রাঁচিতে ‘রুট’-এ ফিরল ইংল্যান্ড
উচ্ছ্বাস খুব একটা দেখা গেল না, এমনকি মুখে চওড়া হাসিও নয়। দুর্দান্ত এক কাভার ড্রাইভে তিন অঙ্কে পৌঁছানোর পর শুধু হেলমেট খুলে ব্যাট তুললেন জো রুট। সেঞ্চুরির পর জো রুটের এমন সাদামাটা উদ্যাপনের কারণ কী হতে পারে?
সিরিজের আগের তিন টেস্টের ৬ ইনিংসে ব্যাট হাতে তাঁর সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল ২৯ রানের। এর মধ্যেই আবার রাজকোট টেস্টের প্রথম ইনিংসে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে আউট হওয়ার পর পড়েছিলেন তীব্র সমালোচনার মুখে। রাঁচি টেস্টের প্রথম দিনই আজ ব্যাট হাতে সেই সমালোচনার জবাব দেওয়ার পর হয়তো আর বাড়তি কিছু করার দরকার মনে করেননি রুট।
সাদামাটা উদ্যাপনের কারণ যেটাই হোক, রুটের দুর্দান্ত এই সেঞ্চুরিতেই রাঁচিতে প্রথম দিনটা ভারতের হতে দেয়নি ইংল্যান্ড। আগের দুই টেস্টের তুলনায় ব্যাটিংয়ের জন্য কিছুটা কঠিন উইকেটে ভারতীয় বোলারদের দারুণ বোলিংয়ের পরও ইংল্যান্ড প্রথম দিন শেষে তুলেছে ৭ উইকেটে ৩০২ রান। রুটের সঙ্গে ৩১ রান নিয়ে আগামীকাল ব্যাটিংয়ে নামবেন ওলি রবিনসন।
টেস্ট ক্যারিয়ারে এটি রুটের ৩১তম সেঞ্চুরি, ভারতের বিপক্ষে দশম। ভারতের বিপক্ষে টেস্টে তাঁর চেয়ে বেশি সেঞ্চুরি নেই আর কোনো ব্যাটসম্যানের। ইংল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি ৫০ বা এর চেয়ে বড় ইনিংস খেলার রেকর্ড (৯১ বার) এখন রুটের। ছাড়িয়েছেন অ্যালিস্টার কুককে (৯০)।
রুটের আজকের সেঞ্চুরিটা অবশ্য আরও কিছু কারণে আলাদা। ২১৯ বল লেগেছে রুটের তিন অঙ্ক ছুঁতে, যা তাঁর ক্যারিয়ারের তৃতীয় মন্থরতম সেঞ্চুরি। ‘বাজবল’ যুগে কোনো ইংলিশ ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে এমন সেঞ্চুরি দেখাও বিরল ঘটনা। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওল্ড ট্রাফোর্ডে ২০২২ সালে বেন ফোকসের ২০৬ বলে সেঞ্চুরিটি ছিল বাজবল যুগে সবচেয়ে ধীরগতির। রুট আজ সেঞ্চুরি করেছেন ফোকসের চেয়ে বেশি ধীরগতিতে!
আসলে পুরো ইনিংসেই রুট আজ ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়েছেন। রিভার্স সুইপ খেলেছেন মাত্র ১টি, চার মেরেছেন মাত্র ৯টি। এমন মাটি কামড়ানো ইনিংসের প্রশংসাও হচ্ছে। তাঁর সেঞ্চুরির আগেই এক্সে এবি ডি ভিলিয়ার্স লিখেছেন, ‘এই কৌশলের রুটই আপনাকে টেস্ট জেতাবে। গ্লু (মাটি কামড়ে পড়ে থাকা) মুড। অন্যরা বাজবল খেলুক।’
রুটের দিনের শুরুর নায়ক অবশ্য অন্যজন—তিনি আকাশ দীপ। জীবনের লড়াইয়ে জিতে, ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেকে দিনের পর দিন প্রমাণ করে ভারতের হয়ে অভিষেক হয়েছে তাঁর। ইংল্যান্ডের টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকেই আউট করে ক্যারিয়ারে দুর্দান্ত শুরুও পেয়েছেন এই পেসার। আকাশ দীপের তোপে ইংল্যান্ড ৫৭ রানেই ৩ উইকেট হারানোর পর জনি বেয়ারস্টো ও রুট মিলে গড়েন ৫২ রানের জুটি।
বেয়ারস্টো আউট হয়ে যান ৩৫ বলে ৩৮ রান করে, রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে সুইপ করতে গিয়ে। তাঁর উইকেট নিয়েই ইতিহাসের সপ্তম ক্রিকেটার হিসেবে কোনো নির্দিষ্ট দেশের বিপক্ষে ১০০০ রান ও ১০০ উইকেটের ‘ডাবল’ হয় অশ্বিনের।
অধিনায়ক বেন স্টোকসও উইকেটে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি। ৩ রান করে আউট হয়েছেন রবীন্দ্র জাদেজার বলে। এরপর রুট বেন ফোকসের সঙ্গে গড়েন ২৬১ বলে ১১৩ রানের জুটি। কৌশলের বাইরে গিয়ে গড়া এই জুটিই মূলত ইংল্যান্ডকে ম্যাচ ফিরিয়েছে। আর ইংল্যান্ডের দিনের শেষটাও হয়েছে বেশ ভালো। রুটের সঙ্গে ৫৭ রানের জুটিতে অবিচ্ছিন্ন রবিনসন।
রাঁচির উইকেটে স্পিনাররা বাড়তি সহায়তা পাওয়ার কথা শোনা গিয়েছিল। তবে প্রথম দিনে পড়া ৭ উইকেটের ৫টিই নিয়েছেন দুই পেসার আকাশ দীপ ও সিরাজ। সিরাজ নিয়েছেন ২ উইকেট। ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন এক্সে লিখেছেন, ‘রাঁচির উইকেটে ২৭৫ রানই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক স্কোর। ইংল্যান্ড তুলেছে ৩০২, হাতে এখনো ৩ উইকেট।’
তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী কতটা সত্যি হয়, সেটা বোঝা যাবে ভারত ব্যাটিংয়ে নামলেই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস :৯০ ওভারে ৩০২/৭ (রুট ১০৬*, ফোকস ৪৭, ক্রলি ৪২, বেয়ারস্টো ৩৮, রবিনসন ৩১*, হার্টলি ১৩, ডাকেট ১১, স্টোকস ৩, পোপ ০; আকাশ ১৭-০-৭০-৩, সিরাজ ১৩-৩-৬০-২, জাদেজা ২৭-৭-৫৫-১, অশ্বিন ২২-১-৮৩-১, জয়সোয়াল ১-০-৬-০, কুলদীপ ১০-৩-২১-০)।
* ১ম দিন শেষে