১ হাজার ২০ দিন পর সেঞ্চুরি করে আনুশকাকে উৎসর্গ কোহলির
বিরাট কোহলি হাসি ধরে রাখতে পারছিলেন না। হয়তো হাসছিলেন আপনিও।
ফরিদ আহমেদকে মারা পুল শটটা ডিপ মিড উইকেট দিয়ে হলো ছয়। তাতেই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে প্রথম সেঞ্চুরি পেয়ে গেলেন কোহলি। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে এর আগে ৭০টি সেঞ্চুরি করেছেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক। তবে ৭১তম সেঞ্চুরিটি যে কত তৃষিত তাঁর! ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর সর্বশেষ তিন অঙ্কের দেখা পেয়েছিলেন। অবশেষে ফুরাল ১ হাজার ২০ দিনের অপেক্ষা!
এশিয়া কাপ দিয়েই ফর্মে ফিরছিলেন। তবে এর মধ্যেই বিদায় নিল ভারত, আফগানিস্তানের বিপক্ষে আজকের ম্যাচটি তাই নিয়ম রক্ষারই। নিয়মিত অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে বিশ্রাম দিল ভারত, লোকেশ রাহুলের সঙ্গে ইনিংস ওপেন করতে এলেন কোহলি। আইপিএলে এখন নিয়মিতই ইনিংস ওপেন করেন তিনি, তবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সর্বশেষ এ পজিশনে এসেছিলেন গত বছরের মার্চে। সেখানে ফিরেই সেঞ্চুরি–খরা কাটালেন তিনি।
৭১টি সেঞ্চুরি নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখন যৌথভাবে রিকি পন্টিংয়ের সঙ্গে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তিন অঙ্কের মালিক হলেন কোহলি। ১০০টি সেঞ্চুরি নিয়ে সবার ওপরে শচীন টেন্ডুলকার।
মাত্র ৩২ বলেই ফিফটি করেছেন, সেঞ্চুরি করতে আজ কোহলির লেগেছে ৫৩ বল। মানে পরের ৫০ রান করতে মাত্র ২১ বল খেলেছেন তিনি। ইনিংসে সব মিলিয়ে ১২টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ৬টি ছক্কা। আফগান স্পিনারদের ওপর বিশেষভাবে চড়াও হয়েছেন আজ, প্রিয় ফ্লিক শটে করেছেন ৪২ রান।
শতকের পরও কোহলি থামেননি। শেষ ওভারে ফজলহক ফারুকিকে মেরেছেন আরও দুটি ছক্কা, শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকেছেন ৬১ বলে ১২২ রানে। মানে ব্যাটিং করেছেন ২০০ স্ট্রাইক রেটে। কমপক্ষে ৫০ রান করেছেন, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এমন ইনিংসে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেট তাঁর, এর আগে ২০১৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২৯ বলে অপরাজিত ছিলেন ৭০ রানে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ভারতের হয়ে এটি সর্বোচ্চ রানের ইনিংস।
সেঞ্চুরির উদ্যাপনের অংশ হিসেবেই গলায় ঝোলানো লকেটে চুমু খেয়েছেন কোহলি। পরে সঞ্জয় মাঞ্জরেকারকে স্টার স্পোর্টসে বলেছেন, সেঞ্চুরিটা স্ত্রী আনুশকা শর্মা ও মেয়ে ভামিকার জন্য, ‘গত আড়াই বছর আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। এক মাসের মধ্যে ৩৪ পূর্ণ করব আমি। বুনো যে উদ্যাপন (সেঞ্চুরির পর), সেগুলো আসলে অতীত এখন। আসলে আমি অবাকই হয়েছি। এ সংস্করণে সেঞ্চুরি পাব, ভাবতেই পারিনি। আসলে অনেক কিছুর সমন্বয় এটি।’
‘দল আমাকে সহায়তা করেছে। আমি জানতাম, বাইরে অনেক কিছুই ঘটছে। লকেটে চুমু খেয়েছি; কারণ, আপনি আমাকে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখছেন শুধু একজনের জন্যই। সে আমাকে অনেক কিছুই অন্যভাবে দেখতে শিখিয়েছে। সে আনুশকা। আমার এই সেঞ্চুরি তার জন্য, আমাদের ছোট মেয়ে ভামিকার জন্যও। যখন আপনার পাশে বসে কেউ কথাবার্তাকে এভাবে নিতে পারবে, যেমন আনুশকা করেছে…আমি আসলে মরিয়া ছিলাম না। ছয় সপ্তাহে তরতাজা হয়ে এসেছি। বুঝেছিলাম, কতটা ক্লান্ত আমি। প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, এ বিরতির কারণেই আমার খেলাকে আবার উপভোগ করতে পারছি,’ বলেন কোহলি।
কোহলির এমন ফিরে আসা যে ক্রিকেট–বিশ্বও উপভোগ করছে, সেটি নিয়ে সংশয় নেই। সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পরই ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। পাকিস্তান পেসার হাসান আলী টুইট করেছেন, ‘দ্য গ্রেট ইজ ব্যাক।’
আসলেই তো। ফর্মে ফিরেছেন। কিন্তু সেঞ্চুরি ছাড়া কি কোহলির ফিরে আসা মানায়!