সাকিবদের ঘাড়ে চেপেছে যে ‘ভূত’
চন্ডিকা হাথুরুসিংহে নতুন করে দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশ দলের অনুশীলনে লেগ স্পিনারদের ভিড় বাড়ছে। ক্লাব ক্রিকেটের আনকোরা লেগ স্পিনার থেকে বিসিবি প্রোগ্রামের লেগ স্পিনারদের দেখা যাচ্ছে। চট্টগ্রামে এখন বাংলাদেশ দলের সঙ্গে আছেন আমিনুল ইসলাম ও রিশাদ হোসেন। দুজনের কেউই ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি দলের অংশ নন। বাংলাদেশ দলের অনুশীলনের জন্য তাদের নিয়ে আসা হয়েছে।
কারণটা পরিষ্কার। প্রতিপক্ষ দলে আছেন আদিল রশিদ ও রেহান আহমেদ। অভিজ্ঞ রশিদ কী করেছেন, সেটা তো এর মধ্যে সবার জানা। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি (৮) তিনি। বাঁহাতি ও ডানহাতি—বাংলাদেশ দলের সব ব্যাটসম্যানদের জন্যই রশিদ আতঙ্ক। অভিজ্ঞতা, গতিবৈচিত্র্যের সঙ্গে উইকেটের সাহায্য পাওয়ায় রশিদকে সামলাতে পারেনি বাংলাদেশ।
সমস্যাটা শুধু এই সিরিজে নয়। বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানদের লেগ স্পিন দুর্বলতা পুরোনো। ভূতের মতো যা ঘাড়ে চেপে বসেছে। গত পাঁচ বছরে তিন সংস্করণের ক্রিকেটে লেগ স্পিনের বিপক্ষে ১০০ রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সেরা মুশফিকুর রহিম (গড় ৪০)। কিন্তু মুশফিক লেগ স্পিনে আউট হয়েছেন ১৭ বার। লেগ স্পিনে ৩০ গড়ে রান করা ব্যাটসম্যান আছেন মাত্র দুজন।
লেগ স্পিনে তামিম ইকবালের গড় ৩৬, আউট হয়েছেন ৭ বার। তবে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান হওয়ায় তাঁকে খুব বেশি লেগ স্পিন খেলতে হয়নি (২৮৪ বল)।
মাঝের ওভারে যিনি ব্যাট করেন, সেই মাহমুদউল্লাহ ৩১ গড়ে রান করলেও বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২১ বার লেগ স্পিনে আউট হয়েছেন।
আরেক অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসানের রেকর্ডও ভালো না। বাঁহাতি হওয়ায় লেগ স্পিনের বিপক্ষে ‘ম্যাচ–আপ’ তাঁর পক্ষে থাকলেও সাকিবকে ক্রিজে পাঠিয়ে স্বস্তিতে থাকার উপায় নেই। সাকিব ২০ বার লেগ স্পিনে আউট হয়েছেন, গড় মাত্র ২০!
তরুণ বাঁহাতি আফিফ হোসেনের অবস্থা আরও শোচনীয়। লেগ স্পিনে সাকিবের মতোই এলোমেলো মনে হয় তাঁকেও। লেগ স্পিনে ৯১ স্ট্রাইক রেটে রান করলেও আফিফ আউট হয়েছেন ১১ বার, গড় ২৩।
বাকিদের তুলনায় লেগ স্পিনে লিটন দাসের স্ট্রাইক রেট (৯৫) ভালো ঠিকই। কিন্তু তাঁর গড় ২৯, লেগ স্পিনের শিকার হয়েছেন ১৫ বার। মেহেদী হাসান মিরাজ (৯), নাজমুল হোসেন (৭), মোসাদ্দেক হোসেনের (১০) আউট হওয়ার রেকর্ডেও নেই স্বস্তি।
একমাত্র মুমিনুল হকের রেকর্ড বলছে, লেগ স্পিনের বিপক্ষে তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। গত পাঁচ বছরে লেগ স্পিনারদের ৩০৮ বল খেলে মুমিনুলের রান ২০২, আউট হয়েছেন মাত্র ১ বার, গড় অবিশ্বাস্য ২০২!
তবে মুমিনুলের রেকর্ড শুধু টেস্ট ক্রিকেটের। টেস্টের তুলনায় লেগ স্পিন বেশি সামলাতে হয় সাদা বলে। সেখানেই যত সমস্যা। জাতীয় দলের সাবেক এক অধিনায়ক যেমন বলছিলেন, ‘আমরা লেগ স্পিন ভালো খেলি না। দলে কয়েকজন শুধু ম্যানেজ করতে পারে। সেটাকে ভালো খেলা বলে না।’
সে জন্যই হাথুরুসিংহের লেগ স্পিন নিয়ে এত ব্যস্ততা। লেগ স্পিনার বোলিংয়ে যেমন জরুরি, তেমনি ব্যাটসম্যানদের জন্যও। লেগ স্পিন না খেলে বেড়ে ওঠা ব্যাটসম্যানদের শীর্ষ পর্যায়ে গিয়ে অনভ্যস্ততার খেসারত দিতে হচ্ছে। সে জন্যই লেগ স্পিনারদের দলের সঙ্গে রেখে ‘এক ঢিলে দুই পাখি মারার চেষ্টা’ টিম ম্যানেজমেন্টের।
স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ যেমন বলছিলেন, ‘এটা একটা প্রক্রিয়ার ব্যাপার। সে জন্যই ওদের দলের সঙ্গে রাখা। ওরা আমাদের সঙ্গে অনুশীলন করছে, অনেক কিছু শিখছে। সেটা সামনে কাজে দেবে। আমাদের কাছে কী আছে, সেটা বুঝতে হবে। যদি না থাকে, যা আছে তা নিয়েই সেরাটা বের করতে হবে। সে জন্যই বিপ্লব ও রিশাদ দলে, আশা করছি ওরা উন্নতি করবে, ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ সামলাতে পারবে।’