নতুন অধিনায়ক, নতুন টেকনিক্যাল পরামর্শক—আবার নতুন শুরুর গান। সর্বশেষ বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ শেষে পেরিয়ে গেছে জিম্বাবুয়ে সফরও। বাংলাদেশ পরিবর্তনের পথে এগোচ্ছে মূলত এশিয়া কাপের আগেই। এশিয়া কাপ শেষে নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ, এরপরই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, এখন কি সবকিছু ঢেলে সাজানোর উপযুক্ত সময়? সাকিব বলছেন, কখনো না কখনো শুরু করতেই হবে।
আইসিসির নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরার পর প্রথমে টেস্ট, এরপর টি-টোয়েন্টির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সাকিবকে। সেটিও অবশ্য বেটউইনার-বিতর্ক পেরিয়ে। প্রথম কবে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, এমন প্রশ্নের জবাবে সাকিব শুধু সংবাদ সম্মেলনে বললেন, ‘আন–অফিশিয়াল প্রস্তাব কবে দেওয়া হয়েছে বলাটা মুশকিল। অফিশিয়ালি বেশ অনেক দিন আগেই। তবে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না। এ আলোচনা করলে আমাদের মূল আলোচনা থেকে দূরে সরে যাওয়া হবে। এ অবস্থায় সেটা খুব একটা আদর্শ নয়।’
সাকিব এমন সময়ে দায়িত্ব নিয়েছেন, যখন টি-টোয়েন্টি দলের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। বিশ্বকাপের পর থেকে বাংলাদেশ জিততে পারেনি কোনো সিরিজই। এ অবস্থায় অধিনায়কত্বের ব্যাপারে কেন আগ্রহী হলেন, সে ব্যাপারে সরাসরি কিছু বলেননি তিনি, ‘কঠিন প্রশ্ন…আমি জানি না কতটুকু…তবে এখন আমি অনেক অনুপ্রাণিত। আমি চেষ্টা করব, আমার যে অভিজ্ঞতা আছে, সেটা দিয়ে যতটুকু দলের ভালো করানোর চেষ্টা করা যায়।’
তাঁকে অধিনায়ক করার পেছনে বোর্ডের ভাবনা কী, সেটি নিয়ে অবশ্য একটু মজাই করলেন সময়ের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার, ‘এমন হতে পারে পাপন ভাই (নাজমুল হাসান) আমাকে চাপে রাখেন। এটা (অধিনায়কত্ব) থাকলে একটা চাপে রাখার সুযোগ থাকে। আমার কাছে মনে হয়, যেহেতু জায়গাগুলো (অধিনায়কত্ব) চ্যালেঞ্জিং এবং সেই জায়গাগুলোতে আমি বোর্ডের কাছে সেরা অপশন। হয়তো এ কারণে আমাকে নির্বাচন করা হয়েছে।’
বোর্ডের সেরা অপশন হলেও এসেই সবকিছু বদলে দিতে পারবেন না, সেটি আগেও বলেছেন সাকিব। আপাতত হাতে যা আছে, সেসবের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে চান তিনি, ‘আমি এসেই সবকিছু বদলে দেব, আমার মনে হয় না, এটা একটা ঠিক চিন্তা। একটা সংস্থা যখন একজনকে দায়িত্ব দেয়, তাঁর নির্দিষ্ট কিছু কাজ থাকে। সেই কাজগুলো করার চেষ্টা থাকবে। এটা না যে পরিবর্তন করতে হবে। এখানে যা আছে, আমার মনে হয় না পরিবর্তন করতে হবে। এগুলোকেই কীভাবে ভালোভাবে ব্যবহার করে ভালো “রিটার্ন অব ইনভেস্টমেন্ট” পেতে পারি, সেটাই আমার চিন্তা।’
অবশ্য নতুন শুরুর আগে ব্যর্থতা মেনে নিতে হবে, সেটিও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি, ‘ব্যর্থতা স্বীকার করে…অস্বীকার করার কিছু নেই। এটা অবশ্যই করতে হবে। আর এটা আমরা শেষবারের মতো শুনছি কি না, সেটাও একটা প্রশ্ন। এরপরও আবার শুনতে হতে পারে—আমরা নতুন করে আবার শুরু করতে যাচ্ছি। এই শুরুর শেষ আছে কি না, আমি জানি না। আমরা যদি চেষ্টা না করি কখনো জানতে পারব না। চেষ্টা করাটাও জরুরি।’
তবে পরিবর্তনের পথে এগিয়ে যেতে কী করতে হবে, সেসব ঠিক নির্দিষ্ট করে বলেননি বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবাইকে সবকিছু নতুন করে শেখাতে হবে, সেটিও মনে করেন না তিনি, ‘এই পরিকল্পনাগুলো সচরাচর কোচ ও অধিনায়ক মিলে করে থাকে। আমাদের এখানে একজন নতুন দায়িত্বে এসেছেন। তাঁর সঙ্গে বসে এগুলো করা হবে। এ রকম নির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা থাকবে বলে আমার মনে হয় না। যেটা হয়েছে, সবাই অনেক ক্রিকেট খেলেছে এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেট যারা খেলে, তাদের নিজেদের পরিকল্পনা থাকে, কীভাবে দলকে জেতানো যায়। সবাই যার যার জায়গা থেকে সেভাবেই চেষ্টা করবে বলে মনে করি। এ জন্য আলাদা করে বলে দেওয়ার কিছু নেই। আমরা ফোর-ফাইভের স্টুডেন্ট না যে আমাদের শিখিয়ে শিখিয়ে দিতে হবে। ওই জায়গায় আমরা আসলে নেই।’
সাকিবের সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই বিসিবি সভাপতি নিশ্চিত করেছেন, এশিয়া কাপে দলের সঙ্গে যাচ্ছেন না প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। আপাতত টেস্ট ও ওয়ানডেতেই তাঁকে দায়িত্ব দিয়েছে বিসিবি। এসব সিদ্ধান্ত বোর্ডের ব্যাপার, সাকিব এমন বললেও হুট করে এত পরিবর্তনের ব্যাপারে বললেন, ‘কখনো না কখনো কোনো কিছু শুরু করতেই হবে। আরও পরে যদি হতো, সেটা থেকে তো এখন হওয়া আরও ভালো।’