আরেকবার গল-জয় পাকিস্তানের, কাটল এক বছরের জয়-খরা

ফিফটি করে অপরাজিত ছিলেন ইমাম, গলে পাকিস্তান জিতেছে ৪ উইকেটে

গতকাল শেষ বেলায় দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়েছিল পাকিস্তান, গল টেস্টে একটা সুযোগের দুয়ার খুলে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কার। কিন্তু ইমাম-উল-হকের অপরাজিত ফিফটি, বাবর আজম ও সৌদ শাকিলের ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে প্রথম সেশনেই ৪ উইকেটের জয় পেয়েছে পাকিস্তান। শ্রীলঙ্কার মাটিতে ও গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের সাফল্যের তালিকায় তাই যুক্ত হলো আরেকটি টেস্ট জয়। এর মাধ্যমে এক বছরের জয়-খরাও কাটল পাকিস্তানের, সর্বশেষ গলেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিতেছিল তারা। সে টেস্টও শুরু হয়েছিল ১৬ জুলাই। এরপর টানা চারটি টেস্ট হেরেছিল বাবর আজমের দল, ড্র হয়েছিল পরের দুটি।

২০২২ সালে পাকিস্তানের সর্বশেষ সফরেই গলে সর্বশেষ কোনো টেস্ট হেরেছিল শ্রীলঙ্কা। সব মিলিয়ে সফরকারী কোনো দল মাত্র ষষ্ঠবার গলে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিং করে জিতল, সর্বশেষ জিতেছিল পাকিস্তানই, ২০২২ সালের ওই ম্যাচে। গলে পাকিস্তানের এটি তৃতীয় জয়, সফরকারী কোনো দল হিসেবে এ ভেন্যুতে সর্বোচ্চ ম্যাচ জেতার রেকর্ডও গড়ল তারা। সব মিলিয়ে শ্রীলঙ্কার মাটিতে এটি পাকিস্তানের ষষ্ঠ জয়। দেশটিতে টেস্ট জয়ের হিসাবে ইংল্যান্ডকে ছুঁয়ে ফেলল তারা।

শেষ দিন ৭ উইকেট হাতে নিয়ে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ৮৩ রান। শ্রীলঙ্কার তাই প্রয়োজন ছিল দ্রুত উইকেট। কিন্তু দিনের প্রথম বলটিই রমেশ মেন্ডিস করেছিলেন শর্ট লেংথে, তাতে পুল করে চার মারতে কোনোই সমস্যা হয়নি বাবরের। দিনে কী ঘটতে চলেছে, মেন্ডিসের ওই বল যেন ইঙ্গিত দিয়েছে সেটিরই। সে ওভারে ফ্লিক করে আরেকটি চার মারেন বাবর। পরের ওভারে প্রবাত জয়াসুরিয়াকে পাকিস্তান অধিনায়ক মারেন আরেকটি চার। পাকিস্তানের যা চাপ, অনেকটাই যেন মিলিয়ে যায় ওই তিনটি বাউন্ডারিতেই।

বাবরের সঙ্গে ইমামের জুটি শেষ দিন ভালো শুরু এনে দেয় পাকিস্তানকে
এএফপি

দিনের ষষ্ঠ ওভারে অবশ্য ব্রেকথ্রু পায় শ্রীলঙ্কা। জয়াসুরিয়ার আর্ম বল ফাঁকি দেয় বাবরের ব্যাট, রিভিউ নিলেও এলবিডব্লিউ থেকে বাঁচেননি পাকিস্তান অধিনায়ক। ২৮ বলে ২৪ রানে থামতে হয় তাঁকে। তবে বাবরের উইকেট প্রভাব ফেলেনি ইমামের ব্যাটিংয়ে। অধিনায়ক ফেরার পর স্ট্রাইক পেয়ে প্রথম বলেই রমেশ মেন্ডিসকে লং অফের ওপর দিয়ে ছক্কা মারেন এ বাঁহাতি, ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে। প্রথম ইনিংসের ডাবল সেঞ্চুরিয়ান সৌদ শাকিলের প্রথম রান আসে মেন্ডিসকে ওই ওভারেই কাট করে মারা চারে।

পরের দুই ওভারে বাউন্ডারি না এলেও ইমাম ও শাকিলের জুটি দ্রুতই ভাঙতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। শাকিলও খেলেন দারুণ কিছু শট। মেন্ডিসকে স্কুপ করে চার মারেন, জয়াসুরিয়াকে এক ওভারে আরও দুটি চার মারেন রিভার্স সুইপ ও প্রথাগত সুইপে। অন্য সবার চেয়ে এ ম্যাচে যেন ভিন্ন এক উইকেটেই ব্যাটিং করলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত শাকিল থামেন মেন্ডিসের টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়া বলে। সামনের পা নাকি পেছনের পায়ে ভর করে খেলবেন, সেটি ভাবতে ভাবতেই খোঁচা দেন এ বাঁহাতি। তবে শাকিলের উইকেট যে শ্রীলঙ্কার জন্য বেশ দেরি করেই এসেছে, সেটি তখন স্পষ্টই।

পাকিস্তানের সফল রান তাড়ায় শাকিল ও বাবরের ইনিংস অবদান রেখেছে ঠিকই, কিন্তু গতকাল থেকে একপ্রান্ত আগলে রাখার কাজটি করেছেন মূলত ইমামই। গতকাল টপ অর্ডারের ধসের পর আজ মিডল অর্ডারে উইকেট হারালেও দলকে ন্রিয়াপদে নিয়ে গেছেন। শেষ দিকে পেয়েছেন মাইলফলকের দেখাও। মেন্ডিসের বলে সিঙ্গেল নিয়ে ক্যারিয়ারের অষ্টম ফিফটি পূর্ণ করেন এ বাঁহাতি।

দারুণ কিছু শট খেলেন সৌদ শাকিল
এএফপি

ইমাম থাকলেও পাকিস্তান অন্য প্রান্তে উইকেট হারিয়েছে ঠিকই। রান বের করতে না পেরে হঠাৎ করেই অস্থির হয়ে ওঠা সরফরাজ আহমেদ ফেরেন প্রবাত জয়াসুরিয়াকে সুইপ করতে গিয়ে। ডিপ স্কয়ার লেগে ভালো ক্যাচ নেন কুশল মেন্ডিস। তখন ৪ রান দরকার পাকিস্তানের, বাকি ৪ উইকেট। কিন্তু নেমেই ছক্কা মেরে পাকিস্তানের জয় নিশ্চিত করেন সালমান আগা। শ্রীলঙ্কা যে প্রথম ইনিংসের পর থেকেই এ টেস্টে পেছনে পড়েছে, সেটিই প্রমাণিত হয় আরেকবার।

সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট শুরু আগামী ২৪ জুলাই, কলম্বোতে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা: ৩১২ ও ৮৩.১ ওভারে ২৭৯ (ডি সিলভা ৮২, মাদুশকা ৫২, মেন্ডিস ৪২; আবরার ৩/৬৮, নোমান ৩/৭৫, আগা ২/৩৯, আফ্রিদি ২/৬৪)

পাকিস্তান: ৪৬১ ও ৩২.৫ ওভারে ১৩৩/৬ (ইমাম ৫০*, শাকিল ৩০, বাবর ২৪; জয়াসুরিয়া ৪/৫৬, মেন্ডিস ১/৬২)

ফল: পাকিস্তান ৪ উইকেটে জয়ী