আইপিএলে কলকাতার একাদশে সাকিব–লিটনের সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু
গুজরাট টাইটানস ও চেন্নাই সুপার কিংসের ম্যাচ দিয়ে ৩১ মার্চ শুরু হবে আইপিএলের এবারের আসর। যেখানে সাকিব আল হাসান ও লিটন দাসের কলকাতা নাইট রাইডার্স প্রথম ম্যাচ খেলবে ১ এপ্রিল পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে। সাকিব ও লিটন কবে থেকে আইপিএল খেলতে পারবেন সেটা এখনো নিশ্চিত নয়।
তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে টুর্নামেন্টের প্রথম থেকে সাকিব-লিটনের আইপিএল খেলা যে হচ্ছে না, তা নিশ্চিত। তবে খেলতে পারবেন আইপিএলের মাঝামাঝি সময়ে, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের টেস্ট শেষে আর ইংল্যান্ডের মাটিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের আগ পর্যন্ত।
গত মৌসুমে আইপিএলে দল না পেলেও এবারের নিলামে সাকিবকে দলে ভিড়িয়েছে তাঁর পুরোনো দল কলকাতা। আর অন্যদিকে লিটন আইপিএলে সুযোগ পেলেন প্রথমবার। শিরোপা পুনরুদ্ধারের মিশনে এবারের আইপিএলে কেমন একাদশ খেলাতে পারে কলকাতা? একাদশে সাকিব-লিটনের জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনাই–বা কতটুকু?
আইপিএলে প্রতি দলে বিদেশি ক্রিকেটার খেলতে পারেন চারজন। কলকাতায় বিদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে আন্দ্রে রাসেল ও সুনীল নারাইনের একাদশে থাকা প্রায় নিশ্চিত। এর কারণ এক দশক ধরে ফ্র্যাঞ্চাইজিটির হয়ে তাঁদের পারফরম্যান্স ও এই সংস্করণে তাঁদের সামর্থ্য।
চোটজনিত কোনো সমস্যায় পড়লে হয়তো বিকল্প ক্রিকেটারদের দিকে চোখ দেবে কলকাতার টিম ম্যানেজমেন্ট। রাসেলের বিকল্প হিসেবে গত নিলামে ডেভিড ভিসাকে দলেও নিয়েছে তারা। আর নারাইনের বিকল্প হতে পারেন সাকিব। আবার দুজনেই থাকতে পারেন একাদশে। সে ক্ষেত্রে উইকেট থেকে বাড়তি সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকতে হবে স্পিনারদের।
বিদেশি পেসারদের মধ্যে কলকাতার দলে আছেন টিম সাউদি ও লকি ফার্গুসন। এই দুই ক্রিকেটারের মধ্যে যেকোনো একজনকেই একাদশে দেখার সম্ভাবনা বেশি। নতুন বলের দায়িত্বটা যদি উমেশ যাদব ভালোভাবে পালন করতে পারেন তাহলে ‘ডেথ ওভার বিশেষজ্ঞ’ ফার্গুসনকেই দলে দেখা যেতে পারে।
যদিও ফার্গুসনও ডেথ ওভারে কিছুটা খরুচে। ২০১৯ মৌসুমের পর থেকে খেলা ২৬ ম্যাচে তিনি ডেথ ওভারে রান খরচ করেছেন ৯.৮৬ গড়ে। এরপরও উইকেটশিকারি হওয়ায় তাঁর ওপরই ভরসা রাখতে পারে দলটি। তাই একাদশে দুই উইন্ডিজ তারকা আর এক কিউই পেসারের খেলা অনেকটাই নিশ্চিত। সে ক্ষেত্রে বাকি একটি জায়গার জন্য লড়াইয়ে সাকিবের চেয়ে লিটনই এগিয়ে আছেন।
কীভাবে?
