আফ্রিদির ফেরার রাতে হেসেখেলে জিতল পাকিস্তান
চিরচেনা সেই বোলিং অ্যাকশনের পর ফলো থ্রু। বল হাতে ২২ গজের দিকে দৌড় শুরু করতেই অবশ্য দর্শকেরা হর্ষধ্বনি দিতে শুরু করেন। পাকিস্তানের জার্সিতে শাহিন শাহ আফ্রিদির এ দৌড় ৫ মাস পর!
গত বছরের ১৩ নভেম্বর টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে পাকিস্তানের হয়ে শেষবার মাঠে নেমেছিলেন আফ্রিদি। সেদিন হাঁটুতে চোট পেয়ে ছিটকে যান ২৩ বছর বয়সী তারকা ফাস্ট বোলার। সেরে ওঠার পর তাঁর নেতৃত্বে লাহোর কালান্দার্স পিএসএল জিতলেও জাতীয় দলের হয়ে প্রত্যাবর্তন হলো আজ। সেটাও তাঁর ফ্র্যাঞ্চাইজির ঘরের মাঠ লাহোরেই।
আফ্রিদির ফেরার রাতটাও হলো রঙিন। প্রথম টি–টোয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ডকে ৮৮ রানে হারিয়ে দিল পাকিস্তান। গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে ১৮২ রানে অলআউট হয় স্বাগতিকরা। লাহোর কালান্দার্সের হয়ে শিরোপা জেতা তিন পেসার হারিস রউফ, জামান খান ও আফ্রিদির তোপে তিন অঙ্কও ছুঁতে পারেনি কিউইরা। গুটিয়ে গেছে ৯৪ রানে। এ জয়ে পাঁচ ম্যাচ টি–টোয়েন্টি সিরিজে ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাবর আজমের দল।
আইপিএলে দল পাওয়া সব ক্রিকেটারকে পাকিস্তান সফর থেকে ছুটি দিয়েছে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড (এনজেডসি)। বলতে গেলে, দ্বিতীয় সারির দল পাঠিয়েছে তারা। পাকিস্তানের জয়টা এক রকম অনুমিতই ছিল। তাই বলে টম ল্যাথামের নেতৃত্বাধীন দল শুরুতেই এভাবে হুড়মুড়িয়ে পড়বে, এমনটা অনেকেই হয়তো ভাবেননি। এই দলটাই যে কদিন আগে পূর্ণশক্তির শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ জিতে এসেছে!
পাকিস্তানের প্রায় নিখুঁত এক ম্যাচের দিন টস–ভাগ্যও সঙ্গ দিয়েছে। যদিও শুরুটা ভালো হয়নি তাদের। পাওয়ার প্লেতেই আউট হন টি–টোয়েন্টির উদ্বোধনী জুটিতে রেকর্ডের সমার্থক হয়ে ওঠা বাবর (৯) ও মোহাম্মদ রিজওয়ান (৮)। দুজনকেই ফেরান অ্যাডাম মিল্নে।
তবে তৃতীয় উইকেটে ৭৯ রানের জুটি গড়ে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেন ফখর জামান ও সাইম আইয়ুব। চার–ছক্কার ফুলঝুরি ছড়িয়ে দুজনই করেন সমান ৪৭ রান। এক সময় মনে হচ্ছিল, অনায়াসে ২০০ পার করে ফেলবে পাকিস্তান। কিন্তু ১২তম ওভারে দলীয় ১০৯ রানে সাইমের রানআউটে জুটি ভাঙলে মড়ক লাগে তাদের ইনিংসে। এ সময় ম্যাট হেনরি ও ইশ সোধির দুর্দান্ত বোলিংয়ে ২২ রানের ব্যবধানে ৪ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। শেষ ৪ উইকেট হারায় ২৩ রানের ব্যবধানে। ৩২ রানে ৩ উইকেট নিয়ে নিউজিল্যান্ডের সেরা বোলার হেনরি। দুটি করে উইকেট নেন মিল্নে ও বেন লিস্টার।
লক্ষ্য ছুঁতে নেমে পাকিস্তানের বোলারদের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি কিউই ব্যাটসম্যানরা। এক মার্ক চ্যাপম্যান ছাড়া সবাই যেন আসা–যাওয়ার মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন।
পাওয়ার প্লেতে ৩ উইকেট হারানোর পর অধিনায়ক ল্যাথাম বিপর্যয় কাটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাঁর কচ্ছপ গতির ইনিংস টি–টোয়েন্টির দাবি মেটাতে পারেনি। নিউজিল্যান্ড ইনিংসের ১৫.৩ ওভারের মধ্যেই সাত বোলারকে ব্যবহার করেছেন বাবর। ইফতিখার আহমেদ ছাড়া সবাই এ দিন উইকেটের দেখা পেয়েছেন।
গত মাসে আফগানিস্তান সিরিজে পাকিস্তানকে নেতৃত্ব দেওয়া ইমাদ ওয়াসিম আবার দল থেকে বাদ পড়লে পিসিবির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। সেই হুমকি বোধ হয় কাজে লেগেছে। ইমাদকে একাদশে রেখেই দল সাজিয়েছে পাকিস্তান। আস্থার প্রতিদানও দিয়েছেন এই স্পিন অলরাউন্ডার। ব্যাট হাতে ১৬ রান করার পর শেষ দিকে এক ওভার হাত ঘুরিয়েই নিয়েছেন ২ উইকেট।
তবে আফ্রিদির ফেরার রাতটা যখন ফাস্ট বোলারদের, তখন জয়ের মুহূর্তটাও এসেছে একজন গতি তারকার হাত ধরে। ১৫০ কিলোমিটার ছুঁই ছুুঁই এক বলে লিস্টারের স্টাম্প উড়িয়েপাকিস্তানের বিশাল ব্যবধানে জয় নিশ্চিত করেন রউফ। ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরাও হয়েছেন তিনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান : ১৯.৫ ওভারে ১৮২ অলআউট
(ফখর ৪৭, সাইম ৪৭, ফাহিম ২২; হেনরি ৩/৩২, লিস্টার ২/৩০, মিল্নে ২/৫১)
নিউজিল্যান্ড : ১৫.৩ ওভারে ৯৪ অলআউট
(চ্যাপম্যান ৩৪, ল্যাথাম ২০, নিশাম ১৫; রউফ ৪/১৮, ইমাদ ২/২, জামান ১/৭, আফ্রিদি ১/১১)
ফল : পাকিস্তান ৮৮ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : হারিস রউফ।
সিরিজ : পাঁচ ম্যাচ সিরিজে পাকিস্তান ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে।