মিনহাজুল আবেদীন প্রথম মনে করতে পারলেন যে ঘটনাটা, যেটি শুনলে ডিজিটাল সময়ের এই বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের গায়েও কাঁটা দিয়ে উঠতে পারে। মিনহাজুল বললেন, ‘ভূতের ভয়ে বিদ্যুৎ তো আমার রুমে এসে ঘুমাত!’
আগামীকাল সকালে বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান জালাল ইউনুস ও পেসার মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুলও উড়ে যাবেন ইংল্যান্ডের উদ্দেশে। সুনির্দিষ্টভাবে বললে গন্তব্য লন্ডন থেকে সড়কপথে ঘণ্টা দেড়েক দূরত্বের চেমসফোর্ডে, যে শহরের এক হোটেল নিয়ে মিনহাজুলের দুই যুগ আগের ওই স্মৃতি।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের চেমসফোর্ডের সঙ্গে প্রথম পরিচয় সেবারই, ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে। বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপ, আর সেই প্রথম বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ছিল চেমসফোর্ডে। ১১৬ রানে অলআউট হয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটা বাংলাদেশ ৬ উইকেটে হারলেও সে ম্যাচ বাংলাদেশ জিতবে, এমন আশাও কেউ করেনি। বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ খেলার রোমাঞ্চ আড়াল করে দিয়েছিল অন্য সবকিছুই।
চেমসফোর্ডে বাংলাদেশ দলের এবারের সফরে অবশ্য রোমাঞ্চিত হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ওয়ানডের সিরিজ, সেটাও বাংলাদেশ খেলবে আসলে বিশ্বকাপে চোখ রেখে। দল, দলের সমন্বয়—২০২৩ বিশ্বকাপ সামনে রেখে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ওয়ানডেতে এসব নিয়েই গবেষণা করতে চান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। আর এই দলের কারও যেহেতু ২৪ বছর আগের বাংলাদেশ দলে থাকারই সুযোগ ছিল না, চেমসফোর্ডের বিশ্বকাপ ম্যাচ নিয়ে তাঁদের স্মৃতিতাড়িত হওয়ারও কিছু নেই, যেটা আছে মিনহাজুলের।
ভালো কথা, ২০১০ সালের ইংল্যান্ড সফরেও অবশ্য চেমসফোর্ডে কয়েকটা দিন থাকতে হয়েছিল বাংলাদেশ দলকে। টেস্ট সিরিজের আগে এসেক্সের বিপক্ষে একটি তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ ছিল সেখানে। সেই দলের অনেকেই আছেন এবারের দলে।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে মিনহাজুল একাদশে ছিলেন না। তবে বিশ্বকাপের দলে যেহেতু ছিলেন, চেমসফোর্ডের স্মৃতি তাঁর কিছুটা আছে। সেই স্মৃতি হাতড়েই গতকাল মুঠোফোনে বললেন, ‘অনেকটা গ্রামের মতোই একটা জায়গা ছিল চেমসফোর্ড। আমাদের বেজক্যাম্প ছিল সেখানে। এসেক্সের বিপক্ষে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলেছি। মাঠটা দুই দিকে একটু ছোট ছিল, তবে উইকেট ছিল খুব ভালো। প্রথম ম্যাচে খেলতে না পেরে আফসোস হয়েছিল খুব।’
এসব বলতে বলতেই এসে গেল টিম হোটেলের প্রসঙ্গ। চেমসফোর্ডে বাংলাদেশ দল এবার আছে ডাউন হল হোটেল স্পা অ্যান্ড এস্টেটে। ১১০ একর এলাকাজুড়ে বিলাসবহুল হোটেল। দেখতে অনেকটা দুর্গের মতো। মিনহাজুল জানালেন, ১৯৯৯ সালে গিয়ে চেমসফোর্ডের যে হোটেলে তাঁরা ছিলেন, সেটি আসলেই ছিল একটি পুরোনো দুর্গ, যেখানে দলের কেউ কেউ ভূতের ভয়ও পেয়েছেন। সেই ভয়েই নাকি শাহরিয়ার হোসেন (বিদ্যুৎ) রাতে মিনহাজুলের রুমে এসে ঘুমাতেন!
মিনহাজুলদের আগেই দুই ভাগে ভাগ হয়ে বাংলাদেশ দলের বেশির ভাগ সদস্য পৌঁছে গেছেন চেমসফোর্ডে। আবহাওয়া মোটামুটি ভালো, তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৬-১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকছে। গতকালের দিনটা শুধুই বিশ্রাম নিয়ে বাংলাদেশ দল অনুশীলন করবে আজ ও আগামীকাল। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৯ মে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডের আগে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচটি হবে ৫ মে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে গিয়ে সেদিনই দলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা সাকিব আল হাসানের। তাঁর মতো মোস্তাফিজেরও প্রস্তুতি ম্যাচে খেলার সম্ভাবনা কম, তবে গতকাল রাতের ফ্লাইট ধরা লিটন দাস হয়তো খেলবেন।
মিনহাজুলদের দেখা ২৪ বছর আগের চেমসফোর্ড নাকি এখনো গ্রামের মতোই আছে। দলের সঙ্গে থাকা বিসিবির মিডিয়া ম্যানেজার রাবীদ ইমামের ভাষ্য অন্তত সে রকমই। তবে মিনহাজুলদের সেই বাংলাদেশ দল যেখানে খেলতে পারলেই খুশি ছিল, তামিম ইকবালের এই বাংলাদেশ দলের সন্তুষ্টি নিশ্চিতভাবেই এটুকুতে সীমাবদ্ধ থাকবে না। বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপের সঙ্গে সপ্তম বিশ্বকাপের ব্যবধানরেখা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টার শুরুটাই যে হবে চেমসফোর্ডে!