কলকাতার এবারের স্কোয়াডে লিটন ও রহমানউল্লাহ গুরবাজ ছাড়া প্রতিষ্ঠিত কোনো ওপেনার নেই। এই দুই ব্যাটসম্যান ছাড়া ওপেন করতে পারেন ভেঙ্কটেশ আইয়ার, উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান নারায়ণ জাগাদিসান, অধিনায়ক নীতিশ রানা কিংবা সুনীল নারাইনও।
তবে যেহেতু চোটের কারণে দলের সেরা ব্যাটসম্যান শ্রেয়াস আইয়ার টুর্নামেন্টের প্রথম ভাগে খেলতে পারছেন না ,তাই ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক নীতিশের ওপেনিংয়ে না খেলে চার নম্বরে খেলার সম্ভাবনাই বেশি। সে ক্ষেত্রে ভেঙ্কটেশ আইয়ার খেলতে পারেন তিন নম্বরে। পরিস্থিতি অনুযায়ী তিন নম্বর ও চার নম্বর জায়গা অদলবদলও করতে পারেন এই দুজন।
বাঁহাতি ওপেনার আইয়ার আইপিএলে ওপেনার হিসেবে যেমন সফল হয়েছেন, তেমনি ব্যর্থও হয়েছেন। গত মৌসুমে ১২ ম্যাচ খেলে করেছিলেন মাত্র ১৮২ রান। আর চোট থেকে ফিরে সর্বশেষ সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে তিন নম্বর ও চার নম্বরেই ব্যাট করেছেন আইয়ার। ৪ ইনিংসে ১৬১ স্ট্রাইকরেটে ১৮৯ রানকে সফলই বলতে হবে।
সে ক্ষেত্রে ওপেনার হিসেবে একাদশে লিটনকে দেখা যেতেই পারে। তবে লড়াইটা হবে আফগান ওপেনার গুরবাজের সঙ্গে। লিটন যদি শুরু থেকেই দলের সঙ্গে যোগ না দিতে পারেন আর গুরবাজ যদি শুরু থেকেই দলের সঙ্গে থাকেন, সে ক্ষেত্রে গুরবাজের সঙ্গে লড়াইয়ে পিছিয়ে যেতে পারেন বাংলাদেশের এই তারকা ওপেনার। আর লিটন কিংবা গুরবাজের সঙ্গী হতে পারেন আরেক উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান জাগাদিসন। বরুণ চক্রবর্তীর জায়গায় এবার কলকাতা বাজি ধরতে পারে আরেক রহস্য স্পিনার সুয়াশ শর্মার ওপর।
তখন একাদশটা যেমন হতে পারে:
১. লিটন দাস/রহমানউল্লাহ গুরবাজ
২. জাগাদিসন
৩.নীতিশ রানা
৪. ভেঙ্কটেশ আইয়ার
৫. রিঙ্কু সিং/মানদ্বীপ সিং
৬. আন্দ্রে রাসেল
৭. সুনীল নারাইন
৮. শার্দুল ঠাকুর
৯.লকি ফার্গুসন
১০.উমেশ যাদব
১১.বরুণ চক্রবর্তী/সুয়াশ শর্মা
আবার অন্য কম্বিনেশনে লিটন বা গুরবাজের সঙ্গে ওপেন করতে দেখা যেতে পারে আইয়ারকে। তাহলে জাগাদিসনকে নামতে হবে মিডল অর্ডারে কিংবা একাদশেও জায়গা হারাতে পারেন চেন্নাইয়ের হয়ে ৭ ম্যাচ খেলা এই ব্যাটসম্যান।
আইয়ারকে ওপেনার হিসেবেই রেখে লিটন কিংবা গুরবাজের জায়গায় একাদশে ঢুকতে পারেন সাকিব। খেলতে পারেন ব্যাটিং অর্ডারের ৪ কিংবা ৫ নম্বরে। তাতে কলকাতার বোলিং অপশনও বেড়ে যাবে। তবে কলকাতা মিডল অর্ডারে সাকিবকে কতটা বিবেচনা করবে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কারণ, ব্যাট হাতে ৭১ ম্যাচের আইপিএল ক্যারিয়ারে সাকিবের গড় ২০ এরও কম।
কলকাতার মিডল অর্ডারে অভিজ্ঞতার বিচারে টিকে যেতে পারেন সাকিব। শ্রেয়াস আইয়ারের অবর্তমানে কলকাতার মিডল অর্ডারে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন এমন কোনো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান নেই। কিন্তু সব মিলিয়ে একাদশে একসঙ্গে সাকিব ও লিটনকে দেখতে পাওয়া বেশ কঠিনই।
আর অনেক কিছু নির্ভর করছে সাকিব ও লিটন কবে থেকে দলের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন আর কতটা সময় দলের সঙ্গে থাকতে পারেন। কারণ, পুরো মৌসুমে খেলতে পারলে হয়তো নতুন কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতের পরিকল্পনার বড় একটা অংশ হতেও পারতেন এই দুজন।