অনেক উত্তরের খোঁজে বাংলাদেশ
ফুটবল বিশ্বকাপের আগে দলগুলো বেশ কিছু প্রীতি ম্যাচ খেলে। সেই ম্যাচগুলোর আন্তর্জাতিক মর্যাদা থাকলেও মূল উদ্দেশ্য থাকে, বড় টুর্নামেন্টের আগে খেলোয়াড়দের প্রস্তুত করে নেওয়া, দলটাকে গোছানো। ক্রিকেটও গত কয়েক বছরে এ সংস্কৃতি চলে এসেছে। পার্থক্য হচ্ছে ক্রিকেটে খেলাগুলো হয় দ্বিপক্ষীয় সিরিজের ব্যানারে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অবশ্য এ রকম ম্যাচগুলোকেও ‘প্রীতি ম্যাচ’ বলতে একটু খটকাই লাগে। মূল ক্রিকেটারদের বিশ্রাম দিয়ে বিকল্পদের নিয়ে খেলানোর বাস্তবতার সঙ্গে তো বাংলাদেশ ক্রিকেট খুব একটা পরিচিত নয়। কিন্তু আদতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের এই তিনটি ওয়ানডে ‘প্রীতি ম্যাচ’ ছাড়া আর কী! নিউজিল্যান্ডের জন্যও আসলে তা-ই।
বিশ্বকাপের সপ্তাহ দুয়েক আগে এই সিরিজের প্রথম ওয়ানডেটি আজ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে, শুরু হবে বেলা দুইটায়। দুই দলই এই সিরিজে বিশ্বকাপের ভাবনায় থাকা অনেক ক্রিকেটারকে বিশ্রাম দিয়েছে। নিউজিল্যান্ড তো বিশ্বকাপ দলে থাকা মাত্র পাঁচজনকে নিয়ে এসেছে বাংলাদেশ সফরে। লকি ফার্গুসন, ট্রেন্ট বোল্ট, রাচিন রবীন্দ্র, ইশ সোধি ও উইল ইয়াং ছাড়া বাকিদের জন্য এবারের বাংলাদেশ সিরিজ অনেকটা শিক্ষাসফরের মতো। আগামী নভেম্বরেই দুটি টেস্ট খেলতে বাংলাদেশে ফিরবে কিউইরা। এই দলের অনেকেরই সেই টেস্ট সিরিজের দলে থাকার কথা।
বাংলাদেশ দলেও নেই অনেক নিয়মিত মুখ। বিসিবি এখনো বিশ্বকাপ দল ঘোষণা না করলেও নিউজিল্যান্ড সিরিজের দলে যাঁরা নেই, তাঁদের ভারতে যাওয়া প্রায় নিশ্চিত। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ, শরীফুল ইসলাম খেলছেন না এই সিরিজে। তবে যাঁরা এই সিরিজ দিয়ে খেলায় ফিরছেন, সেই নামগুলোও কি কম ভারী! তামিম ইকবালের কথাই ধরুন। গত জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিপক্ষীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচের পর লম্বা বিরতি কাটিয়ে এই সিরিজ দিয়ে খেলায় ফিরবেন। মাহমুদউল্লাহ সর্বশেষ গত মার্চে বাংলাদেশের হয়ে খেলেছেন, এই সিরিজ তাঁরও ফেরার মঞ্চ। ফিরেছেন সৌম্য সরকার, নুরুল হাসানও, আছেন অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা জাকির হাসান, খালেদ আহমেদ ও রিশাদ হোসেন।
মূল খেলোয়াড়দের বিশ্রাম দেওয়ায় মূলত এত পরিবর্তন। আরেকটা কারণ পরীক্ষা–নিরীক্ষা। বাংলাদেশ দল এখনো বিশ্বকাপ দলের বিকল্প ওপেনার খুঁজে পায়নি। লিটনের সঙ্গে যাঁকে মূল ওপেনার হিসেবে ধরে নেওয়া হচ্ছে, সেই তামিমই–বা চোট থেকে ফিরে কেমন করেন, সেটাও দেখতে হবে। কে হবেন বাংলাদেশ দলের ৭ নম্বর ব্যাটসম্যান, নির্বাচকদের মধ্যে আছে এই আলোচনাও। ইবাদত হোসেন না থাকায় বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পঞ্চম পেসারই–বা কে হবেন, এই উত্তর নিশ্চিতভাবে জানা নেই। নিউজিল্যান্ড সিরিজই এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার শেষ সুযোগ।
খেলাটা যেহেতু ঘরের মাঠে, এসবের পাশাপাশি নিউজিল্যান্ডকে সিরিজে হারানোর চাপ থাকবে। ২০১০ সালে দুই দলের ওয়ানডে সিরিজ বাংলাদেশ জিতেছে ৪-০ ব্যবধানে। ‘বাংলাওয়াশ’ শব্দটার প্রচলন তো সেই সিরিজ থেকেই! ২০১৩ সালেও নিউজিল্যান্ডকে ৩-০ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এরপর কিউইদের বিপক্ষে ঘরের মাঠে বাংলাদেশের ওয়ানডে খেলা হয়নি। তবে ২০২১ সালে ৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ বাংলাদেশ জিতেছে ৩-২–এ। নিজেদের আঙিনার দ্বিপক্ষীয় সিরিজে বাংলাদেশের এমন আধিপত্য জিম্বাবুয়ে ছাড়া আর কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে দেখা যায় না।
এবারও ফেবারিট হয়েই সিরিজ শুরু করবে বাংলাদেশ। কন্ডিশনও বাংলাদেশকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার কথা। খেলা হচ্ছে সেপ্টেম্বরে, কিছুদিন ধরে দিনে ঢাকায় একবার হলেও বৃষ্টি হচ্ছে। মাঠ প্রস্তুত করার খুব একটা সুযোগ পাননি কিউরেটর গামিনি ডি সিলভা। যে কারণে উইকেট স্যাঁতসেঁতে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে কন্ডিশনের কারণে সুইং ও সিম নিশ্চয়ই থাকবে। নিউজিল্যান্ডের পেসাররা সেটাই খুঁজবেন বেশি।
বাংলাদেশ দলের তিন পেসার মোস্তাফিজুর রহমান, খালেদ আহমেদ ও তানজিম হাসানের মধ্যে সুইংটা সহজাত তানজিমেরই। এই তরুণ ক্রিকেটারের দিকে আরও একটি কারণে চোখ থাকবে। ফেসবুকে বিতর্কিত পোস্ট দেওয়ায় তানজিমকে সম্প্রতি সমালোচিত হতে হয়েছে। বিসিবির কাছে এ নিয়ে ক্ষমাও চেয়েছেন। কিন্তু গত কয়েক দিনের বয়ে যাওয়া ঝড়ের পর তিনি মাঠে কেমন খেলেন, সেটাও দেখার অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।