরু করে জোনাথন ট্রট আর জনি বেয়ারস্টো হয়ে বাটলার, হেরাথ—সবারই মুখেই উচ্চারিত হয়েছে ধর্মশালার আউটফিল্ডের কথা। এরই মধ্যে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচের আউটফিল্ডকে ‘গড়পড়তা’ (অ্যাভারেজ) বলে অভিহিত করেছেন ম্যাচ অফিশিয়ালরা। আর দুই দিন এই মাঠে অনুশীলনের পর বাটলারের মনে হয়েছে ‘পুওর’ (বাজে)। বিশ্বকাপ মাঠে আলোচিত চরিত্র হয়ে ওঠা ধর্মশালার আউটফিল্ডে আসলে কী হয়েছে, আর সামনেই বা কী হতে পারে?
পাঁচ ম্যাচের ভেন্যু
বছরখানেক আগে এইচপিসিএ স্টেডিয়ামের ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নত করতে মাঠে সংস্কার করা হয়। দ্রুত পানি সরানোর জন্য বাড়ানো হয় বালুর পরিমাণ, যেখানে ফিল্ডারদের মুভমেন্টের স্বাভাবিক করতে লাগানো হয় ঘাস। তবে ঘাসের ঘনত্ব পর্যাপ্ত পর্যায়ে না থাকায় এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভারত-অস্ট্রেলিয়া বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির তৃতীয় টেস্ট এখান থেকে শেষ মুহূর্তে সরিয়ে নেওয়া হয়। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই তখন ওই ‘অঞ্চলের প্রতিকূল শীতকালীন কন্ডিশন’কে খেলা না চালানোর কারণ হিসেবে জানায়।
এর পর এই মাঠে আর কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ না হলেও বিশ্বকাপের পাঁচটি ম্যাচের ভেন্যু করা হয় এটিকে। যার প্রথমটি ছিল শনিবারের বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচ।
তাসকিনের অস্বস্তি, মুজিবের চোটের ঝুঁকি
ম্যাচে প্রথম বল হাতে নেন বাংলাদেশের তাসকিন আহমেদ। প্রথম ওভারেই বল নিয়ে দৌড়াতে গিয়ে অস্বস্তিতে পড়েন তিনি। টিভি স্ক্রিনেই দেখা যায়, তাসকিনের রানআপের সঙ্গে বালু উঠছে। সচরাচর প্রথম দিকের ওভারগুলো জোরের সঙ্গে করলেও তাসকিনের ওই ওভারে বলের গতি ছিল তুলনামূলক কম। খুব সম্ভবত ওই রানআপের অস্বস্তির কারণেই। তবে ম্যাচে আসল সমস্যার দেখা মেলে ফিল্ডিংয়ে। বিশেষ করে আউটফিল্ডে। বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সময় আফগান ফিল্ডাররা বাউন্ডারি বাঁচাতে মরিয়া চেষ্টা করতে গেলে চোটের ঝুঁকিতে পড়েন তারা।
আজমতউল্লাহ ওমরজাই এবং মুজিব উর রেহমানের পা, হাঁটু দেবে যায় মাটিতে। যা নিয়ে ম্যাচশেষে উষ্মা প্রকাশ করেন আফগানিস্তান কোচ জোনাথন ট্রট। মুজিব ভাগ্যগুণে গুরুতর চোট থেকে বেঁচে গেছে জানিয়ে ট্রট বলেন, ফিল্ডাররা দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলেন ডাইভ দেবেন কিনা। পরে জানা যায়, আউটফিল্ডের পরিস্থিতি নিয়ে ট্রট তাঁর নিজ দেশ ইংল্যান্ডকে সতর্ক করে দেন।
সে দিন ম্যাচশেষে পুরস্কার বিতরণীতে বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব এবং আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে ম্যাচসেরা মিরাজকে আউটফিল্ড নিয়ে জিজ্ঞেস করা হয়। সাকিব ‘জিততে হলে এ ধরনের কন্ডিশনে আমাদের মানিয়ে নিতে হবে’ বলে মন্তব্য করেন। মিরাজের কথায়ও ছিল একই সুর, ‘আউটফিল্ড কিছুটা ভারী ছিল। বল ঠিকঠাকমতো চলছিল না। তবে সব পরিস্থিতিতেই আপনাকে পারফর্ম করতে হবে।’
