মন্থর ওভার রেটের কারণে অস্ট্রেলিয়া শাস্তি পাওয়ার পর আইসিসির প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ব্যাটসম্যান উসমান খাজা। অন্যদিকে সাবেক অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক রিকি পন্টিং বলছেন, এ ব্যাপারে আরও সচেতন হতে পারেন খেলোয়াড় ও আম্পায়াররা। আর সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক নাসের হুসেইনের মতে, আইসিসির সময় এসেছে আরও কঠোর হওয়ার।
সদ্য সমাপ্ত অ্যাশেজে মন্থর ওভার রেটের কারণে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এ চক্রে অর্জিত ২৮ পয়েন্টের ১৯ পয়েন্টই কাটা গেছে ইংল্যান্ডের, অস্ট্রেলিয়ার কাটা গেছে ১০ পয়েন্ট। সঙ্গে দুই দলকেই ম্যাচ ফির একটা নির্দিষ্ট অংশ জরিমানাও দিতে হচ্ছে। আজ আইসিসি দুই দলের শাস্তির বিষয়টি ঘোষণা করার পর টুইটারে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন খাজা।
সিরিজে পাঁচ টেস্টের মধ্যে চারটিতেই ইংল্যান্ডকে শাস্তি দেওয়া হলেও অস্ট্রেলিয়া শাস্তি পেয়েছে বৃষ্টিবিঘ্নিত ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টের জন্য। সে ম্যাচে এক ইনিংস বোলিং করেছিল স্বীকৃত স্পিনার ছাড়াই খেলতে নামা অস্ট্রেলিয়া। স্লো ওভার রেটের শাস্তির খবর আসার পর খাজা টুইটারে খোঁচা দিয়ে লিখেছেন, ‘দুই দিনের বৃষ্টির কারণে দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিংয়ের সুযোগই পাওয়া গেল না, আর আইসিসি এরপরও স্লো ওভার রেটের কারণে জরিমানার সঙ্গে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ১০ পয়েন্ট কেটে নিল! বেশ বোধগম্য হলো ব্যাপারটা…’
মন্থর ওভার রেটের কারণে ১৯ পয়েন্ট হারিয়ে ফেলা, বেশ বড় ধাক্কাই হতে পারে এটি। যেমন আগের চক্রে সব দল মিলিয়ে হারিয়েছিল ১৯ পয়েন্ট, ইংল্যান্ড সমপরিমাণ পয়েন্ট হারাল এক সিরিজেই! পয়েন্ট হারানোর স্মৃতিটা সুবিধার নয় অস্ট্রেলিয়ারও। সর্বশেষ চক্রের চ্যাম্পিয়ন দলটি প্রথম আসরে পেনাল্টি ওভারের কারণেই শেষ পর্যন্ত হাতছাড়া করেছিল ফাইনালে খেলার সুযোগ। খাজার প্রতিক্রিয়া তাই একেবারে অস্বাভাবিক নয়।
তবে মন্থর ওভার রেট বেশ ভাবনার বিষয় সাবেক অধিনায়ক পন্টিংয়ের কাছে। আইসিসি রিভিউ নামের শোতে তিনি যেমন বলেছেন, ‘সময় সব কোথায় যাচ্ছে ম্যাচের মধ্যে, আমি দেখতে পাচ্ছি না। এ ব্যাপারটি বুঝি না আমি। প্রতিদিনই আধা ঘণ্টা বেশি খেলা হচ্ছে, এরপরও দিনে ৬-৭ ওভার হারাচ্ছি। আমি জানি না, বুঝি না ঠিক। সময় কোথায় যাচ্ছে।’
