রেকর্ড ৭৫৪ রানের ম্যাচে প্রোটিয়াদের বড় জয়
প্রথমে কুশল মেন্ডিস, এরপর চারিত আসালাঙ্কা হয়ে দাসুন শানাকা—বেশ ঝোড়োগতিতেই ব্যাট চালিয়ে গেছেন শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু যে পথ সোয়া চার শ মাইল দূরের, সে পথে ঘণ্টায় দেড় শ মাইল গতিতে ছুটতে যে লম্বা দমও লাগে!
দক্ষিণ আফ্রিকার বানিয়ে দেওয়া ৪২৮ রানের পথ পাড়ি দিতে সেই দমটাই ছিল না শ্রীলঙ্কার। রান তোলার গতি ভালো থাকলেও কিছুক্ষণ পরপর উইকেট হারিয়ে শেষ পর্যন্ত ৩২৬ রানে থেমেছে শানাকাদের পথচলা।
দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কাকে ১০২ রানে হারিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। যে জয়ে মিশে আছে দ্রুততম সেঞ্চুরি, সর্বোচ্চ দলগত সংগ্রহ আর এক ইনিংসে তিন সেঞ্চুরির বিশ্বকাপ রেকর্ড।
রান তাড়ায় নামা শ্রীলঙ্কার পথটা যে বেশ কঠিন, সেটা বোঝা গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংসের পরপরই। বিশ্বকাপে ৩২৭ রানের বেশি তাড়া করার রেকর্ড কারও নেই, শ্রীলঙ্কার সফল তাড়া আরও কম—৩১২। এই যখন পেছনের দৃষ্টান্ত, শানাকাদের সামনে তখন ৪২৯ রানের লক্ষ্য। দুই ওপেনার পাতুম নিশাঙ্কা ও কুশল পেরেরা মোটে ৭ রান করে ফিরে যাওয়ার পর যে লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় এভারেস্টসম। তারপরও চেষ্টা করে গেছেন মেন্ডিস, আসালাঙ্কারা।
প্রথমে লুঙ্গি এনগিডি আর মার্কো ইয়ানসেনদের ওপর ঝড় বইয়ে দিয়ে ২৫ বলেই ৫০ তুলে ফেলেন মেন্ডিস। শ্রীলঙ্কাও পেয়ে যায় ১০ ওভারে ২ উইকেটে ৯৪ রানের ভালো সংগ্রহ। কিন্তু মেন্ডিস ৮ ছয় ৪ চারে ৪২ বলে ৭৬ রান করে আউট হতেই পথ হারিয়ে ফেলে শ্রীলঙ্কা। যে পথে আসালাঙ্কা ৬৫ বলে ৭৯ আর অধিনায়ক শানাকা ৬২ বলে ৬৮ রান তুললেও জয়ের মাইলফলকে আর পৌঁছাতে পারেননি তাঁরা।
ম্যাচটা শ্রীলঙ্কার নাগাল থেকে বের করে নিয়েছিলেন আসলে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরাই। টস হেরে ব্যাট করতে নামা প্রোটিয়ারা দ্বিতীয় ওভারেই হারায় অধিনায়ক টেম্বা বাভুমার উইকেট। ধাক্কা ওই পর্যন্তই। রেসি ফন ডার ডুসেনকে নিয়ে কুইন্টন ডি ককের দ্বিতীয় উইকেট জুটির শুরুটা ছিল সতর্কতার সঙ্গে। তবে একবার থিতু হতেই হাত খুলতে শুরু করেন দুজনে। প্রথম ১০ ওভারে ৪৮ রান তোলা দক্ষিণ আফ্রিকা ২০ ওভার শেষে পৌঁছে যায় ১১৮ রানে, ৩০ ওভার শেষে ২০৬-এ।
৩১তম ওভারে পাতিরানাকে দুই চার মেরে ৮৩ বলে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম সেঞ্চুরিতে পৌঁছান ডি কক। ১২ চার ও ৩ ছয়ে ১০০ ছোঁয়ার পরের বলেই অবশ্য ডি কক আউট হয়ে যান। আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ের ৩ নম্বরে থাকা ডুসেন ব্যক্তিগত তিন অঙ্কে পৌঁছান ১০৩ বলে। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানও অবশ্য সেঞ্চুরির পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি (১১০ বলে ১০৮)।
ডি ককের পর ডুসেনও যখন ফেরেন, দক্ষিণ আফ্রিকার রান ৩৭.১ ওভারে ৩ উইকেটে ২৬৪। এখান থেকেই প্রোটিয়াদের ইনিংস চার শর দিকে নিয়ে যাওয়ার কাজটি করেন মার্করাম ও ডেভিড মিলার। ৩৪ বলে ৫০ ছোঁয়ার পর লঙ্কান বোলারদের জন্য ত্রাসে পরিণত হন মার্করাম। পাতিরানা, মাদুশঙ্কার বলে একের পর এক বাউন্ডারি মেরে পরের ১৪ বলেই তুলে নেন পরের ৫০। ইনিংসের ৪৬তম ওভারের পঞ্চম বলে মাদুশঙ্কাকে ছয় মেরে ৪৯ বলে পূর্ণ করেন সেঞ্চুরি। বিশ্বকাপ ইতিহাসে এটিই দ্রুততম সেঞ্চুরি।
এত দিন দ্রুততম ছিল ২০১১ বিশ্বকাপে বেঙ্গালুরুতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আয়ারল্যান্ডের কেভিন ও’ব্রায়েনের ৫০ বলে সেঞ্চুরি। ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে এইডেনের সেঞ্চুরিটি তৃতীয় দ্রুততম। ৩১ বলে সেঞ্চুরি নিয়ে সবার ওপরে এবি ডি ভিলিয়ার্স, ৪৪ বলে সেঞ্চুরি মার্ক বাউচারের। মার্করামের রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরিটি থামে মাদুশঙ্কার লো ফুল টসে কাসুন রাজিতার হাতে ক্যাচ দিয়ে। ১৪ চার ৩ ছয়ের ইনিংসটি থামে ৫৪ বলে ১০৬ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ শেষ পর্যন্ত চার শর ওপরে নিয়ে যান ডেভিড মিলার ও মার্কো ইয়ানসেন। মিলার ২১ বলে ৩৯ আর ইয়ানসেন ৭ বলে ১২ রানে অপরাজিত থাকেন।
কুইন্টন ডি কক আর রেসি ফন ডার ডুসেনের পর মার্করাম—তিন সেঞ্চুরিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রেকর্ড গড়েছে প্রোটিয়ারা। বিশ্বকাপে এর আগে সর্বোচ্চ ৪১৭ রান ছিল অস্ট্রেলিয়ার, ২০১৫ সালে পার্থে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হয়েছিল সেই রেকর্ড। এক ইনিংসে তিন সেঞ্চুরির ঘটনাও এটিই প্রথম।
যে রান শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার নাগালের বাইরেই রয়ে গেছে। জিততে না পারলেও দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে মিলে একটা রেকর্ডে ঠিকই নাম লিখিয়ে নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। গত বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে দুই দল মিলিয়ে উঠেছিল ৭১৪ রান। সেটিই এত দিন বিশ্বকাপে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। আজ শ্রীলঙ্কা-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে উঠেছে মোট ৭৫৪ রান।