ছক্কায় ফিরল সোহাগ গাজীর স্মৃতি, ব্রুকের সেঞ্চুরি, চাপে নিউজিল্যান্ড
ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল ইংল্যান্ড। ব্যাটিংয়ের মেজাজটা কেমন হবে, তা টিম সাউদির করা প্রথম ওভারের শেষ বলেই ছক্কা মেরে বুঝিয়ে দেন ইংলিশ ওপেনার জ্যাক ক্রলি। আরামসে সামনে পা নিয়ে স্ট্রেট দিয়ে ছক্কা! ৫৫.৪ ওভারে ৫.১২ রান রেটে ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ২৮০ রানে অলআউট হওয়ার পথে বিনোদন দিলেও ব্যাটিংটা তাঁদের জন্য আরামদায়ক হয়নি।
৪৩ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর হ্যারি ব্রুকের প্রতি-আক্রমণসুলভ সেঞ্চুরি এবং সে পথে ওলি পোপের সঙ্গে তাঁর ১৭৪ রানের জুটিটি না হলে ইংল্যান্ড মহাবিপর্যয়েই পড়ত। তবে বিপর্যয় এড়াতে পারেনি পঞ্চম উইকেটে তাঁদের জুটি ভাঙার পরও। ইংল্যান্ডের শেষ ৬ উইকেট পড়েছে মাত্র ৬৩ রানে। তবে প্রথম দিনের খেলা শেষে স্বস্তি নিয়েই মাঠ ছেড়েছে বেন স্টোকসের দল। নিউজিল্যান্ড দিনের খেলা শেষ হওয়ার আগে স্কোরবোর্ডে ৮৬ রান তুলতেই হারিয়েছে ৫ উইকেট! ‘নাইটওয়াচম্যান’ হিসেবে নামা ও’রুর্কিকে (১৬ বলে ০) নিয়ে প্রথম দিন পার করেন টম ব্লান্ডেল (৭)। ১৯৪ রানে এগিয়ে ইংল্যান্ড।
প্রথম ওভারে ক্রলির সেই ছক্কায় ফিরে এসেছে বাংলাদেশের স্পিনার সোহাগ গাজীর স্মৃতি। ২০১২ সালের বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ মিরপুর টেস্টে প্রথম ওভারে সোহাগ গাজীকে দুটি ছক্কা মেরেছিলেন ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি ক্রিস গেইল। সে টেস্টে অভিষিক্ত সোহাগ প্রথম বলেই ছক্কা হজমের পর একই ফল ভোগ করেছিলেন চতুর্থ বলেও। টেস্ট ইতিহাসে সেটি ছিল কোনো ম্যাচের প্রথম বলে ছক্কার প্রথম নজির। প্রথম ওভারে ছক্কারও প্রথম ঘটনা।
ক্রলি আজ টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ম্যাচের প্রথম ওভারে ছক্কা মারলেন। তবে একটি জায়গায় ইংল্যান্ড ওপেনার প্রথম। টেস্ট ইতিহাসে কোনো পেসারের বিপক্ষে ম্যাচের প্রথম ওভারেই ছক্কা মারলেন ক্রলি। সে হিসাবে সাউদিও একটি জায়গায় প্রথম। টেস্ট ইতিহাসে প্রথম পেসার হিসেবে ম্যাচের প্রথম ওভারেই ছক্কা হজম করলেন চলতি মাসেই টেস্ট ছাড়তে যাওয়া সাউদি। বেচারা!