এ ক্ষেত্রে আম্পায়ার ও খেলোয়াড়দের এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন এবারের অ্যাশেজে ধারাভাষ্য দেওয়া পন্টিং, ‘খেলোয়াড়দের দায়িত্ব নিতে হবে। আমার মনে হয়, আম্পায়াররাও আরও এগিয়ে আসতে পারেন। খেলোয়াড়েরা যাতে আরও প্রস্তুত থাকে, সুশৃঙ্খল হয়, ব্যাটাররা আরও প্রস্তুত থাকে, ব্যাটসম্যান যখন ক্রিজে, তখনই বোলার যাতে তার বোলিং মার্কে থাকে—এসব নিশ্চিত করতে হবে আম্পায়ারদের। এসব ম্যাচে যাতে আরও বেশি সময় নষ্ট না হয়, এর একটা উপায় খুঁজে বের করতে হবে।’
মাঠের খেলা বেশ বিনোদনমূলক হলেও দর্শকেরা দিনে পুরো খেলাই প্রত্যাশা করেন, এমন মনে করেন পন্টিং। তিনি বলেছেন, ‘টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে তৃতীয় দিন শেষ সেশনের মধ্যেই পুরো এক সেশন হারিয়ে গিয়েছিল—তিন দিনে দুই ঘণ্টা! এবং আমি জানি না এ সময় কোথায় হারিয়েছে, এর উপযুক্ত শাস্তিটাও ঠিক জানি না।’
এর আগে অস্ট্রেলিয়ার ফাইনাল খেলার সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার উদাহরণ টেনে পন্টিং বলেছেন, ‘আমি সত্যিই জানি না এর সমাধান কী, তবে যদি শেষবার অস্ট্রেলিয়ার মতো কোনো দল টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল মিস করে কয়েকটি ওভারের জন্য, তাহলে এটি বেশ কঠোর শাস্তি হয়ে যায়।’
হুসেইন অবশ্য কঠোর শাস্তিরই পক্ষে। তিনি বলেছেন, ‘আমার মনে হয় পেনাল্টি কঠোরই হওয়া উচিত। এটা সমর্থকদের বেশ হতাশ করে। বিশেষ করে ইংল্যান্ডে যেমন টিকিটের অনেক দাম। ফলে আপনি পুরো দিনের খেলা চাইবেন। হয়তো অনেকে বলতে পারেন, আপনি যে করেই হোক বিনোদন পাচ্ছেন। তবে আপনি যদি ৯০ ওভারের টাকা দেন, তাহলে আপনি ৯০ ওভারই প্রত্যাশা করবেন বলে মনে করি।’
এরপর নাসের যোগ করেন, ‘এরপর যদি আধা ঘণ্টা অতিরিক্ত খেলার পরও ৮৫ ওভারের পরই উঠে যান, তাহলে আমার মনে হয় জরিমানা, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট কেটে নেওয়া (উচিত), এর কারণে এরই মধ্যে দলের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে জায়গা হারানোর উদাহরণ আছে। ফলে আইসিসির দলগুলোর ব্যাপারে কঠোর হওয়া চালিয়ে যাওয়া উচিত।’
দলগুলোকে নির্দিষ্টসংখ্যক ওভারের আগে বিরতিতে যেতে দেওয়া উচিত নয় বলেও মনে করেন এখন ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করা হুসেইন, ‘এবং আমি মনে করি, যদিও জানি এ ব্যাপারে টিভি কোম্পানিগুলোরও একমত হতে হবে—যদি আপনি নির্দিষ্ট ৩০ ওভার না করেন, তাহলে আপনাকে মাঠে থাকতে হবে। আপনি না হলে মধ্যাহ্নভোজ পাবেন না, চা খেতে পারবেন না।’
এর মাধ্যমে ওভারের গতি বাড়বে বলেও মনে করেন নাসের, ‘এর মাধ্যমে খেলোয়াড়েরা আরও দ্রুতগতিতে এগোবেন আগে থেকেই। কারণ, আপনি সাড়ে তিন ঘণ্টার সেশন চাইবেন না শেষে গিয়ে। বিশেষ করে পেসাররা দিনের শেষে সাড়ে তিন ঘণ্টার সেশনে বোলিং করতে চাইবে না। ফলে আম্পায়ারদের আরও কঠোর হতে হবে।’