শেখ হাসিনার পদত্যাগ, রাজনীতিমুক্ত ক্রীড়াঙ্গনের প্রত্যাশা
ছাত্র-জনতার দাবির মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। দেশ পরিচালনায় গঠিত হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। যখনই দেশে এমন সরকার আসে, রাষ্ট্রে বয়ে যাওয়া বদলের হাওয়া লাগে ক্রীড়াঙ্গনেও। অতীতে এ রকম সময়ে বিভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশনের নেতৃত্ব থেকে বিদায় নিতে দেখা গেছে ক্ষমতাসীনদের ঘনিষ্ঠ অথবা সরকার নিয়োগকৃত কর্তাব্যক্তিদের।
রাজনীতিমুক্ত ক্রীড়াঙ্গন এখন সময়ের দাবি। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সাবেক খেলোয়াড়-সংগঠকদের কণ্ঠে গতকাল এমন সুরই শোনা গেছে। সবারই অভিন্ন কথা, রাজনৈতিক পরিচয়ে কেউ যাতে ফেডারেশনে থাকতে না পারে। সাবেক হকি খেলোয়াড় রফিকুল ইসলাম কামাল যেমন সরাসরি বলে দিয়েছেন, ‘রাজনীতিমুক্ত ক্রীড়াঙ্গন চাই। যাঁরা খেলাধুলা ভালোবাসেন, খেলার লোক, এমন ব্যক্তিরাই ফেডারেশনে আসুক। এমন কেউ থাকা ঠিক হবে না, যাঁরা এসে গ্রুপিং করবেন, বিভেদ তৈরি করবেন।’
সাবেক ফুটবলার শেখ মোহাম্মদ আসলাম রাজনীতিমুক্ত ক্রীড়াঙ্গনের পাশাপাশি ক্রীড়াঙ্গনে আমূল পরিবর্তনের পক্ষে। তিনি বলছেন, ‘একেকজন ব্যক্তি একেক জায়গায় (ফেডারেশনে) ১০-২০ বছর ধরে বসে আছে। কিন্তু কোনো ফল নেই। সেসব জায়গায় পরিবর্তন আনতে হবে। ক্রীড়াঙ্গনে জবাবদিহি আনাও জরুরি। প্যারিস অলিম্পিকে বাংলাদেশের যে দলটি গেল, তাদের কি জবাবদিহি ছিল? ছিল না। যোগ্য লোককে যোগ্য স্থানে লাগবে। তাতেই আসবে পরিবর্তন।’
সাবেক ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় ও সংগঠক কামরুন নাহার ডানাও চান যোগ্য ব্যক্তিরা ক্রীড়াঙ্গনের হাল ধরুক। ক্রীড়াঙ্গনে থাকুক ক্রীড়াঙ্গনের লোক, ‘যে খেলার কিছুই জানে না, তাকেও এনে বসিয়ে দেওয়া ঠিক নয় ফেডারেশনে। যে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সে যেন ফেডারেশনের সম্পাদক হতে না পারে। দেখা যায় জেলার ব্যক্তিরা ফেডারেশনেও জেঁকে বসেন। সরকার পরিবর্তনের এই সময়ে প্রত্যাশা করব, এক ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি যেন সম্পাদক হতে না পারেন।’
সাবেক ধানমন্ডি ক্লাব (বর্তমানে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব) মাঠটি এলাকার মানুষদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত সাবেক এই খেলোয়াড়। পাশাপাশি বলেছেন, ‘যোগ্যদের অনেকে ফেডারেশনে ঢুকতে পারেন না, কাউন্সিলর হতে পারেন না। রাজনৈতিক লোক দিয়ে ফেডারেশন চালানো ঠিক নয়। এর অবসান হতে হবে। ফেডারেশনের নির্বাচন হতে হবে স্বচ্ছ।’
কাজী সালাহউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন দেশের অন্যতম শীর্ষ ফেডারেশন বাফুফের নির্বাহী কমিটির নির্বাচন হতে পারে আগামী ২৬ অক্টোবর। সেই নির্বাচন ফিফার নিয়মাবলি মেনেই হওয়ার কথা। তবে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর আওয়ামী লীগের কারও পক্ষে বাফুফের নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়া সহজ হবে না।
বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী ছিলেন নাজমুল হাসান। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেরও সভাপতি তিনি। নাজমুল হাসানকে যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে, তা বলা বাহুল্য। তবে ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি পদে সরকার নিয়োগ দেয় না। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচনের মাধ্যমে ঠিক হয় বিসিবির পরিচালনা পর্ষদ। পরে নির্বাচিত পরিচালকদের মধ্য থেকে তাঁদেরই ভোটে নির্বাচিত হন বোর্ড সভাপতি।
দেশের ক্রীড়াঙ্গনে হাতে গোনা কয়েকটি ফেডারেশনের সভাপতি নির্বাচনের মাধ্যমে ঠিক হলেও বাকিগুলোর শীর্ষ পদে নিয়োগ দেয় সরকার। ফেডারেশনগুলোর নির্বাহী কমিটি নির্বাচনের মাধ্যমে ঠিক হলেও আদতে তা সরকারদলীয় লোকজন দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত। হকি, সাঁতার, অ্যাথলেটিকসহ বেশির ভাগ ফেডারেশন ‘শাসন’ করে আসছেন সরকারি দলের নেতারা। ক্রীড়া-সংশ্লিষ্টতা না থাকা সত্ত্বেও অনেকে রাজনৈতিক প্রভাবে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়ে যান। ক্রীড়াঙ্গনের মানুষের আশা, এবার সে ধারাবাহিকতার অবসান হবে। দেশের খেলাধুলার উন্নয়নের জন্যও সেটা জরুরি।