সিডনির কুরুক্ষেত্র: বুমরার সঙ্গে সেই ঝামেলা নিয়ে মুখ খুললেন কনস্টাস
সিডনি টেস্টের প্রথম দিনের শেষ ওভারের কথা মনে আছে? মনে থাকারই কথা। ভালো একটি শট, ভালো একটি ডেলিভারি হয়তো ভোলা যায়। কিন্তু সময়ের সেরা বোলার আর ক্যারিয়ারে মাত্র দ্বিতীয় টেস্ট খেলা ১৯ বছরের এক তরুণের লড়াই কি ভোলা যায়!
স্যাম কনস্টাস আর যশপ্রীত বুমরার সেই লড়াইয়ের কথাই বলা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত যে লড়াইয়ের রূপ ছিল এমন, কনস্টাস বনাম ভারতের ১১ জন। সেই ঘটনা নিয়ে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি শেষ হওয়ার পর মুখ খুলেছেন কনস্টাস।
সেদিন ভারত প্রথম ইনিংসে ১৮৫ রানে অলআউট হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়া ১ উইকেটে ৯ রানে দিনের খেলা শেষ করেছিল। অস্ট্রেলিয়া উইকেট হারিয়েছিল দিনের শেষ বলে। আর এই বলের আগে ও পরেই ঘটেছে নানা কাণ্ড।
অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে ২.৫ ওভারে স্ট্রাইকে থাকা উসমান খাজার ওপর ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন বুমরা। দুজনের উদ্দেশ্যে ছিল ভিন্ন। খাজা চাইছেন সময় নষ্ট করতে। বুমরা চান বাঁচাতে। লড়াই তাই অবশ্যম্ভাবী। সেই লড়াইয়ের মধ্যে ঢুকে পড়েন কনস্টাস।
বুমরা বোলিং মার্ক থেকে দৌড় শুরু করেছিলেন। তাকিয়ে দেখেন খাজা প্রস্তুতই হননি। দুই হাত উঁচিয়ে বিরক্তি প্রকাশের ভঙ্গি করেন খাজার প্রতি। কিন্তু নন–স্ট্রাইকে থাকা কনস্টাস কিনা ঘাড় ঘুরিয়ে তাঁকে কিছু একটা বলে বসলেন!
কনস্টাস ঘাড় ঘুরিয়ে মুখ খুলতেই বুমরা আর নিজের মেজাজ ধরে রাখতে পারেননি। দুই হাত উঁচিয়েই এগিয়ে কিছু একটা বলতে বলতে এগিয়ে যান কনস্টাসের দিকে। কনস্টাসও এগিয়ে এসেছিলেন দুই পা। ঠিক তখনই শান্তির বার্তা নিয়ে দুজনের মাঝে এক বাংলাদেশির আবির্ভাব। মাঠের আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দুজনকে ঠান্ডা করে তাঁদের নিজ নিজ জায়গায় পাঠিয়ে দেন তিনি।
পরের বলেই আউট হয়ে যান খাজা। খাজাকে স্লিপে ক্যাচ বানিয়েই বুমরা তেড়ে গিয়েছিলেন কনস্টাসের প্রতি, সঙ্গে দলের বেশ কয়েকজন। কনস্টাস ভদ্র ছেলের মতো কিছুই বলেননি তখন। সেই ঘটনাকে নিজের জন্য শিক্ষা বলেছেন কনস্টাস, ‘আমার মনে হয়েছে আমি লড়াইটা উপভোগ করছিলাম। নিজের সর্বোচ্চটা উজাড় করে দিচ্ছিলাম। এটা আমার জন্য ভালো শিক্ষা। আমি আসলে সময় নষ্ট করার চেষ্টা করেছি, যাতে তারা আরও এক ওভার না করতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয়টা বুমরারই। অবশ্যই বুমরা বিশ্বমানের, সম্ভবত সিরিজে ৩২ উইকেট নিয়েছে। এমন ঘটনা যদি আবার ঘটে, সম্ভবত আমি আর কিছু বলব না।’
শুধু যে বুমরার সঙ্গে কনস্টাসের লেগেছে, তা নয়। বিরাট কোহলির সঙ্গে কথার আদান–প্রদান হয়েছিল কনস্টাসের। সেটা আবার অভিষেক টেস্টেই। ম্যাচশেষে কথা বলে অবশ্য সেটা ভালোভাবে মিটিয়ে নিয়েছেন দুজন। এখানে অবশ্য সিনিয়র কোহলিরই দায়িত্বটা বেশি ছিল। কারণ, তিনিই সব শুরু করেছিলেন।
মেলবোর্ন টেস্টের প্রথম দিনে একেবারে অকারণে কনস্টাসকে কাঁধ দিয়ে ধাক্কা মেরেছেন। যার জন্য পরে তাঁকে শাস্তিও পেতে হয়েছে।
কোহলির সঙ্গে কী কথা হলো কনস্টাসের, ‘ম্যাচশেষে কোহলির সঙ্গে কথা হয়েছিল। তাকে যে আমি আদর্শ মানি, সেটা বলেছিলাম। তার বিপক্ষে খেলা অনেক সম্মানের। যখন কোহলি ব্যাটিং করছিল, আমি বলছিলাম ‘‘ওয়াও কোহলি ব্যাটিং করছে।” সব ভারতীয় দর্শক তার নামে স্লোগান দিচ্ছিল। এটা পরাবাস্তব অনুভূতি। সে বিনয়ী মানুষ। দারুণ একজন, আমাকে শুভকামনা জানিয়ে বলেছে, শ্রীলঙ্কা সফরে থাকলে যেন ভালো করি। আমার পুরো পরিবার তাকে পছন্দ করে, ছোটবেলা থেকে তাকে আদর্শ মানি, সে কিংবদন্তি।’