‘হুইস্কি অন দ্য রকস...ঢুলুঢুলু চোখ’—রঞ্জিতে আম্পায়ারিং নিয়ে মনোজ তিওয়ারি
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ১০ ফেব্রুয়ারি পোস্টটি করেছিলেন মনোজ তিওয়ারি, ‘আগামী মৌসুমের সূচি থেকে রঞ্জি ট্রফি সরিয়ে নেওয়া উচিত। এ টুর্নামেন্টের অনেক কিছুই ঠিক নেই...এটা গুরুত্ব ও আকর্ষণ হারাচ্ছে, যেটা হতাশার।’
রোববার রঞ্জিতে বাংলার শেষ ম্যাচটি খেলার মধ্য দিয়ে সব ধরনের ক্রিকেট ছাড়েন মনোজ তিওয়ারি। ভারতের জাতীয় দলে খেলা ৩৮ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রঞ্জি ট্রফির সমালোচনা করায় তাঁকে ম্যাচ ফির ২০ শতাংশ অর্থ জরিমানা করা হয়েছে। তাই বলে তিওয়ারি চুপ করে নেই।
১৪৮টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা তিওয়ারিকে সোমবার কলকাতা স্পোর্টস জার্নালিস্ট ক্লাবে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ভারতের হয়ে ১২ ওয়ানডে এবং ৩ টি-টোয়েন্টি খেলা তিওয়ারি সেই অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘তরুণদের মানসিকতা আইপিএল-কেন্দ্রিক। আইপিএলে না খেললে দুবাই কিংবা অন্য জায়গায় ছুটি কাটাতে যায় অনেকেই। এতে রঞ্জি ট্রফির গুরুত্বটা ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে।’ শুধু তা–ই নয়, তিওয়ারি এ সময়ের ক্রিকেটারদের নিয়ে সোজাসাপটাই বলেছেন, ‘তরুণেরা নিজেদের স্ট্রাইক রেট বাড়িয়ে কিংবা দৃষ্টি আকর্ষণ করে আইপিএলের চুক্তি পেতে চায়। তাদের দোষ নেই। এখন পরিস্থিতিটাই এমন। রঞ্জি তার জৌলুশ হারিয়েছে।’
দুই দশকেরও বেশি লম্বা ক্যারিয়ারে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৩০ সেঞ্চুরিসহ ১০ হাজার ১৯৫ রান করেছেন তিওয়ারি। ভারতের প্রধান প্রথম শ্রেণির টুর্নামেন্ট রঞ্জি নিয়ে আরও কথা বলেছেন তিওয়ারি। গতকাল তাঁর সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছেন ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
সেখানেও তিওয়ারি বলেছেন, আইপিএলে চুক্তি আছে যাঁদের, রঞ্জিকে তাঁরা অতটা গুরুত্ব দিয়ে দেখে না, ‘(আইপিএলে চুক্তি পাওয়ার পর) খেলোয়াড়েরা এটা (রঞ্জি) অতটা গুরুত্ব দেয় না। ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার শুরুতে আমাদের সিরিয়াস হতে বলা হয়েছিল। কিন্তু এখন ঘরোয়া ক্রিকেটে আর সে খিদে দেখি না। আইপিএলে সুযোগ পাওয়া ক্রিকেটাররা (রঞ্জিতে) এসে একভাবেই খেলে। এটা খারাপ কিছু না, কিন্তু স্টাইলটা একই। অথচ রঞ্জি টেস্ট ক্রিকেটার তৈরি করে আর আইপিএল একজন খেলোয়াড়কে “ইনটেন্ট” শেখায়।’
সাক্ষাৎকারে তিওয়ারির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে আর কী কী বিষয় তাঁকে ভাবায়। উত্তরে বলেছেন, ‘আম্পায়ারিং আমার প্রধান দুশ্চিন্তার জায়গা। ঘরোয়া ক্রিকেটে আম্পায়ারিংয়ের মান বাজে। বিসিসিআই এ ব্যাপারে কীভাবে উন্নতি করতে পারে, সেটা নিয়ে ভাবা উচিত।’
তিওয়ারির কাছে বাজে আম্পায়ারিংয়ের ব্যাপারটা একটু খোলামেলাভাবে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তিনি বলেছেন, ‘একটি ম্যাচে এক অফ স্পিনার প্রতিটি ডেলিভারির সময় মুখ দিয়ে শব্দ করছিল। অনেক বোলারই এমন করেন। সেটা সম্ভবত ডেলিভারিতে আরেকটু এনার্জি দিতে। আর সেটার উচ্চারণ হয় “উহহহ...।” কিন্তু সেই বোলারটি বলছিল “নোওওও...।” প্রথমে পাত্তা দিইনি। পরে যখন দেখলাম ইচ্ছা করেই এভাবে টানা বলে যাচ্ছে, তখন আম্পায়ারের কাছে অভিযোগ করি। আম্পায়ার বললেন, বোলারের “নো” বলা তিনি শোনেননি!’
তিওয়ারি সেই ম্যাচেরই উদাহরণ টেনে আরও বলেছেন, ‘একই ম্যাচে প্রতিটি ডেলিভারির পর নো বল হয়েছে কি না, সেটি বোঝার দায়িত্বটা তৃতীয় আম্পায়ারকে দিচ্ছিলেন মাঠের আম্পায়ার। ব্যাপারটা জানতে চাইলে আম্পায়ার বললেন, “বোলারের পপিং ক্রিজে চোখ রাখব কীভাবে? বোলারের পা কোথায় পড়ছে, সেদিকে চোখ রাখলে সামনে (ব্যাটসম্যানের ক্রিজে) কী হচ্ছে, সেটা তো দেখতে পারব না।” আবার অনেক সময় দেখা যায়, ব্যাটসম্যানের ব্যাটে বল লাগার শব্দ আম্পায়ার শুনতে পাননি, অথচ শব্দটা শুনেছে গোটা স্টেডিয়াম!’
তিওয়ারি এ ব্যাপারে ভারতের ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিসিআই) কোনো পরামর্শ দিতে চান কি না, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। উত্তরে বলেছেন, ‘আমি অবশ্যই এটা করব। খেলোয়াড়দের ডোপ পরীক্ষা করা হলে সেটা ঘরোয়া ক্রিকেটের আম্পায়ারদেরও করা উচিত। অনেকবারই হ্যাংওভার নিয়ে আম্পায়ারদের মাঠে ঢুকতে দেখেছি। তাঁদের দেখে ঘুমে ঢুলুঢুলু লেগেছে। এমন পরিস্থিতিতে তাঁরা ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করবেন কীভাবে? জিজ্ঞাসা করেছি, “স্যার, গত রাতে কি পানটান করেছেন?” উত্তরে বলেছেন, “হুইস্কি অন দ্য রকস (বরফকুচির ওপর ঢালা হুইস্কি)।” মৌসুম শুরুর আগে সব আম্পায়ারের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করা উচিত।’
ক্রিকেট ছাড়ার পর এই খেলায় নিজের আক্ষেপও জানিয়েছেন তিওয়ারি। ভারতের হয়ে টেস্ট ক্রিকেট খেলতে পারেননি। বলেছেন, ‘একদিন মাহি ভাইকে (মহেন্দ্র সিং ধোনি) জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ২০১১ সালে সেঞ্চুরি করেও কেন একাদশ (ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে) থেকে বাদ পড়েছিলাম? রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলির মতো নায়ক হওয়ার সুযোগ ছিল আমার। এখন সবাইকে অনেক সুযোগ পেতে দেখে খারাপ লাগে।’