‘বাংলাদেশের কাছে ভারতের হারে শান্তি পাচ্ছে পাকিস্তানিরা’, বললেন শোয়েব
এশিয়া কাপের শুরু থেকে ভারত ও বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ছিল বিপরীতমুখী। তাই এই দুই দলের নিয়ম রক্ষার ম্যাচে অসম লড়াই দেখছিলেন অনেকে। হয়তো ভেবেছিলেন, দুর্দান্ত ছন্দে থাকা ভারতের সামনে পাত্তাই পাবে না বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত তেমনটা হয়নি। ঘুরে দাঁড়িয়ে দারুণ এক জয় আদায় করে নিয়েছে সাকিব আল হাসানের দল। এই জয়ের পর বাংলাদেশকে কৃতিত্ব দিচ্ছেন সাবেক দুই পাকিস্তানি ক্রিকেটার শোয়েব আখতার ও রমিজ রাজা।
শোয়েবের কাছে ভারতের জন্য এই হার ‘লজ্জাজনক’। পাশাপাশি এই জয়ে পাকিস্তানিরা খুশি হবেন বলেও মন্তব্য করেছেন সাবেক এ ফাস্ট বোলার। অন্যদিকে, রমিজ এই হারকে ভারতের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবেই দেখছেন। পাকিস্তানের সাবেক এই ব্যাটসম্যান তানজিম হাসান, সাকিব ও তাওহিদ হৃদয়েরও দারুণ প্রশংসা করেছেন। তবে বাংলাদেশের জয়ের আসল নায়ক যে সাকিব আল হাসান, সেটা জানাতেও ভুল করেননি রমিজ।
বাংলাদেশের কাছে ভারতের হারে পাকিস্তানিরা আনন্দিত জানিয়ে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে শোয়েব বলেছেন, ‘ভারত কাদের কাছে ম্যাচ হেরেছে? বাংলাদেশের কাছে, যাদের ভারতের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বলা না গেলেও প্রতিদ্বন্দ্বী বলায় যায়। লজ্জাজনক হার। লোকজন পাকিস্তানের সমালোচনা করছে। বলছে, পাকিস্তান শ্রীলঙ্কার কাছ থেকে মার খেয়েছে। শ্রীলঙ্কা কিন্তু ভালো দল। বাংলাদেশও খারাপ দল নয়, ওরাও ভালো দল। তারাও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে। বিশ্বমঞ্চে বড় বড় দেশকে চ্যালেঞ্জ জানায়। ওরা ভারতকে দারুণভাবে হারিয়েছে। এতে কিছুটা শান্তি হয়তো আমার মতো অন্য পাকিস্তানিরাও পাচ্ছে। ভারত অন্তত বাংলাদেশের কাছে তো হারল। ভারতের জন্য এটা একটা সতর্কবার্তা। পাকিস্তানকে হারিয়েই নিজেদের সেরা ভাবার সুযোগ নেই। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ম্যাচটাও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিল।’
বিশ্বকাপে ফেবারিট-তত্ত্বের সমালোচনা করে শোয়েব আরও বলেছেন, ‘ভারত-পাকিস্তানকে নিয়ে আমরা বলছি, এ দুই দল ফেবারিট। আর আছে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড। এই চার দলের মধ্যে দুই দল ফাইনাল খেলবে। এর বাইরে আর কিছু হবে না। ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয়। ভবিষ্যদ্বাণী আপনারা নিজেদের কাছেই রাখুন। ভারত এত বড় দল, কিন্তু বাংলাদেশের কাছে হারল। তারা কিন্তু ভালো খেলেছে, অথচ শুবমানের সেঞ্চুরিও কাজে এল না। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে কৃতিত্ব দিতে হয়। তারা জানিয়ে দিয়েছে, বিশ্বকাপে আমরাও আছি।’
