শূন্য থেকে সেঞ্চুরি, ভারতকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন সরফরাজ

সেঞ্চুরির পর সরফরাজের উদ্‌যাপনএএফপি

সরফরাজ খানের সেঞ্চুরির পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্টটি করেন ইয়ান বিশপ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই সাবেক ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার লিখেছেন, ‘সরফরাজ খানের জন্য নিখাদ আনন্দ। নিজের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি সে যতটা উপভোগ করেছে, তার সতীর্থরাও ততটাই উপভোগ করায় ভালো লেগেছে। কখনো হাল ছেড়ো না। নিজের কাজটা করে যাও।’

আরও পড়ুন

শচীন টেন্ডুলকার এক্সে সরফরাজকে নিয়ে পোস্ট করেছেন বিষয়টিকে আরেকটু ছড়িয়ে দিয়ে। বেঙ্গালুরু টেস্টে নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে রাচিন রবীন্দ্রর সেঞ্চুরিও তিনি টেনেছেন পোস্টে, ‘আমাদের শেকড়ের সঙ্গে সংযুক্ত করিয়ে দেয় ক্রিকেট। রাচিন রবীন্দ্রর যেমন বেঙ্গালুরুর সঙ্গে বিশেষ যোগসূত্র আছে, যেখান থেকে তার পরিবার উঠে এসেছে, তার নামের পাশে আরও একটি সেঞ্চুরি। আর সরফরাজ খানের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া কী দারুণ সময়, যখন ভারতের এটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল।’

বেঙ্গালুরু টেস্টে ৭০ রানে অপরাজিত থেকে গতকাল তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করেন সরফরাজ। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসের তুলনায় নিজেদের দুই ইনিংস মিলিয়ে ভারত তখনো ১২৫ রানে পিছিয়ে। আজ সকালের সেশনে অনেক কিছুই ঘটতে পারত। দ্রুত দু-তিনটি উইকেট পড়ে গেলে হয়তো ইনিংস ব্যবধানে হারের চোখ রাঙানিও দেখতে হতো ভারতকে। কিন্তু বৃষ্টি নামার আগে মধ্যাহ্ন বিরতির আগপর্যন্ত সকালের সেশনে খেলা ২২ ওভারে ভারত কোনো উইকেট হারায়নি। রান উঠেছে ১১৩। ভারত মাত্র ১২ রান পিছিয়ে থাকলেও সরফরাজ ও ঋষভ পন্তের ব্যাটে তাকিয়ে বড় লিড নেওয়ার স্বপ্নও দেখছে। তাতে মনে মনে হয়তো একটি স্বপ্নও হয়তো দেখছেন ভারতের সমর্থকেরা।

টেস্টে ৫০ রানের নিচে অলআউট হয়েও জয়ের নজির আছে মাত্র একটিই। ১৮৮৭ সালে সিডনি টেস্টে ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ৪৫ রানে অলআউট হয়েও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি জিতেছিল।

আরও পড়ুন

বেঙ্গালুরুতে ভারত প্রথম ইনিংসে অলআউট হয়েছে ১৩৭ বছর আগের সেই টেস্টে ৪৫ রানে অলআউট হওয়া ইংল্যান্ডের চেয়ে ১ রান বেশি করে। নিউজিল্যান্ড এরপর ৪০২ রানে অলআউট হলে চাপেই পড়েছিল ভারত। কিন্তু সেই চাপ কাটিয়ে ভারতের ঘুরে দাঁড়ানো নিশ্চিতের পাশাপাশি জয়ের স্বপ্ন দেখানোর মূল কারিগর সরফরাজের অপরাজিত ১২৫ রানের ইনিংসটি। তবে নিউজিল্যান্ড শুধু এই ইনিংস নয়, সরফরাজের বিশেষ একটি অভ্যাসে তাকিয়ে ভয় পেতেই পারে।

