চ্যাপেলের কাছে ক্রিকেটীয় চেতনা ‘ফালতু ব্যাপার’

অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি ইয়ান চ্যাপেলএএফপি

‘স্পিরিট অব ক্রিকেট’—কথাটা বহুল চর্চিত, মাঝেমধ্যে বিতর্কিতও। বাংলায় অর্থ—ক্রিকেটীয় চেতনা। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে তর্ক কম হচ্ছে না। তবে অস্ট্রেলীয় কিংবদন্তি ও সাবেক অধিনায়ক ইয়ান চ্যাপেলের কাছে ক্রিকেটীয় চেতনা একটা ‘ফালতু’ ব্যাপার।

আরও পড়ুন

গত বছর ৬ নভেম্বর বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে ‘টাইমড আউট’ হয়েছিলেন শ্রীলঙ্কা অলরাউন্ডার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। তখন ক্রিকেটীয় চেতনার পক্ষে-বিপক্ষে দুই ভাগে বিভক্ত ছিল ক্রিকেট-বিশ্ব। বর্তমান থেকে সাবেক ক্রিকেটাররা এ ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছিলেন। কারও মতে, এটি নিয়মের মধ্যে। আবার কেউ বলেন, এমন আউট করাটা মোটেও উচিত নয়, বিশেষ করে ম্যাথুসের যখন হেলমেটে সমস্যা ছিল। একইভাবে কেউ ‘মানকাড’ আউট হলেও ক্রিকেটীয় চেতনা নিয়ে শোরগোল ওঠে। এবার চ্যাপেল এ নিয়ে কথা বলেছেন আরও সাম্প্রতিক দুটি ঘটনার পর।

অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড আউট হওয়ার পর ড্রেসিংরুমে ফিরছেন ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব–১৯ দলের হামজা শেখ
আইসিসি

গত শনিবার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ‘অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড’ আউট হন ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যান হামজা শেখ। শেফিল্ড শিল্ডেও ক্রিকেটীয় চেতনা নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। কয়েক দিন আগে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে নিউ সাউথ ওয়েলসের ক্রিস গ্রিনের বিপক্ষে ‘অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড’–এর অভিযোগ উঠলেও তাঁকে আউট দেওয়া হয়নি। তবে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার ফিল্ডাররা আবেদন করেছিলেন বলে তাঁরা নিজেদের ক্রিকেটীয় চেতনা একটু খাটো করলেন কি না, সে আলোচনাও উঠেছে! চ্যাপেল অবশ্য এতে কোনো সমস্যা দেখেন না।

আরও পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার চ্যানেল নাইনকে চ্যাপেল বলেছেন, ‘স্পিরিট অব ক্রিকেট (ক্রিকেটীয় চেতনা) নিয়ে লোকে যা বলে, সেসব আমি পাত্তা দিই না। আমার কাছে ক্রিকেটীয় চেতনা ফালতু একটা ব্যাপার। খেলার আইন নিয়ে কী সমস্যা? খেলার আইনের মধ্যে থাকলে অন্য সব আজেবাজে ব্যাপার পাত্তা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এই নামের বদলে অন্যকিছু ব্যবহার করা উচিত। কারণ, এ কথার কোনো অর্থ হয় না।’

অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহর উদাহরণ টেনে চ্যাপেল আরও বলেছেন, ‘স্টিভ ওয়াহ “স্পিরিট অব ক্রিকেট–এর পক্ষে কথা বলে, এর চেয়ে বড় ভণ্ডামি আর হয় না। কেউ যদি বলটা ধরে (অবৈধভাবে) ফেলে, তা নিয়ে এত হইচইয়ের কী আছে? ব্যাটসম্যান হিসেবে আপনি যদি বলটা হাত দিয়ে ধরার মতো যথেষ্ট বোকা হন, তাহলে এরপর যা ঘটবে, সেটাই আপনার প্রাপ্য।’

গ্রেগ চ্যাপেল এবং ইয়ান চ্যাপেল—দুই ভাই–ই অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন
আইসিসি ফেসবুক পেজ

অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৩০টি টেস্টে নেতৃত্ব দেওয়া চ্যাপেলকে ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা অধিনায়ক বিবেচনা করা হয়। ক্রিকেট পরিবারে বেড়ে ওঠা চ্যাপেল ছিলেন কুশলী ও বুদ্ধিদীপ্ত। তাঁর দাদা ভিক রিচার্ডসন ও ভাই গ্রেগ চ্যাপেলও অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক ছিলেন। ৮০ বছর বয়সী এই কিংবদন্তি জানিয়েছেন, অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ডের প্রথম ঘটনা তিনি দেখেছেন শৈশবে, ‘তখন সম্ভবত ১০ বছর বয়স। বাবার (মার্টিন চ্যাপেল) দলের হয়ে রান করছিলাম...সেটা সম্ভবত অ্যাডিলেডে সি গ্রেড ক্রিকেটে। ব্যাটসম্যান বলটা নিচে খেলার পর তা গড়িয়ে স্টাম্পের দিকে যাচ্ছিল। সে হাত দিয়ে বলটি থামায়। বাবা আবেদন করার পর তাকে আউট দেওয়া হয়।’

আরও পড়ুন

ম্যাচটা খেলে বাবার সঙ্গে বাড়িতে ফেরার পথে একটি শিক্ষাও পেয়েছিলেন চ্যাপেল। সেই শিক্ষা তিনি তাঁর ক্যারিয়ারে কখনো ভুলে যাননি, ‘গাড়িতে বাড়ি ফেরার পথে মার্টিন বলল, সিদ্ধান্তটি নিয়ে কী মনে হয়? বললাম, ব্যাটসম্যান আউট। ব্যাটিংয়ের সময় হাত দিয়ে বল ধরা যাবে না। মার্টিন এরপর যা বলেছিল, সেটা কখনো ভুলব না—আমি তোমাকে কখনো এভাবে আউট হতে দেখতে চাই না, আমিও কখনো হইনি।’
চ্যাপেল এই আউট থেকে মুক্তির যে পথটা দেখিয়েছেন, সেটা সবাই জানেন।

ভারতের কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কার
এএফপি

ব্যাটিংয়ের সময় হাত দিয়ে বল ধরা যাবে না। ধারাভাষ্যকার হিসেবেও কিংবদন্তি মর্যাদা পাওয়া চ্যাপেল এ নিয়ে ভারতের কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কারের সঙ্গে একটি মজার স্মৃতিও ভাগ করে নিয়েছেন, ‘সুনীল গাভাস্কার তখন অবসর নিয়েছে। তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, তুমি কি কখনো ব্যাটিংয়ের সময় হাত দিয়ে বল ধরেছ? সে বলেছিল, কখনোই না, শুধু মাঝেমধ্যে পাকিস্তানের বিপক্ষে ধরেছি। নন–স্ট্রাইকিং প্রান্তে থাকতে বল কাছে এলে হাত দিয়ে ধরেছি। তাদের দুজন খেলোয়াড় বলত—“এসো বৃদ্ধ লোক, বলটা ধরো”,  তারা দুজন হলেন জাভেদ মিঁয়াদাদ ও সরফরাজ (আহমেদ)। আমি জানতাম, বলটা ধরলেই তারা আউটের আবেদন করবে।’

আরও পড়ুন