বিপিএলে শেরেবাংলায় স্পোর্টিং উইকেটের রহস্য

প্রথমবারের মতো ১৮ বলে ফিফটি দেখেছে বিপিএল। চট্টগ্রামের বিপক্ষে করেছেন খুলনার মাহিদুল।প্রথম আলো

১৯৭, ২০০, ১৯১, ১৫১, ২০৩, ১৬৬। কিছু বোঝা গেল? এখন পর্যন্ত হওয়া এবারের বিপিএলের তিনটি ম্যাচ দেখে থাকলে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন সংখ্যাগুলো দিয়ে কী বোঝানো হচ্ছে। কাল প্রথম দিনে হওয়া দুই ম্যাচ এবং আজ দ্বিতীয় দিনের প্রথম ম্যাচের স্কোর এগুলো।

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বিপিএলের তিনটি টি–টোয়েন্টি ম্যাচের ছয় ইনিংসে রান হয়েছে ১১০৮, ভাবা যায়! এমন নয় যে টি–টোয়েন্টি ম্যাচে শেরেবাংলা স্টেডিয়াম এর আগে ১৯০–২০০ রান দেখেনি। আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতেই ২০০ হয়েছে তিনবার, ১৯০ বা তার ওপর ধরলে সংখ্যাটা ১০। বিপিএলে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রান উঠেছে ২১৮, দুই শর ওপরে তো হয়েছে অনেকবারই।

তারপরও এবারের বিষয়টি আলোচনায় আসার কারণ, এখন পর্যন্ত হওয়া টানা তিন ম্যাচেই বড় রান দেখেছে এবারের বিপিএল। কাল প্রথম ম্যাচে দুর্বার রাজশাহী ১৯৭ রান করেও ঠেকাতে পারেনি ফরচুন বরিশালকে । ১৮.১ ওভারেই ৪ উইকেটে ম্যাচ জিতেছে তারা।

প্রথম ম্যাচে দুর্বার রাজশাহীর ১৯৭ রান টপকে গেছে ফরচুন বরিশাল
প্রথম আলো

আজ মাহিদুল ইসলামের দ্রুততম (১৮ বলে) ফিফটিতে খুলনা টাইগার্সের ৪ উইকেটে ২০৩ রানের জবাবে ৭৫ রানে ৮ উইকেট হারিয়েও চিটাগং কিংস শেষ পর্যন্ত করেছে ১৬৬ রান। খুলনার বোলারদের দাপটের মধ্যেও চিটাগংয়ের শামীম হোসেন ঠিকই ৩৮ বলে ৭৮ রান করেছেন ৫ ছক্কা আর ৭ বাউন্ডারিতে।

চিটাগং কিংসের ব্যাটিং–ব্যর্থতার দায় যে উইকেটের নয়, সেটি শামীমের ব্যাটিংয়েই পরিষ্কার। কৃতিত্বটা খুলনার বোলারদের ভালো বোলিংকেই দিতে হবে। অর্থাৎ মিরপুরের উইকেট শুধুই ব্যাটিংবান্ধব, তা বলা যাবে না। চাইলে বোলাররাও পারছেন উইকেটের ফুল ফোটাতে। বরিশালও যেমন কাল ম্যাচ জয়ের আগে ৬১ রানে হারিয়েছিল ৫ উইকেট।

আরও পড়ুন

বিপিএলের টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান ও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসানের চোখে, বিপিএলে এবার এখন পর্যন্ত মিরপুরের উইকেট দেখাচ্ছে তার সেরা রূপ। ‘উইকেট অত্যন্ত ভালো। কাল দুই ম্যাচেই ব্যাটসম্যানরা রান পেয়েছে, আবার বোলাররাও চাইলে উইকেট থেকে সুবিধা নিতে পেরেছে। প্রথম দিন দ্বিতীয় ম্যাচে কয়েকটা বল মনে হচ্ছিল একটু কঠিন, তবে পরে আবার ঠিক হয়ে গেছে। উইকেটে অসম কিছু নেই, এটাই বড় কথা’—বলেছেন আগামীকাল ৭১–এ পা দিতে যাওয়া রকিবুল।

খুলনার বিপক্ষে চট্টগ্রামের হয়ে ৩৮ বলে ৭৮ রান করেছেন শামীম হোসেন
প্রথম আলো

মিরপুরের উইকেটের এমন ‘স্পোর্টিং’ আচরণের পেছনের গল্পটা বলেছেন বিসিবির সভাপতি ফারুক আহমেদ। ‘অন্যরকম’ বিপিএল নিয়ে এবার যে আলোচনা, তাতে জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক শুরুতেই শর্ত দিয়েছিলেন—মাঠের ক্রিকেটটা ভালো হতে হবে। সেই ধারণা থেকেই বিপিএলে মিরপুর এবার দেখছে স্পোর্টিং উইকেট।

ভালো ক্রিকেটের শর্ত পূরণের দায়িত্ব অনেকাংশে ক্রিকেটারদের হলেও উইকেট ভালো না হলে ভালো ক্রিকেট খেলা কঠিনই। বিপিএল শুরুর আগে মিরপুরের শ্রীলঙ্কান কিউরেটর গামিনি ডি সিলভার উদ্দেশে তাই বোর্ড সভাপতির পরিষ্কার বার্তা ছিল—উইকেট হতে হবে স্পোর্টিং, বিপিএলে যেন রান হয়।

আরও পড়ুন

আজ দিনের প্রথম ম্যাচের সময় প্রেসবক্স ঘুরতে এসে সাংবাদিকদের ফারুক সে কথাই বলেছেন, ‘কিউরেটরকে আগেই নির্দেশনা দিয়েছি, উইকেট যেন স্পোর্টিং হয়। ব্যাটসম্যানরা রান করতে পারে, বোলাররাও যেন চাইলে ভালো বোলিং করতে পারে। উইকেটে আড়াই মিলিমিটার ঘাস রাখা হয়েছে। ঘাস আরও কমও রাখা যেত, কিন্তু সে ক্ষেত্রে পরের দিকে উইকেট ভালো থাকত না। আমি বলেছি এ রকম উইকেটই রাখতে।’

বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

প্রসঙ্গত, বিসিবি সভাপতি টেনেছেন এ মাসের শুরুতে সেন্ট কিটসে অনুষ্ঠিত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের কথা। ৩–০ তে হারা সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ করেছিল ২৯৪ ও শেষ ম্যাচে ৩২১। এই রান করে ম্যাচ হারলেও খেলা দেখে ফারুকের মনে হয়েছে, ভালো উইকেট পেলে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাও পারে ভালো ব্যাটিং করতে। আবার এ ধরনের উইকেটে কীভাবে ভালো বোলিং করতে হয়, সেটা শেখা দরকার বোলারদের। বিপিএলে স্পোর্টিং উইকেটের চিন্তাটা সমর্থন পেয়েছে সে অভিজ্ঞতা থেকেও।

অবশ্য মিরপুর বলেই এ নিশ্চয়তা দেওয়া যাচ্ছে না যে বিপিএলের বাকি ম্যাচগুলোতেও এখানে উইকেট এমনই থাকবে। তবে বিসিবি সভাপতি আশাবাদী, ‘উইকেটের আচরণ অনেক কারণেই বদলাতে পারে। পরের দিকে কী হয় বলতে পারব না। তবে আশা করি খুব বেশি পরিবর্তন হবে না। স্পোর্টিং উইকেটই থাকবে। বিপিএলে দর্শকেরা রান দেখবেন।’

আরও পড়ুন