মায়ের জন্যই রুমানার এমন ফেরা

আবারও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরছেন রুমানা আহমেদশামসুল হক

মেয়েদের জাতীয় দলের হয়ে সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। সর্বশেষ ওয়ানডে ম্যাচ খুঁজতে গেলে পিছিয়ে যেতে হবে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত। লম্বা সময় জাতীয় দলের বাইরে থাকা অলরাউন্ডার রুমানা আহমেদ এ মাসে শ্রীলঙ্কায় শুরু হতে যাওয়া নারী এশিয়া কাপ দিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে যাচ্ছেন। ৩৩ বছর বয়সী এই নারী ক্রিকেটারের প্রত্যাবর্তনের গল্পে মূল চরিত্র তাঁর মা।

গত বছরের মে মাসে শ্রীলঙ্কা সিরিজের দল থেকে বাদ পড়ার পর হতাশ হয়ে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন রুমানা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘নো মোর ক্রিকেট…’ লিখে স্ট্যাটাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু রুমানার মা চেয়েছেন, ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে নয়, তাঁর মেয়ে ক্রিকেটকে বিদায় বলুক মাঠ থেকে। এরপর মায়ের ইচ্ছাতেই রুমানা নতুন উদ্যমে ফেরার লড়াইয়ে নামেন। এবারের মেয়েদের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন। ৬ ইনিংসে ব্যাট করে ২৪১ রানের পাশাপাশি ৯ ইনিংসে বল করে উইকেট নিয়েছেন ১৭টি। দাপুটে এই পারফরম্যান্সের পুরস্কার হিসেবেই প্রায় দেড় বছর পর আবার জাতীয় দলে ডাক পেলেন রুমানা।

দিন দুয়েক আগে মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে রুমানা বলছিলেন তাঁর ফেরার গল্প, ‘মা আমাকে এত বেশি সমর্থন করেছেন, সেটা বলে বোঝানো যাবে না। আগে তিনি আমার খেলাকে কখনোই সেভাবে সমর্থন করেননি। কিন্তু আমি বাদ পড়ার পর তিনিই সবচেয়ে বেশি সাহস জুগিয়েছেন। আমার মধ্যে খেলা ছাড়ার একটা মানসিকতা চলে এসেছিল। মা আমাকে বুঝিয়েছেন, এভাবে কেন! মাঠে থেকে তোমাকে খেলা ছাড়তে হবে।’

আরও পড়ুন

সে সময় একপর্যায়ে অনুশীলনও বন্ধ করে দিয়েছিলেন রুমানা। বিষয়টি চোখে পড়ে তাঁর মায়ের। মেয়ের অবস্থা দেখে মা রুমানাকে বলেন, ‘তুমি যে মানের খেলোয়াড়, তোমার উচিত মাঠ থেকে অবসর নেওয়া। চেষ্টা করলে তুমি জাতীয় দলে ফিরতে পারবে।’

মায়ের এই অনুপ্রেরণাই মূলত ক্যারিয়ার নিয়ে নতুন করে ভাবতে উৎসাহী করে রুমানাকে। তা ছাড়া আগামী অক্টোবরে ঘরের মাঠে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সর্বশেষ ২০১৪ সালে ঘরের মাঠের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে ছিলেন রুমানা। ১০ বছর পর ঘরের মাঠে হতে যাওয়া আরেকটি বিশ্বকাপে খেলার আগ্রহও তাঁর ফেরায় বড় অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে, ‘ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ, এটাও বড় অনুপ্রেরণা। আমাদের নিজেদের সমর্থন থাকবে। একটা আশাও থাকবে। খেলোয়াড় হিসেবে আপনি সেটার অংশ হতে চাইবেন।’

অধিনায়ক নিগার সুলতানার সঙ্গে রুমানা আহমেদ
শামসুল হক

এরপর থেকেই জাতীয় দলে ফেরার সংকল্প নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন রুমানা। বর্ণনাটা শুনুন তাঁর মুখেই, ‘আমি টানা একটা বছর পরিশ্রম করেছি। যদি দলে ফিরতে পারি, তাহলে যেন প্রস্তুত হয়েই ফিরতে পারি। সে জন্য যা করণীয়, করেছি। ভালো লাগছে যে পরিশ্রমটা কাজে লেগেছে। ব্যাটে–বলে দুই জায়গায় ভালো করেছি। আমি নিজের পারফরম্যান্সে মোটামুটি সন্তুষ্ট।’

আরও পড়ুন

রুমানাকে সাহায্য করেছে তাঁর অভিজ্ঞতাও, ‘আবার দলে ফিরতে পারব, এই বিশ্বাসটা এসেছে আমার অভিজ্ঞতা থেকেই। আমি যে অবস্থায় ছিলাম, সেখান থেকে ভেঙে পড়াটা খুব সহজ ছিল। আমার ক্ষেত্রে তা হয়নি।’

বাংলাদেশে জাতীয় দলের বাইরে থাকলে নারী ক্রিকেটাররা অনুশীলনের সুযোগ–সুবিধা তেমন পান না। রুমানাকে জয় করতে হয়েছে সে বাধাও, ‘আমি যেহেতু ক্যাম্পের বাইরে ছিলাম, একটু সমস্যা হয়েছে। আমি আমার মতো করে অনুশীলন করার চেষ্টা করেছি। শুধু বোলিং মেশিনটা পাইনি, বাকি সবকিছু আমি ব্যবস্থা করেছি। ছেলেদের সঙ্গেও অনুশীলন করেছি।’