নিউইয়র্ক ও ত্রিনিদাদের পিচকে ‘অসন্তোষজনক’ রেটিং দিল আইসিসি

নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি স্টেডিয়ামের ড্রপ ইন পিচ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছেআইসিসি

সর্বশেষ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সমালোচনার বড় অংশজুড়ে ছিল নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি স্টেডিয়ামের ড্রপ–ইন (প্রতিস্থাপনযোগ্য বা অন্যত্র থেকে নিয়ে এসে বসানো) পিচ। এ মাঠের পিচ ব্যাটসম্যানদের জন্য যেন বধ্যভূমি হয়ে উঠেছিল। টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার ৫২ দিন পর নিউইয়র্কের দুটি পিচকে অসন্তোষজনক রেটিং দিয়েছে আইসিসি। এ ছাড়া ত্রিনিদাদের ব্রায়ানা লারা স্টেডিয়ামের একটি পিচকেও একই রেটিং দেওয়া হয়েছে।

নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি স্টেডিয়াম মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল। পিচ বানানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড ওভালের প্রধান পিচ কিউরেটর ডামিয়ান হফকে। অ্যাডিলেড থেকে পিচগুলো জাহাজে করে পাঠানো হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায়। এ বছরের শুরুর দিকে ফ্লোরিডা থেকে নিয়ে এসে বসানো হয় নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি স্টেডিয়ামে। কিন্তু ড্রপ–ইন পিচ স্থায়ীভাবে বসে যেতে আরও অনেক সময়ের প্রয়োজন। সেই সময়টা পায়নি বলেই ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস তুলে ছেড়েছে।

আরও পড়ুন

নিউইয়র্কে হওয়া ৮ ম্যাচে গড় রান ছিল মাত্র ১০৮! ১৬ ইনিংসে সর্বোচ্চ স্কোর ১৩৭। ওই ৮ ম্যাচের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা–শ্রীলঙ্কা ও ভারত–আয়ারল্যান্ড ম্যাচের পিচকে অসন্তোষজনক রেটিং দিয়েছে আইসিসি। এ ছাড়া ত্রিনিদাদে দক্ষিণ আফ্রিকা–আফগানিস্তানের সেমিফাইনালের পিচেরও জুটেছে একই রেটিং।

নিউইয়র্কে গত ৩ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাত্র ৭৭ রানে অলআউট হয় শ্রীলঙ্কা। ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে প্রোটিয়াদের খেলতে হয়েছে ১৬.২ ওভার। এরপর ৫ জুন ভারত–আয়ারল্যান্ড ম্যাচে পিচের আচরণ ছিল ভয়াবহ। আইরিশদের দেওয়া ৯৭ রানের লক্ষ্য ভারতীয়রা ১২.২ ওভারে তাড়া করে জিতলেও ব্যাটসম্যানদের ত্রাহি–ত্রাহি অবস্থ হয়েছিল। জশ লিটলের বলে বাহুর উপরিভাগে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল রোহিত শর্মাকে। সেই লিটলের বলেই ঋষভ পন্ত কনুইয়ে চোট পেয়েছিলেন।

ভারত–আয়ারল্যান্ড ম্যাচ হয়েছে এই পিচে
ভিডিও থেকে নেওয়া

ঘটনার পর মাঠে ছুটে যাওয়া ভারতীয় দলের ফিজিওর কাছ থেকে প্রাথমিক চিকিৎসাও নিতে হয়েছিল পন্তকে। আয়ারল্যান্ডের হ্যারি টেক্টরও ব্যাটিংয়ের সময় শরীরের বিভিন্ন জায়গায় একাধিকবার আঘাত পেয়েছিলেন। সেই পিচকে জিম্বাবুয়ের সাবেক অধিনায়ক অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার ‘বিপজ্জনক’ আর ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন ‘জঘন্য বলেছিলেন।’  

ত্রিনিদাদে ২৬ জুন প্রথম সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাত্র ৫৬ রানে গুটিয়ে যায় আফগানিস্তান। সেই পিচের আচরণ ছিল আরও অদ্ভুত। একই লেংথের বল, অথচ একটি পিচে পড়ার পর ব্যাটসম্যানের বুকবরাবর এসেছে তো আরেকটি গেছে হাঁটুর নিচ দিয়ে। অস্বাভাবিকভাবে বল উঠে কোনোটি ব্যাটসম্যানের বৃদ্ধাঙ্গুলিতে আবার কোনো কোনোটি হেলমেটে আঘাত করেছে। ওই দিন ম্যাচ শেষে আফগানিস্তান কোচ জোনাথন ট্রট বলেছিলেন, ‘এ ধরনের পিচে আপনি সেমিফাইনাল খেলতে চাইবেন না।’

আরও পড়ুন

আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের পিচ ও আউটফিল্ডের মান অনুযায়ী আইসিসি পাঁচটি রেটিং দিয়ে থাকে—খুব ভালো, ভালো, সন্তোষজনক, অসন্তোষজনক ও খেলার অনুপযোগী। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মোট ৫৫ ম্যাচ হয়েছে। এর মধ্যে বৃষ্টির কারণে ৩ ম্যাচে একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। তাই ওই ৩ ম্যাচের পিচকে রেটিং দেওয়া হয়নি।

বাকি ৫২ ম্যাচের মধ্যে ৩১টি পিচকে ‘সন্তোষজনক’, ১৮টি পিচকে ‘খুব ভালো’ এবং এই নিউইয়র্ক ও ত্রিনিদাদের ওই তিনটি পিচকে ‘অসন্তোষজনক’ হিসেবে মূল্যায়ন করেছে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

আউটফিল্ড নিয়ে অবশ্য নিজেদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে আইইসিসি। নিউইয়র্ক ও গায়ানার আউটফিল্ডকে ‘সন্তোষজনক’ এবং বাকি ভেন্যুর আউটফিল্ডকে ‘খুব ভালো’ রেটিং দেওয়া হয়েছে। বার্বাডোজের কেনসিংটন ওভালে ২৯ জুন ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৭ রানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। ফাইনালের পিচকে ‘খুব ভালো’ হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়েছে।