‘আগে কোহলির পর্যায়ে যাও, এরপর অধিনায়কত্ব করো’
৬ ইনিংসে ১১.৬৩ গড়ে ৬৮ রান—এই ছিল এশিয়া কাপে বাবর আজমের ব্যাটিং পারফরম্যান্স। এমন ব্যাটিং ব্যর্থতার পরও ব্যাটসম্যান বাবরের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি কেউ, এটিকে মেনে নিয়েছেন সাময়িক ছন্দহীনতা বলে। কিন্তু ব্যাটিং নিয়ে না হলেও প্রশ্ন উঠে গেছে বাবরের অধিনায়কত্ব নিয়ে।
এশিয়া কাপে ফাইনালে শ্রীলঙ্কার কাছে পাকিস্তানের হারের পর অধিনায়ক বাবরের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাবেকদের অনেকে। যাঁদের মধ্যে আছেন ওয়াসিম আকরাম, রশিদ লতিফ, মঈন খানের মতো সাবেক অধিনায়কেরা। দল যেমন তাঁর অধিনায়কত্ব থেকে সেরাটা পাচ্ছে না, তেমনি নেতৃত্বের চাপ বাবরের ব্যাটিংয়ে প্রভাব ফেলছে বলেও মত তাঁদের।
পরিসংখ্যান বলছে অবশ্য ভিন্ন কথা। এশিয়া কাপে ব্যাটিং ব্যর্থতার পরও অধিনায়ক হওয়ার আগের সময়ের চেয়ে অধিনায়ক হওয়ার পরের সময়ে ভালো খেলছেন বাবর। ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত খেলা ১৩৬ ম্যাচে রান করেছেন ৬,৬৯৪, যেখানে ব্যাটিং গড় ছিল ৫০.৩৩, স্ট্রাইক রেট ৮২.৪২। আর গত তিন বছরে নেতৃত্ব দেওয়া ৭৮টি ম্যাচে ৩,৮৪৬ রান করেছেন ৫০.৬০ গড়ে, স্ট্রাইক রেট ৮২.৪২। তিন সংস্করণ মিলিয়ে করা ৭১টি ফিফটির ৩১টিই এসেছে অধিনায়ক থাকাবস্থায়, ২৫ সেঞ্চুরির ৯টিও এই সময়ে।
তবে পরিসংখ্যান যা-ই বলুক, অধিনায়কত্ব না করলে বাবর আরও ভালো করতেন বলে বিশ্বাস কামরান আকমলের। সাবেক এই উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যানের মতে, একটু আগেই অধিনায়কত্ব পেয়ে গেছেন বাবর।
সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে বাবরকে এ বিষয়ে কখনো পরামর্শ দিয়েছিলেন কি না—একটি ইউটিউব চ্যানেলের অনুষ্ঠানে এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল কামরানকে। জবাবে কামরান বলেন, ‘ফয়সালাবাদে একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের সময় দেখলাম বাবর টস করতে নেমেছে। জানলাম ওকে অধিনায়ক বানানো হয়েছে। তখন তাকে বলেছিলাম, আমার মনে হয় না এখনই তোমার অধিনায়ক হওয়ার সঠিক সময়। সামনের ২-৩ বছর নিজের সেরা পারফরম্যান্সটুকু দাও। আগে বিরাট কোহলি আর স্টিভেন স্মিথের পর্যায়ে পৌঁছাও। ৩৫-৪০টা সেঞ্চুরি হয়ে গেলে তারপর তুমি অধিনায়কত্ব উপভোগ করতে পারবে।’
বাবর পাকাপাকিভাবে পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি দলের নেতৃত্ব পান ২০২০ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে। তিন সংস্করণেরই অধিনায়ক হন চলতি বছরের শুরুতে। এশিয়া কাপে ব্যর্থতা বাদ দিলে টি-টোয়েন্টি সংস্করণে পাকিস্তানের সবচেয়ে বেশি (২৯ ম্যাচ) জয় পাওয়া অধিনায়কও বাবর। একই সময়ে টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ের ব্যাটসম্যানদের শীর্ষস্থানেও জায়গা করে নেন।
কামরানের ধারণা, নেতৃত্বের চাপ না থাকলে ব্যাটিংয়ে আরও বেশি ভালো করতেন বাবর, ‘আমি তাকে ব্যাটিংয়ে মনোযোগ দিতে বলেছিলাম। সে ভালো রান করছিল, ছন্দে ছিল। সবাই ওর ব্যাটিং উপভোগ করত। কিন্তু অধিনায়কত্বে চাপ আছে, যেটা ব্যাটিংয়ে, প্রচেষ্টায় প্রভাব ফেলে, যা এখন বাস্তবে দেখা যাচ্ছে।’
তাই বলে কামরান আকমল এখন বাবরকে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ারও পক্ষপাতী নন, ‘এখন ওকে নেতৃত্ব থেকে ছাড়িয়ে দেওয়াটা গুরুতর ভুল হবে। পাকিস্তান ক্রিকেট পিছিয়ে যাবে।’