দিনের শুরুতে ১২.৫ ওভার পর্যন্ত সময়টা নিউজিল্যান্ডেরই ছিল। এই ৭৭ বলের মধ্যে ইংল্যান্ড হারিয়েছে প্রথম চার ব্যাটসম্যান—ক্রলি, বেন ডাকেট, জো রুট ও জ্যাকব বেথেলকে। তারপর ধীরে ধীরে কিউইদের মুঠো আলগা করে বের হয়ে আসেন হ্যারি ব্রুক ও পোপ। বিশেষ করে ব্রুক। রান আউট হওয়ার আগে ৫ ছক্কা ও ১১ চারে ১১৫ বলে খেলেছেন ১২৩ রানে দুর্দান্ত প্রতি-আক্রমণসুলভ এক ইনিংস। আগের টেস্টে ১৭১ রানের ইনিংস খেলা ব্রুক এবার তিন অঙ্ক ছুঁয়েছেন ৯১ বলে। অন্য প্রান্তে তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে ৭৮ বলে ৬৬ রান করেন পোপ। ৩৯.১ ওভারে উইলিয়াম ও’রুর্কির বলে পোপ আউট হওয়ার পর ভেঙেছে তাঁদের জুটি।
অধিনায়ক স্টোকস অবশ্য বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি। ২ রানে ফিরেছেন। ৭ উইকেটে ২৫৯ রান নিয়ে চা বিরতিতে যাওয়া ইংল্যান্ড এই পথে ছোট্ট এক মড়কের সম্মুখীন হয়েছিল। ৫১.১ থেকে ৫৩.৪—এই ১০ বলের মধ্যে ১৬ রানে ইংল্যান্ড হারায় ব্রুক, গাস অ্যাটকিনসন ও ক্রিস ওকসকে। সব মিলিয়ে ইংল্যান্ড শেষ ৪ উইকেট হারিয়েছে ১৬ বলের মধ্যে। রান উঠেছে ২১। মাত্র দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা কিউই পেসার নাথান স্মিথ নেন ৪ উইকেট। ৩ উইকেট নেন আরেক পেসার ও’রুর্কি।
ইংল্যান্ডের ইনিংস শেষ হওয়ার পর মনে হয়েছিল দিনটা হয়তো চালকের আসনে থেকেই শেষ করবে নিউজিল্যান্ড। কিন্তু ১৫ উইকেট পতনের দিনে চমকের আরও বাকি ছিল। কিউই পেসারদের মতো চমক দেখিয়েছেন ইংল্যান্ডের পেসাররাও।
নিউজিল্যান্ডের ৫টি উইকেটই ভাগ করে নেন চার ইংলিশ পেসার, ওকস, অ্যাটকিনসন, স্টোকস ও ব্রাইডন কার্স। শেষজনের ভাগ্যে একটি বেশি পড়েছে—২টি। কিউই ইনিংসের এ পথ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩৭ রান করা কেইন উইলিয়ামসকে কার্স তুলে নিতে পারতেন আরও আগেই। ‘নো’ বল করে বসায় সেটি সম্ভব হয়নি।
ষষ্ঠ ওভারে ডেভন কনওয়েকে তুলে নিয়ে শুরুটা করেছিলেন অ্যাটকিনসন। দ্বিতীয় উইকেটে উইলিয়ামসন ও টম ল্যাথামের জুটি ৩৫ রান তোলার পর ভেঙেছেন স্টোকস। লাথামকে তুলে নেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক। রাচিন রবীন্দ্র ও ড্যারিল মিচেলও অল্প রানে ফেরায় আগামীকাল দ্বিতীয় দিনটা চাপ নিয়েই শুরু করতে হবে স্বাগতিকদের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস: ৫৪.৪ ওভারে ২৮০ (ব্রুক ১২৩, পোপ ৬৬, ওকস ১৮, ক্রলি ১৭, বেথেল ১৬; স্মিথ ৪/৮৬, ও’রুর্কি ৩/৪৯, হেনরি ২/৪৩)।
নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংস: ২৬ ওভারে ৮৬/৫ (উইলিয়ামনস ৩৭, ল্যাথাম ১৭, কনওয়ে ১১, ব্লান্ডেল ৭*, মিচেল ৬; কার্স ২/২৮, ওকস ১/১৮, অ্যাটকিনসন ১/১৮, স্টোকস ১/২১।)—প্রথম দিন শেষে।