আইসিসির পরিদর্শন
বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচের পরদিন ধর্মশালায় পুরো মাঠ ঘুরে দেখেন আইসিসির স্বাধীন পিচ পরামর্শক অ্যান্ডি অ্যাটকিনসন ও বিশ্বকাপের হেড অব ইভেন্ট ক্রিস টেটলি। সরেজমিন পরিদর্শন শেষে বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ম্যাচের রেফারি জাভাগাল শ্রীনাথের সঙ্গে আলোচনার পর ম্যাচ চলতে সমস্যা নেই বলে মত দেন তাঁরা। এ ছাড়া শনিবার বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচের শেষে এবং রোববার বিকেলে বোলিং রানআপে পানি ছিটানো হয়। রোববারই ইংল্যান্ডের উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান জনি বেয়ারস্টো ধর্মশালার আউটফিল্ড নিয়ে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানান।
ফিল্ডিংয়ে কুশলী হওয়ার প্রয়োজনও তুলে ধরেন বেয়ারস্টো, ‘দেখা গেল দুজন হাঁটুর চোটে বা এ রকম কিছু নিয়ে মাঠের বাইরে চলে গেল। ডাইভিং দিতে গেলে কাঁধেও আঘাত পেতে পারে। মাটিতে কনুই আটকে যেতে পারে। কেউ একজন ছুটে যাওয়া বল থামাতে গেলে তাঁকে টেনে ধরা খুব কঠিন। বলের জন্য ছুটে যাওয়া একজন ফিল্ডারের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া।’ একইদিন বিবিসির খবরে বলা হয়, বাংলাদেশের বিপক্ষে বেন স্টোকসকে না খেলানোর সিদ্ধান্ত হলে তাঁর পেছনে অন্যতম কারণ বাজে আউটফিল্ড।
বাটলারের চোখে ‘বাজে’
আজ ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনেও আউটফিল্ড নিয়ে উদ্বেগ জানান ইংল্যান্ড অধিনায়ক বাটলার। ধর্মশালার আউটফিল্ডকে ডাইভ দেওয়ার জন্য আদর্শ নয় বলে মনে হয়েছে তাঁর, ‘আমার মতে, এটা বাজে। এ জন্য আমরা কথা বলেছি। মাঠে ডাইভ দিতে সতর্ক থাকতে হবে, ফিল্ডিংয়ে বাড়তি নজর দিতে হবে। দলগত লড়াইয়ে আমরা সব সময়ই চাইব ডাইভ দিয়ে এক রান বাঁচাতে। কিন্তু এখানকার আউটফিল্ড ডাইভ দেওয়ার জন্য আদর্শ নয় মোটেও।’
বাংলাদেশের স্পিন বোলিং কোচ হেরাথ মোটাদাগে এমন কিছু না বললেও তাঁর দীর্ঘ ক্যারিয়ারের কোনো টুর্নামেন্ট বা সিরিজের শুরুর দিকে এমন আউটফিল্ড দেখেননি বলে জানিয়েছেন।
তবে বাটলার, হেরাথ দুজনই বলেছেন, আইসিসি খেলার জন্য ছাড়পত্র দেওয়ায় এই মাঠে তাদের মানিয়ে নিতে হবে।
খেলা বন্ধ কি সম্ভব?
আম্পায়াররা মাঠের কন্ডিশন ‘বিপজ্জনক অথবা অযৌক্তিক’ মনে করলে ম্যাচ রেফারির সঙ্গে আলোচনা করে ম্যাচ সাসপেন্ড বা পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে দুই দলের মধ্যে পয়েন্ট ভাগাভাগি হয়ে যাবে। বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ম্যাচে আম্পায়ারিং করবেন আহসান রাজা ও পল উইলসন। ম্যাচ রেফারির দায়িত্বে জাভাগাল শ্রীনাথ।