‘সি বল, হিট বল’ তত্ত্বে সফল নাজমুল
কদিন আগে শেষ হওয়া বিপিএলে টুর্নামেন্ট–সেরার পুরস্কার জিতেছিলেন নাজমুল হোসেন। সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে তিনি ৫১৬ রান করেছেন, যা ছিল এবারের বিপিএলের সর্বোচ্চ। এর আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান (১৮০)। ধারাবাহিকভাবে রান করে আসার অভ্যাসটাই যেন আজ নাজমুলকে ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলতে সাহায্য করল।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে নাজমুলের ব্যাট থেকে এসেছে ৩০ বলে ৫১ রানের ইনিংস। নাজমুল বিস্ফোরক ইনিংসটি খেলেছেন ৮টি চারে। ১৭০ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসটি ছিল চোখ কপালে তোলার মতো। কারণ বিশ্বকাপ ও বিপিএলে নাজমুল খেলেছেন ‘অ্যাংকরের’ ভূমিকায়। যেখানে স্ট্রাইক রেটের চেয়ে ক্রিজে পড়ে থাকা ছিল তাঁর দায়িত্ব। আজ সে খোলস থেকে যেন বেরিয়ে এলেন নাজমুল।
ম্যাচ শেষে অবশ্য নাজমুল বললেন ব্যাটিং ছন্দের কথা, ‘ভালো একটা শুরু পেয়েছিলাম। শুধু ওই মোমেন্টামটা ধরে রাখার চেষ্টা করেছি। আর এমনিতে স্বাভাবিক পরিকল্পনাই ছিল। খুব বেশি বাড়তি কিছু করব, এমন চিন্তা ছিল না। আমি শুধু বল দেখেছি এবং ওভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছি।’
মার্ক উডের টানা ৪ বলে ৪টি চারও নাকি সেই ‘সি বল, হিট বল’ তত্ত্বের ফল, ‘বল দেখেছি, ওই অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছি। ও রকম কিছু ছিল না। গ্যাপটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। তাই হয়তো বাউন্ডারিগুলো মারতে পেরেছি।’
বিপিএলের প্রসঙ্গও এসেছে নাজমুলের সংবাদ সম্মেলনে, ‘আমি ধারাবাহিক রান করেছি। একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন ধারাবাহিক রান করব, তখন একটা আলাদা আত্মবিশ্বাস থাকেই। খেলা সম্পর্কেও অনেক ধারণা আসে। আমার কাছে মনে হয়েছে, আমি কীভাবে ইনিংসটা গড়ব বা শুরু করব, এই ব্যাপারে আমার ধারণা ভালো ছিল। ওইটাই শুধু প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছি।’
বিশ্বকাপে রান করার আত্মবিশ্বাসটাও কাজে লেগেছে নাজমুলের, ‘এ রকম বড় একটা টুর্নামেন্টে গিয়ে যখন রান করবেন, তা আত্মবিশ্বাস দেয়। শুধু চেষ্টা করি, আত্মবিশ্বাস নিয়ে ব্যাট করার। কিন্তু প্রত্যেক দিনই নতুন দিন, আগের কিছু মাথায় থাকে না। একটা ভালো লাগা কাজ করে। যখনই ব্যাটিংয়ে যাই নতুন করে শুরুর চেষ্টা করি।’
নাজমুল ছাড়াও বিপিএলের আমেজ ছিল টি-টোয়েন্টিতে অভিষিক্ত তৌহিদ হৃদয়ের ব্যাটিংয়ে। দেশের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা হৃদয়ের ১৭ বলে ২৪ রানের ছোট্ট ইনিংসটি সাহসী করে তুলেছে নাজমুলকেও।
সে কারণটা নাজমুলের মুখেই শুনুন, ‘প্রথম ম্যাচ হিসেবে ওর যে অ্যাপ্রোচ ছিল, যে ইন্টেন্ট নিয়ে ও ব্যাটিং করেছে, ওইটা দেখেই আমি আত্মবিশ্বাস পেয়েছি। এ রকম একটা বড় দলের বিপক্ষে ওকে দেখে কখনো নার্ভাস মনে হয়নি। আমাদের ওই আত্মবিশ্বাসটা ছিল, কারণ বিপিএলে আমাদের কিছু বড় বড় জুটি ছিল। যখন ও এভাবে শুরু করেছে, তখন আমরা শুধু স্বাভাবিক ব্যাটিং করছিলাম।’
তবে ব্যাটসম্যানদের কাজটা অনেকটাই সহজ করে দিয়েছেন বোলাররা। আগে ব্যাট করা ইংল্যান্ড যেখানে প্রথম ১০ ওভারে রান করেছে ১ উইকেটে ৮০, সেই ইংল্যান্ড শেষ ১০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ৭৬ রান করেছে। হাসান মাহমুদ ৪ ওভারে ২৬ রানে ২ উইকেট নিয়ে ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের দমিয়ে রাখেন। তাঁকে সাহায্য করেন তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান।
নাজমুল তাই ইংল্যান্ডকে হারানোর দিনে বোলারদের কৃতিত্ব দিতে ভুললেন না, ‘শেষের ১০ ওভার আমরা বোলিংয়ে যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছি, তখনই আমাদের ওই আত্মবিশ্বাসটা এসেছে যে এই রান তাড়া করা সম্ভব। পরে ব্যাটিংয়ে যেভাবে শুরুটা পেয়েছি, তখন থেকেই আত্মবিশ্বাসটা পেয়েছি যে আমরা যদি এক-দুইটা জুটি গড়তে পারি, তাহলে খেলাটা আমরা জিততে পারব।’