২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

সিডনি টেস্ট: সাইমের ‘মাখন মাখানো আঙুল’–এর সুযোগ নিতে পারলেন না ওয়ার্নার

ওয়ার্নার আউট হয়ে ফেরার পথে সিডনির দর্শকেরা উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান দেখানএএফপি

প্রায় ১০০ মিনিট ব্যাট করে ৩৪ রানে আউট হয়ে ফিরেছেন ডেভিড ওয়ার্নার। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের (এসসিজি) দর্শকেরা তাঁদের নায়ককে উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান দেখাতে কুণ্ঠা করেননি। প্রায় ২০ হাজার দর্শক উঠে দাঁড়িয়ে যখন করতালি দিচ্ছিলেন, ওয়ার্নারের কেমন লেগেছে?

এই অনুভূতিগুলো সম্ভবত ভাষায় বোঝানো যায় না। সিডনিতে নিজের শেষ টেস্টে আরেকবার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাবেন ওয়ার্নার। তবে আগা সালমানের বলে ওয়ার্নার স্লিপে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়ার পর এসসিজির দর্শকদের যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না। একটি ‘জীবন’ পেয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার, সেটি কাজে লাগাতে না পারার ব্যর্থতায় পুড়তে পারেন ওয়ার্নার নিজেও।

‘হায় খোদা! বিশ্বাসই হচ্ছে না। ক্যাচের উচ্চতা (ধরার জন্য) একদম ঠিক ছিল। ১০ বারের মধ্যে এটা ৯ বারই ধরা উচিত।’
মাইক হাসি

ধারাভাষ্য দেওয়া অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ওয়ার্নার আউট হওয়ার সময় বলছিলেন, ‘দর্শকেরা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। চারপাশটা চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল। কিছুক্ষণের জন্য এসসিজি স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল। যেটা ঘটেছে, তা যেন কারও বিশ্বাস হচ্ছিল না!’ তার আগে ওয়ার্নারের ৩৪ রানের ইনিংসেও এমন কিছু ঘটেছে, যা বিশ্বাস করা কঠিন। গতকাল টেস্টের প্রথম দিনে শেষ সেশনে যেমন অস্ট্রেলিয়া যে এক ওভার ব্যাট করেছে, সেখানেও ভাগ্য সহায় ছিল ওয়ার্নারের। সাজিদ খানের করা ওভারের পঞ্চম বলে রক্ষণাত্মক খেললেও বল বাউন্স খেয়ে স্টাম্পের কয়েক মিলিমিটার ওপর দিয়ে যায়। অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, আজ তৃতীয় দিন সকালে খেলা শুরুর আগে ম্যাচ অফিশিয়াল স্টাম্পের উচ্চতা পরীক্ষা করেছেন!

তবে এর চেয়েও অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটেছে আজ। ওয়ার্নার যখন ২০ রানে ব্যাট করছিলেন। আমের জামালের বলে প্রথম স্লিপে তাঁর তুলে দেওয়া মোয়ার মতো ক্যাচ মিস করেন অভিষিক্ত সাইম আইয়ুব। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্য দেওয়া মাইক হাসি তখন বলেছেন, ‘হায় খোদা! বিশ্বাসই হচ্ছে না। ক্যাচের উচ্চতা (ধরার জন্য) একদম ঠিক ছিল। ১০ বারের মধ্যে এটা ৯ বারই ধরা উচিত।’

আরও পড়ুন

কিন্তু ওয়ার্নারের ক্ষেত্রে গোটা টেস্ট সিরিজে এখনো সেই ‘উচিত’ কাজটিই ঠিকমতো করতে পারেননি পাকিস্তানের ফিল্ডাররা। পার্থে প্রথম টেস্টে তাঁর ক্যাচ ছেড়েছেন খুররম শাহজাদ। মেলবোর্নে দ্বিতীয় টেস্টেও ওয়ার্নারের ক্যাচ ফেলেছে সফরকারীরা। আবদুল্লাহ শফিক তাঁর সহজ ক্যাচ ফেলেন। আর সিডনিতে ফেললেন সাইম। এর আগে অক্টোবর-নভেম্বরে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপেও উসামা মিরের সৌজন্যে তাঁর সহজ ক্যাচ ফেলেছে পাকিস্তান।

ফিল্ডারের ভুলে পাওয়া ‘জীবন’ কাজে লাগাতে পারেননি ওয়ার্নার
এএফপি

অবশ্য শুধু ওয়ার্নার কেন, তিন ম্যাচের এই টেস্ট সিরিজে পাকিস্তান তো অন্যদের ক্যাচও ফেলেছে। স্লিপে ক্যাচ নেওয়ায় এমনিতেই ঐতিহ্যগত দুর্বলতা আছে পাকিস্তানের। দেশটির কিংবদন্তি পেসার ওয়াসিম আকরাম একবার বলেছিলেন, ‘স্লিপে ফিল্ডাররা ঠিকঠাকমতো ক্যাচ নিলে’ তাঁর এবং ওয়াকার ইউনিসের উইকেটসংখ্যা আরও বেশি হতো। এবারের সফরে পাকিস্তানের পেসাররাও সে দুঃখে পুড়তে পারেন। ক্যাচ ছাড়লে ধারাভাষ্যকাররা যেমন রসিকতা করে বলেন ‘বাটার ফিঙ্গার’ (মাখন মাখানো আঙুল, যেখানে বল পিছলে যায়)—সেটাই তো দেখা যাচ্ছে!

আরও পড়ুন

প্রথম টেস্টে উসমান খাজার ক্যাচ নিতে পারেননি শফিক। মেলবোর্নে পরের টেস্টে সেই স্লিপেই ওয়ার্নারের ক্যাচ ফেলেন শফিক। ফেলেছেন মিচেল মার্শের ক্যাচও। আর সিডনিতে ফেললেন সাইম। মেলবোর্ন টেস্টের তৃতীয় দিনে সম্প্রচারক চ্যানেলে দেখানো একটি পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যায় সাম্প্রতিক বছরগুলোয় পেসারদের বলে স্লিপে ক্যাচ নেওয়ায় পাকিস্তানের দক্ষতা ঠিক কতটুকু—গত তিন বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাজে। এ সময়ের মধ্যে পেসারদের বলে স্লিপে ৭২.৪ শতাংশ ক্যাচ নিতে পেরেছে পাকিস্তান। শুধু শ্রীলঙ্কা এ সময়ে তাদের চেয়ে পিছিয়ে (৭২ শতাংশ)। বাংলাদেশের ক্যাচ নেওয়ার হার পাকিস্তানের চেয়ে বেশ ভালো (৮৫.৭ শতাংশ)। ৮৯ শতাংশ ক্যাচ নিয়ে এ সময়ে সবার শীর্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা।

সিডনি টেস্টে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দ্বিতীয় দিনে বৃষ্টি ও আলোকস্বল্পতার জন্য আগেভাগেই চা–বিরতি ঘোষণা করা হয়। তার আগে ২ উইকেটে ১১৬ রান তুলেছে অস্ট্রেলিয়া। নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৩১৩ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান