রাজনীতি করেছে বলে এরা খুনি? সাকিব-মাশরাফিকে নিয়ে প্রশ্ন কোচ সালাউদ্দিনের
ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টে খেলতে সাকিব আল হাসান দেশে ফিরতে পারেননি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের মতামত জানিয়েছেন কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। সাকিব বিকেএসপিতে থাকার সময় থেকেই তাঁকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন বাংলাদেশের এই কোচ। তবে শুধু সাকিব নয়, সালাউদ্দিনের ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রসঙ্গক্রমে এসেছে মাশরাফি বিন মুর্তজা ও তামিম ইকবালের নামও।
ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলতে সাকিব যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুবাই পর্যন্ত পৌঁছেছিলেনও। কিন্তু নিরাপত্তাঝুঁকির কারণে ঢাকা থেকে সাকিবকে আপাতত দেশে না ফিরতে পরামর্শ দেওয়া হয়। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগে সাকিব ছিলেন আওয়ামী লিগের সংসদ সদস্য। সেই সরকার পতনের পর সাকিবের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা হয়েছে রাজধানীর আদাবর থানায়।
সাকিবের দেশে ফেরার প্রতিবাদ জানিয়ে কয়েক দিন ধরেই শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আগামী সোমবার শুরু হতে যাওয়া মিরপুর টেস্টের দলে সাকিবকে শুরুতে রাখা হলেও আজ তাঁর জায়গায় স্পিনার হাসান মুরাদকে ডাকা হয় স্কোয়াডে।
ঘরের মাঠে খেলে সাকিবের বিদায় নিতে না পারা নিয়ে সালাউদ্দিন আজ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি কখনোই এত রাগ বা কষ্ট লাগে নাই, আজ কেন যেন লাগছে, আমরা মানুষ কি কখনো নিজেরা ভুল করি না, কেউ অনুতপ্ত হলে তাঁকে একটা সুযোগ দেওয়া উচিত, কিন্তু আমরা কেমন যেন হয়ে যাচ্ছি মানুষ হিসেবে, দয়ামায়া জিনিসটা আমাদের মধ্যে থেকে উঠে গেছে।’
দেশের ক্রিকেটে সাকিব-মাশরাফিদের অবদান তুলে ধরে সালাউদ্দিন এরপর লিখেছেন, ‘একটা মানুষ দেশের জন্য ১৭টা বছর কিছু না কিছু করেছে, আজ ক্রিকেট–বিশ্ব আমাদের একটু সম্মান করে কাদের জন্য, তারা ক্রিকেট মাঠে নামতে পারবে না, এই কান্না তো সবাই দেখবে না, রাজনীতি করেছে বলে এরা খুনি??? এদের সঙ্গে মিশেছেন, এরা কত মানুষের ভাত–কাপড়ের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে জানেন আপনি? এরা কত অসহায় মানুষের চিকিৎসা করিয়েছে, সেটা কি জানেন?’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সরব ছিলেন না সাকিব। এ জন্য কিছুদিন আগে দুঃখও প্রকাশ করেন। এর পাশাপাশি রাজনীতিতে নাম লেখানোর কারণও ব্যাখ্যা করেন সাকিব। তাঁর আগে মাশরাফিও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় নিজের নীরবতার কারণ ব্যাখ্যা করেছিলেন। পতিত আওয়ামী লিগ সরকারের সংসদ সদস্য ছিলেন মাশরাফিও। তাঁর বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা হয়েছে সরকার পতনের পর।
সালাউদ্দিন তাঁর স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘তারা স্ট্যাটাস না দেওয়ার কারণে আজ শত্রু। যখন মাশরাফি ৫টা অপারেশন করে দেশের জন্য লড়াই করেছে, তা কি দেখেছেন? সাকিব যে আঙুলে চিড় নিয়ে বোলিং করে গেছে, তামিম এক হাতে ব্যাটিং করে গেছে, কাদের জন্য?’
দেশের ক্রিকেটের এই তারকারা মাঠ থেকে বিদায় নিতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করে সালাউদ্দিন আরও লিখেছেন, ‘দেশকে সবাই কমবেশি ভালোবাসে। এদের ভালোবাসাটা হয়তো দেখা যায়ও না। এদের কাছ থেকে দেখেছি। এরা মানুষের উপকার ছাড়া কারও ক্ষতি করেনি, এরা খুনি না।’
সালাউদ্দিন তাঁর স্ট্যাটাসের শেষে লিখেছেন, ‘খুব কষ্ট পাচ্ছি, মাঠ থেকে এদের বিদায় দেখতে পাব না। মানুষকে মাফ করুন। আল্লাহ আমাদের অনেক অপরাধ মাফ করে দেবেন। আমরা সবাই কমবেশি অপরাধী। সম্মান কাউকে দিলে আপনিও সম্মানিত হবেন।’