আইপিএলে কিশোর–কোটিপতি বৈভবের বয়স ১৩, ১৪ নাকি ১৫

বৈভব সূর্যবংশীইনস্টাগ্রাম

আইপিএল নিলামের আগেই তাকে নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছিল। ১৩ বছর বয়সে একটি ছেলে রঞ্জিতে খেলছে, এক বছরে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে ৪৯টি সেঞ্চুরি করে এসেছে, আবার জায়গাও করে নিয়েছে আইপিএল নিলামের চূড়ান্ত তালিকায়! আলোচনা না হওয়াটাই বরং অস্বাভাবিক। কিন্তু নিলামের পর সেই আলোচনার মধ্যে কিছুটা বিতর্কের রেণুও উড়ছে। কাল আইপিএল নিলামের দ্বিতীয় দিনে বৈভব সূর্যবংশীকে ১ কোটি ১০ লাখ রুপিতে কিনেছে রাজস্থান রয়্যালস। অর্থাৎ শুধু আইপিএলের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়ই নয়, ১৩ বছর বয়সেই কোটিপতি বনে গেছেন এ কিশোর ক্রিকেটার। এরপরই তাঁর বয়স নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।

আরও পড়ুন

নিলামের আগেই ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল, বৈভবের বয়স ১৩ বছর। এমনকি রাজস্থান রয়্যালসের ওয়েবসাইটেও তাঁকে নিয়ে করা প্রতিবেদনে জানানো হয়, বৈভবের বয়স ১৩ বছর। কিন্তু ভারতের সংবাদমাধ্যম ‘নিউজ ১৮’ জানিয়েছে, আইপিএলের ওয়েবসাইটে অফিশিয়াল তথ্য অনুযায়ী, গতকাল নিলামের সময় বৈভবের বয়স ছিল ১৪ বছর। বিতর্ক আছে আরও। বিহারের বিএনএন নিউজ বেনিপাত্তিকে গত বছর এপ্রিলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বৈভব নিজেই দাবি করেছিলেন, সে বছরের সেপ্টেম্বরে তাঁর বয়স হবে ১৪ বছর। অর্থাৎ বৈভবের দাবি অনুযায়ীই এখন তাঁর বয়স হওয়ার কথা ১৫ বছর।

এই বিভ্রান্তির একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছে নিউজ ১৮। তাদের দাবি, বৈভবের ১৫তম জন্মদিনের আগেই ২০২৫ আইপিএল নিলামের জন্য তাঁর বিষয়ে তথ্যপঞ্জি সংগ্রহ করা হয়। বিএনএন নিউজ বেনিপাত্তিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বৈভব ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সেপ্টেম্বরে তাঁর জন্মদিন। তবে এসব বিতর্ক কিন্তু বৈভবের কাছ থেকে আইপিএলের সর্বকনিষ্ঠ হওয়ার রেকর্ডটি কাড়তে পারছে না। আগের রেকর্ডটি ছিল প্রয়াস রায় বর্মণের। ২০১৯ আইপিএল নিলামে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু কেনার সময় প্রয়াসের বয়স ছিল ১৬ বছর।

বৈভবের বয়স নিয়ে বিতর্ক নিরসনে এগিয়ে এসেছেন তাঁর বাবা সঞ্জীব সূর্যবংশী। বিভ্রান্তি নিরসনে তিনি প্রয়োজনে আবারও বৈভবের বয়স পরীক্ষা করাতে চান। ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআইকে সঞ্জীব বলেছেন, ‘সাড়ে ৮ বছর বয়সে সে বিসিসিআইয়ে হাড়ের পরীক্ষা (বোন টেস্ট) দিয়েছে। সে এরই মধ্যে ভারতের অনূর্ধ্ব–১৯ দলে খেলেছে। আমরা কাউকে ভয় পাই না। সে আবারও বয়সের পরীক্ষা দিতে পারে।’

আরও পড়ুন

বিহার থেকে উঠে আসা বৈভবের বয়স যেটাই হোক, তাঁর সামর্থ্য নিয়ে সম্ভবত কোনো প্রশ্ন চলে না। তাঁর বাবার দেওয়া একটি তথ্যে বিষয়টি আন্দাজ করে নিতে পারেন। নিলামের আগে বৈভবকে ট্রায়ালে ডেকেছিল রাজস্থান রয়্যালস। বাকিটা শুনুন সঞ্জীবের মুখেই, ‘নাগপুরে রাজস্থান রয়্যালস তাকে ট্রায়ালে ডেকেছিল। বিক্রম রাঠোর স্যার (রাজস্থানের ব্যাটিং কোচ) তাকে ম্যাচের মতো একটি পরিস্থিতি তৈরি করে দেন, যেখানে ১ ওভারে ১৭ রান করতে হবে। সে তিনটি ছক্কা মেরেছিল। ট্রায়ালে সে ৮টি ছক্কা ও ৪টি চার মেরেছে।’

কুঁড়িতেই প্রতিভার এমন সুবাস ছড়ানো বৈভবের নিলামে ভিত্তি মূল্য ছিল ৩০ লাখ রুপি। তাঁকে কিনতে দিল্লি ক্যাপিটালসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দাম বাড়িয়ে শেষ পর্যন্ত রাজস্থানই হেসেছে শেষ হাসি। ভারতে এমন প্রতিভা কম নেই। কিন্তু তাঁর মধ্যে এমন কী দেখেছে রাজস্থান, সেই কথা জানিয়েছেন ফ্র্যাঞ্চাইজি দলটির প্রধান রাহুল দ্রাবিড়। ভারতকে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতানো সাবেক এই কোচ তাঁর দেশের উঠতি প্রতিভাদের নিয়েও একসময় কাজ করেছেন। ভারতের অনূর্ধ্ব–১৯ দলের প্রধান কোচ হিসেবে ২০১৮ সালে বিশ্বকাপ জিতেছেন দ্রাবিড়। ভারতের এই কিংবদন্তি জানিয়েছেন, নাগপুরে সেই ট্রায়ালের পর থেকেই বৈভবের ওপর নজর রেখেছিল রাজস্থান।

আইপিএলের ওয়েবসাইটে বৈভবকে নিয়ে দ্রাবিড় বলেছেন, ‘বৈভব আমাদের ট্রায়ালে এসেছিল এবং আমরা তাকে দেখে সন্তুষ্ট হয়েছি। আমার মনে হয়, তার দক্ষতা সত্যিই খুব ভালো। আমরা ভেবেছি তার বেড়ে ওঠার জন্য (রাজস্থানের) পরিবেশটা খুব ভালো হবে।’