শেষ ওভারে দুই ক্যাচ ছেড়ে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হার
১৪৬ রানের লক্ষ্য টি-টোয়েন্টিতে খুব বড় কিছু নয়। তবে সেই লক্ষ্যের পেছনে ছুটতে গিয়ে কোনো দল যখন ৫৮ রানে ৫ উইকেট হারায়, তখন সেটাই হয়ে ওঠে পাহাড়সম। ক্যারারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতে এমন চাপেই পড়েছিল অস্ট্রেলিয়া।
তবে চাপ সামলে অস্ট্রেলিয়াকে জয়ের স্বপ্ন দেখান অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ ও ম্যাথু ওয়েড। ৫৩ বলে ৫৮ রান করে অ্যারন ফিঞ্চ ফিরলেও শেষ পর্যন্ত টিকে থেকে রোমাঞ্চের সমাপ্তি টানেন ম্যাথু ওয়েড। ২৯ বলে ৩৯ রানে অপরাজিত ছিলেন উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান।
শেষ ৬ বলে জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন ছিল ১১ রান। শেলডন কটরেলকে প্রথম বলে চার মেরে নাটক জমিয়ে দেন ওয়েড। নাটকের অবশ্য তখনো বাকি। পরের বলে ক্যাচ তুলেছিলেন ওয়েড। কাভারে মোটামুটি সহজ ক্যাচটি হাতে নিলেও রাখতে ব্যর্থ হন রেইমন রেইফার।
এক বল পরে জীবন পান মিচেল স্টার্কও, এবার শর্ট থার্ডম্যানে সেটি ফেলেন কাইল মেয়ার্স। শেষ ওভারে দুই ক্যাচ ছাড়ার মাশুল ম্যাচ হেরেই দিতে হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। ১ বল ও ৩ উইকেট হাতে রেখে জয় তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া।
রান তাড়ায় প্রথম ওভারে ১১ রান নিয়ে শুরুটা ভালোই করে অস্ট্রেলিয়া। তবে দ্বিতীয় ওভারে স্বাগতিকেরা প্রথম ধাক্কা খায় ডেভিড ওয়ার্নারের উইকেটে হারিয়ে, কটরেলের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার ফেরেন ৬ বলে ১৪ রান করে। একই ওভারের শেষ বলে আবার সফল কটরেল।
৩ রান করা মিচেল মার্শকেও ফেরান এই পেসার। ২১ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া অস্ট্রেলিয়াকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন ক্যামেরন গ্রিন ও ওপেনিং থেকে চারে নেমে আসা অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। তবে দলীয় ৫৬ রানে এই জুটি ভাঙেন আলজারি জোসেফ, ফেরান ১০ বলে ১৪ রান করা গ্রিনকে।
কোনো রান করার আগেই দ্রুত ফিরে যান গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও টিম ডেভিড। ৫৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে শুরু করে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিং। ওয়েডকে সঙ্গে নিয়ে এরপর দলকে বিপর্যয় থেকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন ফিঞ্চ। এ দুজনের ব্যাটে একপর্যায়ে জয়ের সুবাস পেতে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। ফিঞ্চ-ওয়েডের ব্যাটেই ১৩তম ওভার শেষে দলের সংগ্রহ ১০০ পার হয়।
শেষ ৪২ বলে অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন ছিল ৪৮ রান। তবে দলীয় ১২৭ রানে ৫৮ রান করা ফিঞ্চ ফিরে গেলে চাপ বাড়ে এখনকার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। ৫৬ বলে ৬৯ রানের জুটি গড়েন ফিঞ্চ–ওয়েড। শেষ ২ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৫ রান। অস্ট্রেলিয়ার যখন ৮ বলে ১৩ রান প্রয়োজন, তখন ফিরে যান প্যাট কামিন্সও (৪)। ম্যাচের উত্তেজনাও তখন চরমে ওঠে। শেষ পর্যন্ত তো ম্যাচটি নিজেদের হাত থেকে ফেলেই দেয় ক্যারিবীয়রা।
টসে হেরে এর আগে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই ধাক্কা খায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নিজের প্রথম বলেই জনসন চার্লসকে (৩) বোল্ড করেন জশ হ্যাজলউড। শুরুতে উইকেট হারিয়েও অবশ্য পাওয়ারপ্লেতে রানের গতি কমায়নি উইন্ডিজ।
দলীয় ৪৮ রানে ফের অতিথিদের ধাক্কা দেন হ্যাজলউড, ৯ বলে ১২ রান করা ব্র্যান্ডন কিংকে নিজের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত করেন এই পেসার। দুই ব্যাটসম্যানকে হারানোর পর রানের গতিও কমে আসে উইন্ডিজের।
পরের ২৩ বলে আসে মাত্র ১৮ রান। এর মাঝে থিতু হওয়া ওপেনার কাইল মেয়ার্সও বিদায় নেন। ৩৬ বলে ৩৯ রান করা মেয়ার্সকে দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন কামিন্স।
৬৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটিং লাইনআপ। এরপর শুরু হয় নিয়মিত বিরতিতে ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়া। দলীয় সংগ্রহে ২ রানের বেশি যোগ করতে পারেননি অধিনায়ক নিকোলাস পুরান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান তখন ৭৫।
ব্যাট হাতে হাঁসফাঁস করতে থাকা রেইফারকে (২৩ বলে ১৯ রান) ফিরিয়ে দেন গ্রিন।
১৫.১ ওভারে গিয়ে ১০০ পার হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ। দুই ওভারে দুই ছক্কা মেরে কিছুটা আগ্রাসী হওয়ার চেষ্টা করা জেসন হোল্ডারকে ফিরিয়ে উইন্ডিজ ব্যাটিংকে কোণঠাসা করে ফেলেন কামিন্স।
১০১ রানে দলটি হারায় ৬ উইকেট। শেষ দিকে ওডিন স্মিথের ১৭ বলে ২৭ রানে ভর করে শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ১৪৫ রান করে উইন্ডিজ। ৩৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন হ্যাজলউড। ২টি করে উইকেট নেন স্টার্ক ও কামিন্স।