বৃষ্টির কারণে বদলে যেতে পারে এশিয়া কাপের ভেন্যু
শ্রীলঙ্কায় সাধারণত অক্টোবর মাসে বর্ষাকাল শুরু হয়। কিন্তু বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন শ্রীলঙ্কাতেও পড়ছে। দ্বীপ দেশটিতে এ বছর আগস্ট থেকেই শুরু হয়েছে বৃষ্টি। যেটা অব্যাহত থাকবে সেপ্টেম্বর মাসেও।
‘বৃষ্টিপ্রবণ’ শ্রীলঙ্কার এই সময়ের আবহাওয়া ক্রিকেটের জন্য মোটেও অনুকূল নয়—ব্যাপারটা জেনেও হাইব্রিড মডেলের এশিয়া কাপে পাকিস্তানের সঙ্গে শ্রীলঙ্কাকে যৌথ আয়োজক হিসেবে বেছে নিয়েছে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি)।
কিন্তু বৃষ্টির কারণে পরশু টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ বাতিল হতেই টনক নড়েছে এসিসির। শ্রীলঙ্কায় আগামী দিনগুলোতেও বৃষ্টি নামার প্রবল সম্ভাবনা থাকায় কলম্বো থেকে ম্যাচ সরিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছে এশিয়ান ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইএসপিএন ক্রিকইনফো এবং বার্তা সংস্থা পিটিআই।
এশিয়া কাপের ১৩ ম্যাচের মধ্যে ৯টি হওয়ার কথা শ্রীলঙ্কায়। এর মধ্যে ১৭ সেপ্টেম্বর ফাইনালসহ ৬টি ম্যাচের সূচি রাখা হয়েছে দ্বীপ দেশটির বৃহত্তম শহর কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে। এই ভেন্যুতে ২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সেপ্টেম্বর মাসে ছেলেদের পাঁচটি টি-টোয়েন্টি ও চারটি ওয়ানডে ম্যাচ হয়েছে। এর মধ্যে দুটি ম্যাচ বৃষ্টি-বাধায় পড়েছে। যদিও ফল হয়েছে সব ম্যাচের।
কিন্তু কলম্বোয় গত কয়েক দিনে এতটাই ভারি বর্ষণ হয়েছে যে, শহরের উত্তর অংশে বন্যা দেখা দিয়েছে। প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামও কলম্বোর উত্তরেই অবস্থিত। আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানাচ্ছে, কলম্বোয় আরও দুই সপ্তাহ টানা বৃষ্টি হবে। সেটা হলে ফাইনাল তো দূরের কথা, সুপার ফোরের ম্যাচগুলোও পণ্ড হয়ে যাবে। তাতে বিশাল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে এসিসি ও প্রধান সম্প্রচারকারী চ্যানেল স্টার স্পোর্টস। ভেন্যু বদলানোর ব্যাপারে তাই দুই পক্ষ আলোচনায় বসেছে। দুই স্বাগতিক দেশের ক্রিকেট বোর্ডও (এসএলসি ও পিসিবি) এতে সম্মতি দিয়েছে।
তবে কলম্বোর ম্যাচগুলো অন্য কোনো দেশে সরিয়ে নেওয়া হবে না। শ্রীলঙ্কারই ক্যান্ডি, ডাম্বুলা অথবা হাম্বানটোটায় হতে পারে। ক্যান্ডির পাল্লেকেলে স্টেডিয়াম এরই মধ্যে দুটি ম্যাচ আয়োজন করেছে। একটি বাংলাদেশ–শ্রীলঙ্কা, অন্যটি ভারত–পাকিস্তান। বাংলাদেশ–শ্রীলঙ্কার ম্যাচটিতে একবার বৃষ্টি বাগড়া দিলেও কোনো ওভার কাটা পড়েনি। কিন্তু পরশু থেমে থেমে হওয়া বৃষ্টিতে ভারত–পাকিস্তান ম্যাচটা পণ্ড হয়ে যায়।
সেই ক্যান্ডিতেই আজ নেপালের বিপক্ষে খেলবে ভারত। এরপর সেখানে আর এশিয়া কাপের কোনো ম্যাচ নেই। তবে এসিসি চাইলে এই ভেন্যুর কর্তৃপক্ষ আরও ম্যাচ আয়োজন করতে পারবে। কিন্তু পাহাড়ি শহর ক্যান্ডিতে আগামী কয়েক দিন বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
সে ক্ষেত্রে ক্যান্ডি থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরের শহর ডাম্বুলায় সুপার ফোর ও ফাইনাল আয়োজন করা যেতে পারে। বৃষ্টির বাধাহীন ২০১০ এশিয়া কাপের সব ম্যাচ ডাম্বুলাতেই হয়েছিল। এবারও এ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত সেখানে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের এক কর্মকর্তা পিটিআইকে জানিয়েছেন, এত অল্প সময়ের মধ্যে ডাম্বুলার রণগিরি স্টেডিয়ামকে ম্যাচ আয়োজনের জন্য প্রস্তুত করে তোলা সম্ভব নয়।
তাহলে ‘শেষ বিকল্প’ হিসেবে বাকি থাকে হাম্বানটোটা। শ্রীলঙ্কার দক্ষিণের এই বন্দর নগরীতে আগামী কয়েক দিন বৃষ্টি নামার কোনো সম্ভাবনা নেই। তা ছাড়া হাম্বানটোটার মাহিন্দা রাজাপক্ষে স্টেডিয়ামে কদিন আগেই বৃষ্টি বাধা ছাড়া দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলেছে আফগানিস্তান–পাকিস্তান। ম্যাচ আয়োজনের জন্য এই ভেন্যুকে প্রস্তুত বলাই যায়।
কিন্তু হাম্বানটোটার ক্ষেত্রে ঝামেলা অন্যখানে। মাহিন্দা রাজাপক্ষে স্টেডিয়ামের অবস্থান মূলত জঙ্গলের কিনারে। সেখান থেকে হোটেলও বেশ দূরে। সূচিতে থাকা কলম্বোর কিছু ম্যাচও যদি সেখানে আয়োজন করা হয়, তাহলে লঙ্কান বোর্ডকে লজিস্টিক সংক্রান্ত জটিলতায় পড়তে হবে।
সম্প্রচারকারী চ্যানেল স্টার স্পোর্টসকেও তাদের সরঞ্জাম আনা–নেওয়ার ক্ষেত্রে বেগ পেতে হবে। কারণ, তখন তাদের অতিরিক্ত একটি ভেন্যুতে সম্প্রচার সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম, ক্যামেরাপার্সন ও অন্যান্য লোকবল পাঠাতে হবে।
বুধবার থেকে শুরু হয়ে যাবে এশিয়া কাপের সুপার ফোর পর্ব। সব মিলিয়ে এসিসির হাতে সময় আছে মাত্র দুদিন। ভেন্যু বদলের সিদ্ধান্ত তাই দ্রুতই নিতে হবে।