নিউজিল্যান্ডের চারে চার, বিধ্বস্ত আফগানিস্তান
মাঝে ব্যবধান মাত্র দুই দিন। দিল্লিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক জয়ে পাওয়া আত্মবিশ্বাস নিয়ে চেন্নাইয়ে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল আফগানিস্তান। কিন্তু এ দুদিনের ব্যবধানে দেখা গেল বিপরীত এক দলকে। নিউজিল্যান্ডের দেওয়া ২৮৯ রানের লক্ষ্যে আফগানিস্তান গুটিয়ে গেছে ১৩৯ রানেই। ফিল্ডিংয়ে বেশ কয়েকটি ক্যাচ হাতছাড়া করার মাশুল দিতে হয়েছে আফগানদের, সেটি না হলে নিউজিল্যান্ডকে বেশ আগেভাগেই আটকাতে পারত তারা। ব্যাটিংয়ে অবশ্য দাঁড়াতেই পারেনি আফগানিস্তান, গুটিয়ে গেছে মাত্র ৩৪.৪ ওভারের মধ্যেই। এ নিয়ে টানা চারটি ম্যাচ জিতল নিউজিল্যান্ড, বড় জয়ে তাদের নেট রানরেটও বেড়ে হয়েছে +১.৯২৩।
ইংল্যান্ডকে হারিয়ে উজ্জীবিত আফগানিস্তান টসে জিতে নেয় ফিল্ডিং, দ্বিতীয় ওভারেই উইল ইয়াংকে ফেরানোর সুযোগও আসে। তবে ফজলহক ফারুকির বলে ওঠা ক্যাচটি স্লিপে ফেলেন রহমত শাহ। ফিল্ডিংয়ের দুর্দশার যে সেটি কেবলই শুরু আফগানিস্তানের, তখন সেটি কে জানত! ম্যাচ শেষে অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদিও বলেছেন, বোলিংটা ভালো করলেও ফিল্ডিং-ই ডুবিয়েছে তাদের। আফগান বোলাররা সুযোগ তৈরি করেছিলেন, মাঝের ওভারে দ্রুত ৩ উইকেট নিয়ে নিউজিল্যান্ডকে ফেলেছিলেন বেশ চাপে। তবে সুযোগ কাজে লাগিয়ে সেখান থেকে টম ল্যাথাম ও গ্লেন ফিলিপস গড়েছেন দারুণ জুটি। দুজনকে শেষ দিকে ৩ বলের মধ্যে ফেরালেও আফগানিস্তান রান দিয়েছে ঠিকই। শেষ ৬ ওভারে নিউজিল্যান্ড তোলে ৭৮ রান। আফগানিস্তানকে নড়বড়ে করে দেয় সেটিই।
অবশ্য ওই সুযোগ হারানো বাদ দিলে শুরুটা ভালোই ছিল আফগানিস্তানের। ইতিবাচক শুরু করা ডেভন কনওয়েকে এলবিডব্লু করে আফগানিস্তানকে প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দেন আগের ম্যাচের নায়ক মুজিব উর রেহমান। এরপর আসে দ্রুত আরেকটি উইকেটের সুযোগ, এবার কেইন উইলিয়ামসনের অনুপস্থিতিতে আবার তিনে ফেরা রাচিন রবীন্দ্রর ক্যাচ মিড অনে ফেলেন অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদি।
দলে ফেরা ইয়াং ও রবীন্দ্রর জুটি এরপর নিউজিল্যান্ডকে এগিয়ে নেয়। দুজনের ৭৯ রানের জুটিতে কনওয়েকে হারানোর ক্ষতি পুষিয়ে ফেলে অনেকটাই। এরপরই নামে ধস। আফগানিস্তানের এবারের নায়ক আজমতউল্লাহ ওমরজাই। তাঁর এক ওভারে ফেরেন রবীন্দ্র ও ইয়াং। রবীন্দ্র হন বোল্ড, ইয়াং পরিণত হন বাঁ দিকে ডাইভ দিয়ে নেওয়া ইকরাম আলিখিলের দুর্দান্ত ক্যাচে। পরের ওভারে রশিদ খানের লং হপে ড্যারিল মিচেল ফিরলে চাপ বাড়ে নিউজিল্যান্ডের, সে সময় ৯ বলের মধ্যে ৩ উইকেট হারায় তারা।
১০৯ রানে ১ উইকেট থেকে ১১০ রানে ৪ উইকেট—নিউজিল্যান্ডকে চোখ রাঙাচ্ছিল খারাপ কিছু। কিন্তু টম ল্যাথাম ও গ্লেন ফিলিপস সেটি হতে দেননি। ইনিংস মেরামতের কাজটি তাঁরা করেন দারুণভাবে। সহায়তা করে আফগানদের বাজে ফিল্ডিংও। রশিদের শেষ দুই ওভারে দুবার বেঁচে যান ল্যাথাম, ৩৬ রানে মুজিবের পর ৩৮ রানে দাঁড়ানো কিউই অধিনায়কের ক্যাচ ফেলেন হাশমতউল্লাহ।
ল্যাথাম ও ফিলিপসের জুটিতে শেষ পর্যন্ত ওঠে ১৫৩ বলে ১৪৪ রান, দুজনই পান ফিফটি। মাঝের ওভারে কীভাবে জুটি বড় করতে হয়, সেটি দেখান দুজন। অবশ্য শেষ দিকে দুজনই গতি বাড়ানো শুরু করার পরই থামেন নাভিন-উল-হকের এক ওভারে। ৭৪ বলে ৬৮ রান করে বোল্ড হন ল্যাথাম, ক্যাচ তোলার আগে ৮০ বলে ৭১ রান ফিলিপসের। তবে দুই থিতু ব্যাটসম্যানকে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে হারালেও মার্ক চ্যাপম্যানের ১২ বলে ২৫ রানের ক্যামিওতে নিউজিল্যান্ড পায় ভালো স্কোর। মিচেল স্যান্টনারকে নিয়ে ১৬ বলেই ৩৩ রান যোগ করেন চ্যাপম্যান।
এমনিতেও আফগানিস্তানের ব্যাটিং টপ অর্ডারের ওপর বেশি নির্ভরশীল। রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান ভালো শুরু পেলেও এদিন বড় করতে পারেননি ইনিংস। পঞ্চম ও ষষ্ঠ ওভারে ৩ বলের মধ্যে দুজন ফেরার পরই বলা যায় লড়াই থেকে ছিটকে যায় আফগানিস্তান। নিউজিল্যান্ডের সমন্বিত বোলিং আক্রমণের সামনে একেবারেই দিশাহারা হয়ে পড়ে আফগান ব্যাটিং লাইনআপ।
চতুর্থ উইকেটে রহমত শাহ ও আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের ৫৪ রানের জুটিই হয়ে থেকেছে ইনিংসে সর্বোচ্চ। ৪৩ রানেই শেষ ৭ উইকেট হারিয়ে আফগানিস্তান গুটিয়ে গেছে দ্রুতই। খণ্ডকালীন গ্লেন ফিলিপস ছাড়া নিউজিল্যান্ডের বাকি পাঁচ বোলারই পান উইকেটের দেখা, মিচেল স্যান্টনার ও লকি ফার্গুসন নেন তিনটি করে উইকেট।