পন্তের আউট নিয়ে রোহিত: আমি জানি না
‘জীবন মানে একটার পর একটা মৌসুম। খারাপ সময়ে মনে রাখবেন, উন্নতি একটি চক্রের মতো। বাজে সময়টা এই ভেবে মেনে নিন যে সেটি আপনাকে আরও বড় কিছুর জন্য প্রস্তুত করছে।’
কোনো মনীষীর নয়, এই বাণী ঋষভ পন্তের। মুম্বাই টেস্টে হারের পর পোস্ট করেছেন নিজের ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে। পন্তের এমন উপলব্ধির কারণ এতক্ষণে নিশ্চয়ই আপনার জানা। মুম্বাই টেস্টে আজ তৃতীয় দিনে নিউজিল্যান্ড ও জয়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন পন্ত। অন্যভাবে বললে, নিউজিল্যান্ডের ইতিহাস গড়ার পথে একমাত্র ‘কাঁটা’ হয়ে ছিলেন ভারতের এই উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান। সেই কাঁটা উপড়েই ম্যাচটা ২৫ রানে জিতেছে নিউজিল্যান্ড। তাতে শুধু এই টেস্টেই নয়, ঘরের মাঠে ন্যূনতম তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজেও প্রথমবারের মতো হারল ভারত। অথচ পন্ত ক্রিজে থাকলে কঠিনই হতো তা। সেটি পারেননি বলেই বাজে সময় পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার এই আত্মোপলব্ধিমূলক পোস্ট।
কিন্তু পন্ত কেন ক্রিজে থাকতে পারেননি, তা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। এবি ডি ভিলিয়ার্স যেমন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘বিতর্ক! আবারও (ডিআরএসে) কিছু ধোঁয়াশা দেখা গেল। পন্ত কি ব্যাটে লাগিয়েছিল, নাকি না? সমস্যা হলো, বল যখন ব্যাট পেরিয়ে যাচ্ছিল, একই সময়ে ব্যাটার (ব্যাট) প্যাডে লাগিয়েছে। স্নিকো শুধু শব্দটাই ধরবে। কিন্তু আমরা কতটা নিশ্চিত, সে (ব্যাটে বল) লাগিয়েছে? সব সময় এই দুশ্চিন্তাই করেছি এবং এমন সময়ে ঘটনাটি ঘটল, যেটা একটি বড় টেস্ট ম্যাচের খুব গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। হটস্পট কোথায়!?’
খুব গুরুত্বপূর্ণ বললেও আসলে কম হয়। সম্ভবত এই টেস্টেরই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল সেটি। ১৪৭ রান তাড়া করতে নেমে ২৯ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল ভারত। পন্ত ষষ্ঠ ও সপ্তম উইকেটে রবীন্দ্র জাদেজা ও ওয়াশিংটন সুন্দরের সঙ্গে জুটি গড়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার পথে ছিলেন। জাদেজার সঙ্গে ৫৩ বলে ৪২ রানের জুটিতে পন্তের অবদান ৩১ বলে ৩২। ওয়াশিংটনের সঙ্গে ৩৪ বলে ৩৫ রানের জুটিতে ২৩ বলে ২৬। জয় থেকে ভারত যখন ৪১ রানের দূরত্বে, তখন পন্তের ওই আউট। তার আগপর্যন্ত লড়াইটা ছিল পন্ত বনাম নিউজিল্যান্ড।
পন্তের আউটটি একবার স্মরণ করা যাক। ৫৭ বলে ৬৪ রানে ব্যাট করছিলেন। এজাজ প্যাটেলের বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে ডিফেন্স, বল জমা পড়ল উইকেটকিপারের হাতে। কিন্তু আউটের আবেদনে মাঠের আম্পায়ার সাড়া দেননি। রিভিউ নেন কিউই অধিনায়ক টম ল্যাথাম। ভিডিও রিপ্লেতে স্নিকো মিটার দেখে মনে হয়েছে, বল পন্তের ব্যাট স্পর্শ করে গেছে। তবে একই সময়ে পন্তের ব্যাট প্যাডেও লেগেছে। রিপ্লে দেখানোর সময় পন্ত মাঠে দুই আম্পায়ারকে কিছু একটা বোঝাচ্ছিলেন। কিন্তু তৃতীয় আম্পায়ারের নির্দেশে মাঠের আম্পায়াররা সিদ্ধান্ত পাল্টে আউট ঘোষণার পর পন্তের মুখের দিকে তাকানোই যাচ্ছিল না। ধীরপায়ে হাঁটতে হাঁটতে তাঁর ড্রেসিংরুমে ফেরার দৃশ্য দেখে মনে হয়েছে, এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে অনিচ্ছাকৃত যাত্রা!
ম্যাচ শেষে ভারতের অধিনায়ক রোহিত কথা বলেছেন পন্তের বিতর্কিত আউট নিয়ে, ‘আউটটির বিষয়ে সত্যি বলতে, আমি জানি না। আমরা কিছু বললে সেটি গ্রহণযোগ্য হবে না। কিন্তু অকাট্য প্রমাণ না থাকলে মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই বলবৎ থাকে। এটাই বলা হয়েছে আমাকে। তাই আমি জানি না, সিদ্ধান্তটি আসলে কীভাবে পাল্টানো হলো। কারণ, (মাঠের) আম্পায়ার তাকে আউট দেননি।’
রোহিত এরপর বলেছেন, ‘ব্যাট প্যাডের খুব কাছাকাছি ছিল। তাই আবারও বলছি, আমি ঠিক জানি না কথা বলার জন্য এটাই সঠিক বিষয় কি না। এটা আম্পায়ারদেরও ভাবার বিষয়। বারবার তারা মত না পাল্টে সব দলের জন্যই একই নিয়ম থাকুক।’
এর আগেও পন্তকে আউটের সুযোগ পেয়েছিল নিউজিল্যান্ড। ভারতের স্কোর যখন ৫ উইকেটে ৫৯, প্যাটেলের বলে এলবিডব্লু হয়েছিলেন পন্ত। আম্পায়ার যেমন আউট দেননি, তেমনি নিউজিল্যান্ডও রিভিউ নেয়নি।