সাকিবের পরামর্শে নির্ভার রনি
ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচ বাকি তখনো। সিরিজ প্রথম দুই ম্যাচেই হেরে বসেছে বাংলাদেশ, সে ম্যাচের আগে অনুশীলনে মনোযোগের অনেকটা ঘিরে ছিল টি-টোয়েন্টি দল। পাশাপাশি নেটে ব্যাটিং করছিলেন রনি তালুকদার ও শামীম হোসেন। ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্সের চাহিদা ছিল, প্রতি বলেই শট খেলা—যাতে চার বা ছক্কা আসে। কোনো একটা শট সিডন্সের তেমন মনঃপূত না হওয়ার পর আবার ইঙ্গিত দিলেন চার বা ছয় মারতে। রনি মনে করিয়ে দিলেন, এরই মধ্যে দুটি চার মেরেছেন।
সেই রনি কাল আদিল রশিদের গুগলি পড়তে না পেরে বোল্ড হওয়ার আগে মেরেছেন চারটি চার। ১৪ বলে ২১ রানের ইনিংসটিকে হয়তো স্বপ্নের মতো বলা যাবে না মোটেও, তবে বাংলাদেশকে রানতাড়ায় সুরটা ধরিয়ে দিয়েছে দিয়েছে তাঁর ব্যাটিং-ই। লিটন দাসের সঙ্গে তাঁর ওপেনিং জুটি ৩.৩ ওভার টিকেছে, তবে ৩৩ রানের সে জুটি শুরুতেই চাপে ফেলে দেয় ইংল্যান্ডকে। মাঝে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট নিয়ে যে ‘ইমপ্যাক্ট’–এর আলোচনা প্রকট হয়েছিল, রনির ইনিংসটিকে অমন ‘ইমপ্যাক্টফুল’–ই বলতে হবে।
রনির পর লিটন ফিরলেও নাজমুল হোসেন, অভিষিক্ত তৌহিদ হৃদয়ের পর সাকিব আল হাসান ও আফিফ হোসেন বাংলাদেশকে এনে দিয়েছেন স্মরণীয় এক জয়। ইংলিশ ব্যাটসম্যান ফিল সল্ট যেমন বলেছিলেন, গতকাল বাংলাদেশের ইনিংসটি এমন কন্ডিশনে হওয়ার কথা ‘পারফেক্ট রান চেজ’।
রনি বলছেন, সাকিবের পরামর্শে নির্ভার থেকেই এমন করে খেলতে পেরেছেন তিনি। এবার জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন সর্বশেষ বিপিএলে দারুণ পারফরম্যান্স দিয়েই। রংপুর রাইডার্সের হয়ে টপ অর্ডারে আলো ছড়িয়েছিলেন, করেছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪২৫ রান। বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড সিরিজের সম্প্রচার চ্যানেল টি-স্পোর্টসকে রনি বলছেন, দলে আসার পর থেকেই সবার সমর্থন পাচ্ছেন তিনি, ‘(জাতীয় দলে খেলা) তো একটা স্বপ্ন। প্রতিটা খেলোয়াড়েরই স্বপ্ন। ২০১৫ সালে অভিষেকের পর ক্যারি করতে পারিনি। এরপর ফর্মটা ভালো ছিল না। শেষ বিপিএলটা ভালো হওয়ার পর দল আমাকে সুযোগ দিল। সবাই আমাকে সমর্থন দিচ্ছে। সাকিব ভাই, কোচিং স্টাফ সবাই। এর প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করছি।’
চট্টগ্রামে গতকাল বলতে গেলে রনির আরেকটি ‘অভিষেক’ই হয়েছে। ২০১৫ সালের পর আবার আরেকটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন, গড়েছেন এ সংস্করণে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে লম্বা বিরতি দিয়ে দুই ম্যাচ খেলার রেকর্ডও। স্বাভাবিকভাবেই একটু ‘নার্ভাস’ হওয়ারই কথা ছিল। তবে গতকাল নাকি তিনি নির্ভারই ছিলেন, ‘এ দল আমাকে অনেক সমর্থন করছে। অনুশীলনেই সমর্থন করেছে। এটা সহায়তা করেছে আমাকে। নির্ভার থাকার চেষ্টা করেছি। সাকিব ভাই সেটিই বলেছেন, “নির্ভার থাকলে ভালো কিছুই হবে”।’
রনির সঙ্গে কাল নেমেছিলেন শামীম হোসেনও, যিনি সর্বশেষ জাতীয় দলে খেলেছিলেন ২০২১ সালের নভেম্বরে। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন অভিষিক্ত তৌহিদ হৃদয়ও। নাজমুলের সঙ্গে হৃদয়ের ৩৯ বলে ৬৫ রানের জুটিই মূলত ছিটকে দেয় ইংল্যান্ডকে। নতুনদের দলে আসা প্রসঙ্গে গতকাল নাজমুলও বলেছেন ড্রেসিংরুমের ইতিবাচক আবহের কথা, ‘আমার মনে হয় দলের পরিবেশ খুবই ভালো। মনে হয় না এত দিন পর তাদের ফিরে আসায় মানিয়ে নিতে কোন সমস্যা হয়েছে। কারণ, বিপিএলে আমরা খেলেছি, ঘরোয়া ক্রিকেটেও একসঙ্গে খেলি। যদিও (এটি) আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, (তবে) ড্রেসিংরুমে আমাদের খুবই ভালো পরিবেশ। আমার মনে হয় না তাদের কোনো সমস্যা হয়েছে।’
বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে প্রথম ম্যাচেই হারানোর পর স্বাভাবিকভাবেই এখন বাংলাদেশ দলের লক্ষ্য সিরিজ জয়। রনিও সেটিই বলেছেন, ‘যেহেতু একটা ম্যাচ জিতেছি, সিরিজও জেতার জন্যই খেলব।’
শেষ পর্যন্ত তেমন কিছু হলে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা অর্জন হবে সেটি। রনির আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরাও নিশ্চয়ই তাহলে হবে আরও স্মরণীয়।