গত বছর ঠিক এ সময়েরই কথা। বিপিএলের নবম আসর সবেমাত্র শেষ হয়েছে। তার মাস তিনেক আগে অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে আসা ইংল্যান্ড দল তখন বাংলাদেশে। সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে টি-টোয়েন্টি দলটি তখন নতুন দিনের গান গাইছিল। দক্ষতা, সাহস, আত্মবিশ্বাসের অফুরান সম্ভাবনার স্লোগান সাকিবদের মুখে। মন্থরগতির টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে মুক্তির তীব্র ঘোষণা ছিল তাতে। হারলেও মেরে খেলে হারব—খেলোয়াড়দের মধ্যে ভাবনাটা ছিল এমন। এক বছর আগের সেই বদলে যাওয়ার ভাবনা থেকেই ২০ ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশের পরিবর্তনের শুরু।
পরের গল্পটা তো রেকর্ডেই আছে। ঘরের মাঠে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ধবলধোলাই। এরপর আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে বাংলাদেশ বছরটা শেষ করে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজ ড্র করে। ২০ ওভারের মারদাঙ্গা ক্রিকেটে ধারাবাহিক হওয়াটা বেশ কঠিনই। কঠিন কাজটাই এক বছর ধরে করছেন নাজমুল-হৃদয়রা। ১-১–এ ঝুলতে থাকা চলমান শ্রীলঙ্কা সিরিজের শেষ ম্যাচের আগেও দলের একটাই চাওয়া—টি-টোয়েন্টিতে এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখা।
ঘরের মাঠে বাংলাদেশের পছন্দের সংস্করণের আলোচনায় ওয়ানডেই এগিয়ে থাকবে। কয়েকটি সিরিজ বাদ দিলে ২০১৫ সাল থেকেই এই সংস্করণে বাংলাদেশ বেশ সফলই বলা যায়। প্রতিপক্ষ যে দলই হোক, ৫০ ওভারের ক্রিকেটে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ কঠিন দল। একই সুখ্যাতি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ক্ষেত্রেও অর্জন করতে চায় বাংলাদেশ। উপায় একটাই, ঘরের মাঠে একের পর এক সিরিজ জয়। সেটি করতে পারলে বাংলাদেশ দল দ্বিপক্ষীয় টি-টোয়েন্টিতে অনেক ‘প্রথমেরই’ জন্ম দেবে। এই যেমন আজ সিলেটে সিরিজের শেষ ম্যাচটা জিতলেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের সাধ পাবে বাংলাদেশ।
লঙ্কানদের বিপক্ষে গত ১০ বছরে পাঁচটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। অতীত রেকর্ডে বাংলাদেশের তেমন সুখস্মৃতি নেই। সর্বশেষ ২০১৭ সালে ১-১–এ সিরিজ ড্র–ই প্রাপ্তির খাতায় সাফল্য বলে বিবেচিত। এবার ইতিহাসটাকে নতুন করে লেখার সুযোগ পাচ্ছেন নাজমুলরা। অবশ্য যে সুযোগের কথা বলা হচ্ছে, তা ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারলে প্রথম দুই ম্যাচেই বাংলাদেশের সিরিজ জয় নিশ্চিত হতে পারত।
সিরিজের প্রথম ম্যাচের কথাই ধরুন। ১৯ রান অতিরিক্ত দেওয়া সেদিন শ্রীলঙ্কার রান হলো ২০৬। দুই ফিনিশার মাহমুদউল্লাহ ও জাকের আলীর রাজকীয় ব্যাটিংয়ের পরও সে ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছে ৩ রানে। প্রথম ম্যাচের ভুল শুধরে দ্বিতীয় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ালেও সিরিজের স্কোরলাইন কিন্তু ১-১–ই। অথচ প্রথম দুই ম্যাচজুড়ে ২২ গজে ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়ায় শ্রীলঙ্কার চেয়ে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। এবার শেষ ম্যাচেও সেটি ধরে রাখার পালা।
অবশ্য ক্রিকেটীয় যুক্তি বলে, সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে যা হয়েছে, তা ভুলে যাওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। সিরিজের প্রথম দুটি ম্যাচ শুরু হয়েছে সন্ধ্যা ছয়টায়। সময় যত গড়িয়েছে, শিশিরভেজা বল ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারক হয়ে উঠেছে। আর নাজমুলের কী কপাল, দুটি ম্যাচেই টসে জিতেছেন। আর দুটি ম্যাচেই পরে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিতে তাঁকে একটুও ভাবতে হয়নি। আজ সিরিজের শেষ ম্যাচটা শুরু হবে বেলা তিনটায়। দুই দলের কেউই তাই শিশির নিয়ে ভাবছে না। টসের ভূমিকাও অতটা থাকছে না। উইকেট আগের দুই ম্যাচের তুলনায় শুষ্ক থাকবে। যা দুই দলের স্পিনারদেরই প্রতিযোগিতায় নিয়ে আসবে।
কাগজে–কলমে স্পিন দক্ষতায় শ্রীলঙ্কারই এগিয়ে থাকার কথা। দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে দলটির অধিনায়ক ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা আজ একাদশে ফিরবেন। তবে বাঁ পায়ে চোট পেয়ে আজকের ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছেন শ্রীলঙ্কার পেসার মাতিশা পাতিরানা। প্রথম দুই ম্যাচে তেমন কিছু করতে না পারা মহীশ তিকশানাও আজ কার্যকর হয়ে উঠতে পারেন। বাংলাদেশের স্পিনাররাও নিজেদের চেনাতে চাইবেন। বিশেষ করে শেখ মেহেদী হাসান, প্রথম দুই ম্যাচেই যিনি রান দিয়েছেন ৩০-এর বেশি, উইকেট মাত্র ১টি। শুষ্ক কন্ডিশন তাঁকেও কার্যকর করে তুলবে। রিশাদ হোসেনের লেগ স্পিন তো আছেই। ব্যাটিং আর পেস বোলিংয়ের শক্তি বোঝাতে যে নিয়ামক আছে, এই সিরিজে সব খানেই শ্রীলঙ্কার চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ।
নাজমুলদের ভাবনায় আজ তাই সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচের মতো দাপুটে জয় ছাড়া অন্য কিছু থাকার কথা না।