শোয়েবের মতো রমিজ রাজাও এই হারকে ভারতের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবেই দেখছেন। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে রমিজ বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ভারতকে সতর্কবার্তা দিল। মানছি, প্রধান খেলোয়াড়েরা খেলতে পারেননি। কিন্তু এরপরও ফাইনালের আগে জেতা প্রয়োজন ছিল। এটা অবশ্য নিয়ম রক্ষার ম্যাচ। যদিও এ ধরনের ম্যাচের ভালো ব্যাপার হচ্ছে, বেঞ্চের খেলোয়াড়দের সুযোগ মেলে। বাংলাদেশও বেঞ্চের খেলোয়াড়দের পরীক্ষা করেছে, যেখানে দু-তিনজন অসাধারণ পারফরম্যান্স করে দেখিয়েছে।’
অভিষিক্ত তানজিমে দারুণ মুগ্ধ রমিজ বলেছেন, ‘তানজিমের কথা বলতে হয়। ওদের ওপেনিং বোলার। কী অসাধারণ আউট সুইং সে করেছে! বলে গতি ছিল এবং তার শরীরী ভাষাও দারুণ ছিল। রোহিত শর্মার উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি টপ অর্ডারকে সে বড় ধাক্কা দিয়েছে। এরপর তারা শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছে এবং ম্যাচটা জিতে নিয়েছে।’
অধিনায়ক সাকিবেরও প্রশংসা করেছেন রমিজ, ‘বাংলাদেশের জয় এ জন্যও সম্ভব হয়েছে যে এখানকার উইকেট এমন ছিল, যেমনটা ঢাকার হয়ে থাকে। স্লো-টার্নার উইকেট। আর এ ধরনের উইকেটে স্পিনারদের কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে সাকিবের অধিনায়কত্বও বেশ ভালো হয়। স্পিনাররা এখানে বেশ ভালো খেলেছে। চাপ তৈরি করেছে। শুরুতে তানজিমও দ্রুত উইকেট নিয়ে চাপে ফেলেছে ভারতকে। এটা রান তাড়ার জন্য কঠিন উইকেট ছিল। শুবমন গিল না দাঁড়াতে পারলে লড়াই আরও কঠিন হয়ে যেত ভারতের জন্য। এ জয়ের পর বাংলাদেশ আনন্দ নিয়েই দেশে ফিরব। নিয়মরক্ষার হোক আর যা–ই হোক, ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ জেতা অনেক বড় ব্যাপার।’
ব্যাটসম্যান সাকিবকে কৃতিত্ব দিয়ে রমিজ আরও বলেছেন, ‘ভারতকে হারানোর এই কাজ সম্ভব হয়েছে সাকিব আল হাসানের অসাধারণ ব্যাটিংয়ের জন্যও। সে দারুণ পেশাদার। আজ সে দেখিয়েছে সে কত বড় অলরাউন্ড ক্রিকেটার।’
সাকিবের পাশাপাশি হৃদয়কেও কৃতিত্ব দিয়েছেন রমিজ। হৃদয়ের বিশ্ব ক্রিকেটে বড় তারকা হয়ে ওঠার সামর্থ্য আছে জানিয়ে রমিজ বলেছেন, ‘হৃদয়কে আমি বলব তাদের দারুণ আবিষ্কার। আমার মনে হয়, তাকে ওপরেই খেলানো উচিত। ছয় নম্বরে গিয়ে সে ফেঁসে যায়। টেল-এন্ডারদের (শেষের ব্যাটসম্যানরা) সঙ্গে তাঁকে খেলতে হয়। সে টেলের সঙ্গে খেলার মতো খেলোয়াড় নয়। সে সামনের সারির ব্যাটসম্যান হতে পারে। তার ডিফেন্স ভালো, সিঙ্গেলসও বের করতে পারে। তার টেম্পারারেট বেশ ভালো। ভবিষ্যতে সে অনেক ভালো করবে। শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়, বিশ্ব ক্রিকেটে সে সুপারস্টার হতে পারবে।’