আইসিসির আর্থিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে, দাবি ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রধান নির্বাহীর
আইসিসির লভ্যাংশ ভাগাভাগির আর্থিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে দাবি করে ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রধান নির্বাহী জনি গ্রেভ বলেছেন, টেস্ট ক্রিকেটের অর্থনৈতিক কাঠামো না বদলালে সফরে খর্বশক্তির দল পাঠানোর ঝুঁকি আরও বাড়বে। এ ক্ষেত্রে ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মতো বোর্ডগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে বলেও মনে করেন গ্রেভ। অস্ট্রেলিয়ায় এমন দল পাঠানোয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওঠা সমালোচনার কড়া জবাবও দিয়েছেন তিনি।
ঘরোয়া লিগ এসএ টোয়েন্টিতে শীর্ষ সারির খেলোয়াড়দের সুযোগ করে দিতে নিউজিল্যান্ড সফরে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা অধিনায়কের নেতৃত্বে দ্বিতীয় সারির একটি টেস্ট দল পাঠাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা, এমন খবরের পর থেকেই টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে আলোচনা উঠেছে। আগামীকাল থেকে শুরু হতে যাওয়া অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলেও আছেন অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা সাতজন ক্রিকেটার।
সম্প্রতি এ প্রসঙ্গে কথা বলেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহও। তাঁর মতে, ওয়েস্ট ইন্ডিজও কয়েক বছর ধরে পূর্ণশক্তির টেস্ট দল নির্বাচন করছে না। আইসিসি যদি এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে টেস্ট ক্রিকেট আর স্বরূপে থাকবে না—এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি।
তবে গ্রেভ বলছেন, এই পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে অস্ট্রেলিয়াকেও। ইএসপিএনক্রিকইনফোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই ব্রিটিশ বলেন, ‘আমি স্টিভ ওয়াহকে যেটি বলব, গত চার মাসে অস্ট্রেলিয়ার সহায়তায় সিডব্লিউআই (ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ) ২ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে এবং বিনিময়ে আমরা শূন্য ডলার ফিরে পেয়েছি। এটি কি ন্যায্য ও যুক্তিসংগত?’
২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পুরুষ ও নারী দলের ১৩টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার দিকে ইঙ্গিত করে গ্রেভ বলেন, ‘আমরা অন্য যে কারও চেয়ে আকাশপথে বেশি ভাড়া গুনি এবং অস্ট্রেলিয়ায় আমাদের টেলিভিশন সম্প্রচারের কোনো চুক্তি নেই। ফলে অস্ট্রেলিয়ান যেসব ব্রডকাস্টার ক্রিকেটের এ অবস্থা নিয়ে অভিযোগ তুলছে, তারা ওয়েস্ট ইন্ডিজে ক্রিকেটের সহায়তায় কী করছে?’
গ্রেভের মতে, ‘লভ্যাংশ ভাগাভাগি (রেভিনিউ-শেয়ার) মডেল পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। আমাদের যদি ক্রিকেট সম্প্রদায় হিসেবে এগোতে হয়, তাহলে আমরা দুর্বলতম দলের সমানই শক্তিশালী (এটি মেনে নিতে হবে) এবং আমাদের দ্বিপক্ষীয় ক্রিকেটের ব্যাপারে মানসিকতা বদলাতে হবে।’
লভ্যাংশ ভাগাভাগি (রেভিনিউ-শেয়ার) মডেল পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। আমাদের যদি ক্রিকেট সম্প্রদায় হিসেবে এগোতে হয়, তাহলে আমরা দুর্বলতম দলের সমানই শক্তিশালী (এটি মেনে নিতে হবে) এবং আমাদের দ্বিপক্ষীয় ক্রিকেটের ব্যাপারে মানসিকতা বদলাতে হবে।ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রধান নির্বাহী জনি গ্রেভ
এখন অনেক দেশই নিজেদের টি-টোয়েন্টি লিগ চালু করে আর্থিক দিক দিয়ে শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টা করছে, যেন শুধু আইসিসির অনুদানে চেয়ে থাকতে না হয়। নিজেদের লিগের জন্য তারাও সব সময়ই একটা উইন্ডো চেয়ে যাবেন বলেও জানিয়েছেন গ্রেভ, ‘আমরা চাই, আমাদের সেরা খেলোয়াড়েরা খেলুক, যাতে এই প্রতিযোগিতা যথাসম্ভব সেরা হয়। বিগ থ্রি দেশগুলোর কোনো ঐশ্বরিক অধিকার নেই শুধু তাদের টি-টোয়েন্টির জন্য উইন্ডো রাখার। কেউ যদি বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজে ক্রিকেট মৃতপ্রায়, তাহলে আপনি বলতেই পারেন, “সিপিএলের দিকে তাকান”। এখানে বয়সের গড়ে সবাই তরুণ, লিঙ্গ ভারসাম্যে পুরুষের চেয়ে নারী বেশি। সিএ (ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া) ও ইসিবি (ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড) এমন অবস্থা পেতে মরিয়া। একই জিনিস দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষেত্রেও। কেউ যদি বলে সেখানে ক্রিকেট মারা যাচ্ছে, তাহলে বলতে পারেন, “এসএ টোয়েন্টির দিকে তাকান।”’
দ্বীপদেশগুলোর মধ্যে ফ্লাইটের কারণে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অন্য যে কারও চেয়ে বেশি ব্যয় হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের, এমন দাবি করা গ্রেভ বলেছেন, কোনো খেলোয়াড় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বাদ দিয়ে কোনো টি-টোয়েন্টি লিগ খেলতে গেলে তারা কোনোভাবেই বাধা দেবেন না। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে যেমন জেসন হোল্ডার না থাকায় আলোচনা আছে, এ সময়ে এ অলরাউন্ডার খেলবেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইন্টারন্যাশ লিগ টি-টোয়েন্টিতে (আইএলটি-টোয়েন্টি)। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোতে বিদেশি খেলোয়াড় নেওয়ার ক্ষেত্রে একটা সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ এবং দেশের বোর্ডকে একটা নির্দিষ্ট অঙ্ক প্রদান করার নিয়ম চালু করার জন্য ২০১৮ সালেই আইসিসিকে বলেছিল ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সম্প্রতি আইসিসি এ ব্যাপারে উদ্যত হলেও যা ‘ক্ষতি’ আগেই হয়ে গেছে বলে মনে করেন গ্রেভ।
সব মিলিয়ে টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে গ্রেভ বলেছেন, ‘আশা করা যায়, দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যমের ঘুম ভাঙিয়েছে, যাতে তারা দেখতে পায়—টেস্ট ক্রিকেট পরিচালনা করার বাস্তবতা কী। যতক্ষণ না বোর্ডগুলো টেস্ট ক্রিকেটের অর্থনৈতিক কাঠামো বদলাচ্ছে, ততক্ষণ বিগ থ্রি দেশগুলোর বাইরে টেস্ট ক্রিকেটের উৎকর্ষ হবে না। এটি শেষ হয়ে যাবে, সেটিও মনে করি না। তবে এটি আরও অনেক উন্নত হতে পারে, হওয়া উচিত। দক্ষিণ আফ্রিকার এ পরিস্থিতি যদি অর্থবহ আলোচনা নতুন করে শুরু করতে পারে টেস্ট ক্রিকেটের অবস্থানের ব্যাপারে, আমরা সেটিকে স্বাগত জানাব। এর জন্য দক্ষিণ আফ্রিকাকে দোষ দেওয়াটা অন্যায্য হয়ে যাবে।’