ডিনকে দীপ্তির ‘মানকাডিং’ নিয়ে হতাশা ইংলিশদের
জয় নিশ্চিত হতে না হতেই কেঁদে ফেললেন ভারতীয় দলের কয়েকজন। এদিকে ইংল্যান্ডের শার্লি ডিনের চোখেও জল। তবে দুই কান্নায় পার্থক্য অনেক।
ভারতীয় ক্রিকেটারদের কান্না জয়ের আনন্দে নয়, ঝুলন গোস্বামীর বিদায়ে। আর ডিনের কান্নায় যতটা দলকে জেতাতে না পারার দুঃখে, তার চেয়ে বেশি অসহায়ত্বের অনুভূতিতে।
লর্ডসের ভারত ও ইংল্যান্ডের মেয়েদের ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচটিতে ১৭০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করছিল ইংল্যান্ড। ১১৮ রানে পড়ে যায় নবম উইকেট। শেষ সঙ্গী ফ্রেয়া ডেভিসকে নিয়ে তবু জয়ের দিকে ছুটছিলেন ডিন। শেষ ৭ ওভারে ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ১৭ রান, স্ট্রাইকে তখন ডেভিস।
অফ স্পিনার দীপ্তি শর্মা ওভারের তৃতীয় বলটি করার মুহূর্তে ক্রিজ ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে পড়েন নন-স্ট্রাইকে থাকা ডিন। সুযোগ বুঝে বল ডেলিভারি না দিয়ে স্টাম্প ভেঙে দেন দীপ্তি, রান আউট ডিন। নামের পাশে ৮০ বলে ৪৭ রান।
১৯ ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি যখন হাতছানি দিচ্ছিল, ৩৫ রানের জুটি গড়ে জয়ের সম্ভাবনাও যখন উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল, এমন সময় এ ধরনের আউট! দেখতে যেমনই লাগুক, ক্রিকেটের আইনেই আছে এমন আউট। হাত থেকে ব্যাট ছুড়ে দিয়ে, অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে মাথা নাড়তে থাকেন ডিন। একসময় চোখে জল চলে এল।
ডিনের আউটটির অনানুষ্ঠানিক নাম মানকাড আউট। ১৯৪৭-৪৮ মৌসুমে টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিল ব্রাউনকে এভাবে আউট করেছিলেন ভারতের বিনোদ মানকাড। এরপর যখনই বল ডেলিভারির মুহূর্তে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া ব্যাটসম্যানকে আউট করার ঘটনা ঘটেছে, আলোচনায় এসেছে মানকাডের নাম। ক্রিকেট অভিধানে ঢুকে যায় মানকাডিং।
ক্রিকেট আইনে এ ধরনের আউটের বৈধতা দেওয়া হয়েছিল ‘আনফেয়ার প্লে’ ক্যাটাগরিতে। এ বছরের মার্চে ক্রিকেটের আইন প্রণয়নকারী সংস্থা এমসিসি মানকাডিংকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘রান আউট’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
সম্প্রতি অবশ্য ধারা ৩৮-এর ‘আনফেয়ার প্লে’ বদল করে মানকাডিং পরিণত হয় ৪১ ধারার স্বাভাবিক রান আউটে।
মানকাডিংকে ‘ক্রিকেট চেতনার পরিপন্থী’ অভিযোগ থেকে মুক্তি দিতেই এমন উদ্যোগ নিয়েছিল এমসিসি। তবে দীপ্তি শর্মা এমন আউটে শার্লি ডিন আউট হওয়ার পর পুরোনো কথাটিরই প্রতিধ্বনি শুরু হয়েছে ইংল্যান্ডের ক্রিকেটে।
অলরাউন্ডার জর্জিয়া এলিস বিবিসি টেস্ট ম্যাচ স্পেশালে অংশ নিয়ে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে পারছি না, ভারতীয়রা কীভাবে ভাবল যে উইকেটটা এভাবে নিতে হবে? ডিন কোনো সুবিধা নেওয়ার জন্য এগিয়ে যায়নি। খুবই অদ্ভুত লেগেছে ব্যাপারটি। এ ঘটনা ঝুলনের বিদায়ের মুহূর্তটিকে ম্লান করে দিয়েছে।’
ইংল্যান্ডের সাবেক স্পিনার অ্যালেক্স হার্টলিও বলেছেন একই ধরনের কথা, ‘এটা ক্রিকেটীয় চেতনার সঙ্গে যায় না। কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের শেষটা এভাবে হতে পারে না।’ তবে ইংল্যান্ডের এসব সমালোচনাকে পাত্তা দিতে রাজি নন ভারতের অধিনায়ক হারমানপ্রীত কাউর।
ম্যাচ শেষে রান আউটটি নিয়ে করা প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, ‘আমি তো মনে করেছিলাম প্রথম ৯ উইকেট নিয়ে জিজ্ঞাসা করবেন। ওই উইকেটগুলো নেওয়া তো সহজ ছিল না। আর এ ধরনের আউট আইসিসির আইনেই আছে। আমার তো মনে হয়, দীপ্তির করা এই আউট ব্যাটারদের আরও সচেতন করবে।’
ইংল্যান্ডের ক্রিকেটে মানকাডিং নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হয়েছিল ২০১৯ সালে। ওই বছর আইপিএলের রাজস্থান-পাঞ্জাব ম্যাচে জশ বাটলারকে মানকাডিং করেছিলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। এবার ডিনকে দীপ্তি আউট করার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশ্বিনের প্রসঙ্গ নিয়ে আসেন অনেকে।
৩৬ বছর বয়সী ভারতীয় অফ স্পিনারও চুপ থাকেননি। দীপ্তির প্রতি সমর্থনসূচক ইমোজি ব্যবহার করে টুইটারে লিখেছেন, ‘সবাই অশ্বিনকে নিয়ে এমন মেতে আছে কেন? আজকের বোলিং হিরো তো দীপ্তি।’