ম্যাচে পাকিস্তানকে একমুহূর্তের জন্যও খুঁজে পাওয়া যায়নি
এককথায় চোখজুড়ানো ব্যাটিং। ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ পৃথিবীর অন্যতম সেরা, কথাটা সত্যি হলেও গত বেশ কিছু ম্যাচে সেটির প্রতিফলন কিন্তু সেভাবে দেখা যাচ্ছিল না। দল হয়তো সামগ্রিক পারফরম্যান্সের কারণে বেশির ভাগ ম্যাচ জিতেছে; কিন্তু আত্মবিশ্বাসে ভরপুর একটি দলকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি। কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের মনে হয়তো হতাশাও কাজ করেছে। তবে এ ম্যাচের পারফরম্যান্স, বিশেষ করে ব্যাটিং ছিল একেবারে ছকে আঁকা। ভারত যেমন আশা করেছিল, হয়তো তার চেয়েও ভালো। ঠিক এমন ব্যাটিং পারফরম্যান্সেরই প্রয়োজন ছিল নিজেদের আত্মবিশ্বাসকে সেই কাঙ্ক্ষিত উচ্চতায় নিয়ে যেতে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে এমন পারফরম্যান্সের পর মনে হয় না ভারত আর পেছন ফিরে তাকাবে।
প্রথম ১০ ওভারে উইকেট না পেলে পাকিস্তানের পেস আক্রমণ পরে কতটা ধার ধরে রাখতে পারে, তা নিয়ে শঙ্কা ছিল। মনে রাখতে হবে, এ দল প্রায় প্রতি ম্যাচের শুরুতেই একাধিক উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করেছে। একদিকে কিছুটা অতি আত্মবিশ্বাস, অন্যদিকে সুস্পষ্ট একটি প্ল্যান ‘বি’ না থাকাই বোধহয় পাকিস্তানের কাল হলো। তবে এ টুর্নামেন্টে দলের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হারিস রউফ চোট পেয়ে বাইরে চলে না গেলে চিত্রটা কিছুটা ভিন্ন হতে পারত।
কপিবুক ক্রিকেট অনুসরণ করে যে চোখধাঁধানো আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলা যায়, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ছিল ভারতের ইনিংসটি। বিশেষ করে বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুলের জুটিটি ছিল অতুলনীয়। দুজন একে অন্যকে ইনিংসের বিভিন্ন সময়ে যেভাবে ‘কমপ্লিমেন্ট’ করল, তা ছিল দেখার মতো। দুজনের খেলাতেই ছিল যত্নের ছাপ এবং আক্রমণাত্মক মানসিকতার দারুণ মিশ্রণ।
যশপ্রীত বুমরা এবং মোহাম্মদ সিরাজ পাকিস্তানের ইনিংসের শুরুতে যেভাবে বল সুইং করাচ্ছিল, তাতে বোঝা যাচ্ছিল, উইকেট পড়া সময়ের ব্যাপার। বিশেষ করে বুমরার বলের গতি, দুদিকেই নিয়ন্ত্রিত সুইং করানোর সামর্থ্য তাকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছে। সত্যি বলতে, ব্যাটসম্যানকে অনেক সময় ভাগ্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। ভাগ্য অনুকূলে ছিল বলেই শুরুতে একটির বেশি উইকেট হারাতে হয়নি পাকিস্তানকে। আমি নিশ্চিত, বেশির ভাগ ব্যাটসম্যানই বুমরার বোলিংয়ের সময় ননস্ট্রাইক প্রান্তে থাকতে চাইবে।
এ ম্যাচে পাকিস্তানকে একমুহূর্তের জন্যও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে এর অর্থ কিন্তু এই নয় যে যদি এ দুই দল ফাইনাল খেলে, তাহলে এটিরই পুনরাবৃত্তি ঘটবে। ভুলে গেলে চলবে না, প্রথম ম্যাচ পরিত্যক্ত হলেও যতটুকু খেলা হয়েছে, তাতে পাকিস্তানই এগিয়ে ছিল। ক্রিকেট খেলাটিই এমন ‘গ্লোরিয়াস গেম অব আনসারটেইনিটি’।
তবে যাই বলি না কেন, এ মানের একটা টুর্নামেন্টে হঠাৎ করে শুধু এ দুই দলের জন্য একটা রিজার্ভ ডে রাখা পুরো টুর্নামেন্টকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ম্যাচের পয়েন্ট ভাগাভাগি হলে সেটির সুফল কি তৃতীয় কোনো দল পেতে পারত না? ভবিষ্যতের জন্য এটি মোটেও ভালো উদাহরণ নয়। ভারতকে আবার আজই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আরেকটি ম্যাচে নামতে হবে।
ভারত-পাকিস্তানের এ ম্যাচের ফল বাংলাদেশের ফাইনালে যাওয়ার সম্ভাবনায় কী প্রভাব ফেলবে, সেটি একটা প্রশ্ন। সেখানে অনেক যদি-কিন্তু অপেক্ষা করছে। এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টটা একটা হতাশা হয়েই থাকছে। তবে আশা করি, ভারতের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে চাপমুক্ত থেকে নিজেদের সেরা খেলাটা খেলবে বাংলাদেশ।