অথচ এই গম্ভীরই একবার নিজের পুরস্কার দিয়ে দিয়েছিলেন কোহলিকে
আইপিএলে বিরাট কোহলি আর গৌতম গম্ভীরের বাগ্যুদ্ধ নিয়ে তোলপাড় চলছে ভারতীয় ক্রিকেটে। শুধু ভারতই নয়, ক্রিকেট–দুনিয়াতেই কমবেশি আলোচনা এ নিয়ে। সেই ২০১৩ সালে আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্স ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ম্যাচে কোহলির সঙ্গে লেগেছিল গৌতম গম্ভীরের। সেই জের যে এই এক দশকেও কাটেনি, তার প্রমাণ পাওয়া গেল গতকাল। কিন্তু এটাও সত্যি, ২০০৯ সালে এই গম্ভীরই এক ম্যাচে নিজের ম্যাচসেরার পুরস্কার স্নেহভরে তুলে দিয়েছিলেন কোহলির হাতে।
ভারত–শ্রীলঙ্কা ওয়ানডে সিরিজে চতুর্থ ম্যাচ ছিল সেদিন কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে। গম্ভীর ১৩৭ বলে ১৫০ রানের এক দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছিলেন। সেঞ্চুরি করেছিলেন কোহলিও—১১৪ বলে ১০৭। ম্যাচসেরা হয়েছিলেন গম্ভীর। কিন্তু গম্ভীর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানেই সেই পুরস্কার তুলে দিয়েছিলেন কোহলির হাতে। সেটি ছিল কোহলির প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। তরুণ কোহলিকে উৎসাহ দিতেই অমনটি করেছিলেন গম্ভীর। গতকাল দুজনের বাগ্যুদ্ধের পর ১৪ বছর আগের সেই ঘটনাটিই চলে এসেছে সামনে। অনেকেই বলছেন, কোহলি সেই দিনটি একেবারেই ভুলে গেছেন।
গতকাল আইপিএলে লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ম্যাচ উত্তপ্ত হয়েছে বারবারই। কোহলি পুরোটা সময়ই উত্তেজিত ছিলেন। আগ্রাসী আচরণ করেছেন, ম্যাচের মধ্যে মেজাজ হারিয়েছেন বারবারই। প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়েছেন। সব মিলিয়ে ম্যাচের পর কোহলি আর গম্ভীরের মধ্যে হাতাহাতির উপক্রম হয়।
মাঠ ও মাঠের বাইরে কোহলির আচরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠছেই। তাঁর অতি আগ্রাসী মনোভাব অনেক সময় প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়দের জন্য অপমানের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শুধু মাঠেই নয়, গম্ভীরের মতো ভারতীয় দলে তাঁর পূর্বসূরিদের সঙ্গে তিনি যে সরাসরি বিবাদে জড়িয়েছেন, সেটি বিরক্তি ও ক্ষোভের কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে। গম্ভীরের পর কোহলির সঙ্গে সাপে–নেউলে সম্পর্ক অনিল কুম্বলে আর সৌরভ গাঙ্গুলীর মতো গ্রেটদেরও। সৌরভ ভারতীয় ক্রিকেটে বোর্ডের সভাপতি থাকতে ওয়ানডে অধিনায়কত্ব নিয়ে সমস্যা তৈরি হয় দুজনের মধ্যে। সেটি প্রকাশ্য হয় এবারের আইপিএলেই। দিল্লি ক্যাপিটালস ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ম্যাচে সৌরভ কোহলিকে হাত মেলানোর সময় এড়িয়ে যান। সে সময় দেখা যায়, সৌরভকে কোহলি ইনস্টাগ্রাম থেকে ‘আনফলো’ করেছেন। সৌরভও পরে একই কাজ করেন। গম্ভীর মাঠেই কোহলিকে পাল্টা দিয়েছেন। সৌরভও কোহলিকে পছন্দ না করার মনোভাব বুঝিয়ে দিয়েছেন। তবে অনিল কুম্বলে কোহলির বাজে আচরণ নীরবেই মেনে নিয়েছিলেন। ২০১৬ সালে কুম্বলে ভারতের কোচ থাকতে পারেননি শুধু কোহলির কারণে—এমন খবরও তখন জানিয়েছিল ভারতের সংবাদমাধ্যম।
তবে কোহলির সঙ্গে গম্ভীরের ঝগড়া নিয়ে মুখ খুলেছেন অনিল কুম্বলে। জিও সিনেমা চ্যানেলে আইপিএলের ম্যাচ বিশ্লেষক হিসেবে কাজ করছেন কুম্বলে। এমন ঘটনার পর ভারতের সাবেক এই লেগ স্পিন কিংবদন্তি কূটনৈতিক ভাষায় হলেও কোহলির সমালোচনা করেছেন, ‘ক্রিকেট ম্যাচে ভেতরে–ভেতরে অনেক আবেগ ছড়ানো থাকতে পারে, কিন্তু সেই আবেগ প্রকাশ্য হবে কেন? কোনো সমস্যা হলে কথা বলা যেতে পারে, কিন্তু কোহলি গম্ভীরের সঙ্গে যা করেছে, সেটি মেনে নেওয়া যায় না।’
প্রতিপক্ষকে সম্মান না করাতেও বিরক্ত কুম্বলে, ‘যা–ই হোক না কেন, মাঠে প্রতিপক্ষকে সম্মান করতে হবে। খেলা শেষে প্রতিপক্ষের সঙ্গে হাত মেলাতে হবে। এই সম্মান জানানোটা শুধু প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের জন্যই নয়, খেলাটার প্রতিও। আমি জানি না, কোহলি–গম্ভীরের মধ্যে কী কথা হয়েছে। যেটিই হোক, সেটি ব্যক্তিগত পর্যায়ের আর এসব ব্যক্তিগত ব্যাপার–স্যাপার মাঠে আসা উচিত নয়।’