ক্যারিয়ারের চতুর্থ টেস্টে এই সংস্করণে প্রথম সেঞ্চুরি পেলেন সরফরাজ। কিন্তু প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এটি তাঁর ১৬তম সেঞ্চুরি। আগের ১৫টি সেঞ্চুরির মধ্যে ১০টিই ১৫০‍+ স্কোর। এর মধ্যে চারটি ডাবল সেঞ্চুরিও আছে। অর্থাৎ সেঞ্চুরি পাওয়ার পর ইনিংসকে যতটা সম্ভব বড় বানানো অভ্যাসে পরিণত করেছেন সরফরাজ। সে অভ্যাসের ধারা মেনেই সরফরাজ যদি আরও এক থেকে দেড় সেশন ব্যাট করতে পারেন তাহলে কিন্তু নিউজিল্যান্ডের কাঁধে বড় লিডের বোঝা চাপার সম্ভাবনাই বেশি। তখন বাকি কাজটা করতে হবে ভারতের বোলারদের। আপাতত বেঙ্গালুরু টেস্টে আজ চতুর্থ দিনের এ সময় পর্যন্ত সরফরাজই শিরোনাম।

টেস্টে প্রথম সেঞ্চুরি নিশ্চয়ই মনে রাখবেন সরফরাজ
এএফপি

সরফরাজের উঠে আসার গল্প মোটামুটি সবারই জানা। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত রান পেলেও ভারত জাতীয় দলে সুযোগ মেলেনি। গত বছর আগস্টে ভারতের সাবেক ক্রিকেটার ও বিশ্লেষক আকাশ চোপড়া তাই ক্ষোভ উগরে বলেছিলেন, ‘সরফরাজ ভাবতে পারে, সে প্রতারিত হয়েছে।’

আরও পড়ুন

২০০৯ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে ভারতের হ্যারিস শিল্ড আন্তস্কুল টুর্নামেন্টে ৪৩৯ রানের ইনিংস খেলে আলোচনায় আসেন সরফরাজ খান। এরপর ঘরোয়া ক্রিকেটে দীর্ঘতম সংস্করণে যতগুলো সুযোগ পেয়েছেন, প্রায় সবটাই কাজে লাগিয়েছেন। ৬ বছর বয়সে ক্রিকেট শুরু করা সরফরাজকে এতটা পথ পর্যন্ত তুলে আনতে তাঁর মা–বাবার ত্যাগ-তিতিক্ষাও কম নয়। ছোটবেলায় বাবা ছিলেন তাঁর জন্য একের ভেতর তিন—বাবা, কোচ ও মেন্টর। নেটে ছেলেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা থ্রো-ডাউন করে গেছেন। সঙ্গে করে নিয়ে গেছেন বিভিন্ন ম্যাচে। ছেলেকে ক্রিকেটার বানাতে পারিবারিক অনুষ্ঠান পর্যন্ত বর্জন করতে বলেছেন। শেষ পর্যন্ত এতসব ত্যাগের ফল মেলে এ বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রাজকোট টেস্টে। ক্রিকেটের কুলীন সংস্করণে অভিষেক ঘটে সরফরাজের।

বেঙ্গালুরুতে ভারতের দুই ইনিংসেই ব্যাটিংয়ে নেমেছেন চারে। সন্দেহ নেই পজিশনটি খুব গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু টেস্টে এ পর্যন্ত ৭ ইনিংস মিলিয়ে এই প্রথম চারে নামলেন সরফরাজ এবং সেঞ্চুরিও পেয়ে গেলেন। তাঁর সামর্থ্য ও মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতাও এখান থেকেই বোঝা যায়।

সেই ক্ষমতাবলেই রেকর্ডবইয়ের একটি তালিকায় শচীন টেন্ডুলকার-বিরাট কোহলিদের পাশে বসেছেন সরফরাজ। ভারতের নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে কোনো টেস্টে শূন্য রানে আউট হওয়ার পর সেঞ্চুরি করলেন সরফরাজ। এই তালিকায় সুনীল গাভাস্কার, মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন ও দিলীপ ভেংসরকারও আছেন। সরফরাজের আগে সর্বশেষ এই নজির দেখা গিয়েছে গত মাসেই চেন্নাই টেস্টে। ভারতের প্রথম ইনিংসে শূন্য আউট হওয়ার পর ১১৯ রানে অপরাজিত ছিলেন শুবমান গিল। ওহ, প্রতিপক্ষের নামই বলা হয়নি। বাংলাদেশ!