২০১৩ সালে ‘হোমওয়ার্কগেট’ বিতর্কের পর ধীরে ধীরে খেলোয়াড়দের ক্ষমতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। ব্যাপারটি অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলকে কতটা পাল্টে দিয়েছে, সে বিষয়ে সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের সঙ্গে কথা বলেছেন উসমান খাজা।
মিকি আর্থার তখন অস্ট্রেলিয়ার কোচ। ২০১৩ সালের সে সময়ে অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলকে শক্ত হাতে পরিচালনা করেছেন এই প্রোটিয়া কোচ। সে বছরের জানুয়ারিতে মাইক হাসি হঠাৎই জাতীয় দল ছেড়ে চমকে দিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ানদের। পরিস্থিতি এরপর আরও খারাপ হতে শুরু করে। মার্চে ভারত সফরে গিয়ে ৪-০ ব্যবধানে হারে অস্ট্রেলিয়া। শুধু কি তা-ই, মিকি আর্থার খেলোয়াড়দের কাছে একটি প্রেজেন্টেশন চেয়েছিলেন এবং সেটি না করার জন্য ভারত থেকে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল শেন ওয়াটসন, মিচেল জনসন, জেমস প্যাটিনসন ও খাজাকে।
ওয়ার্নারের জরিমানা হয়েছিল ১১ হাজার ৫০০ ডলার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক সংবাদকর্মীর প্রতি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠায় নিষিদ্ধও হয়েছিলেন এই ওপেনার। এরপর কোচের পদ থেকে ছাঁটাই হন আর্থার এবং অস্ট্রেলিয়াও অ্যাশেজ ৩-০ ব্যবধানে হেরে যায়। এর পর থেকে টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার ঘুরে দাঁড়ানোর অন্যতম সারথি খাজা।
অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যমটির সঙ্গে এ নিয়ে আলাপচারিতায় আর্থার এবং সে সময় অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে নেতৃত্বাধীন ব্যক্তিদের প্রতি অভিযোগের আঙুল তুলেছেন এই বাঁহাতি ওপেনার। খাজার মতে, টেস্ট ক্রিকেটের প্রতিদ্বন্দ্বিতা খেলোয়াড়দের ওপর যতটা চাপ বিস্তার করে, সেসব দিক ভেবে খেলোয়াড়দের তখন যথেষ্ট সম্মানের চোখে দেখা হয়নি।
খাজা বলেছেন, ‘টেস্ট ক্রিকেট মানসিকভাবে কতটা কঠিন, তা তারা সম্মানের চোখে দেখেনি।’ অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে বর্তমান নেতাদের প্রশংসা করেছেন খাজা। কোচ অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ড, প্রধান নির্বাচক জর্জ বেইলি ও অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের প্রশংসা করেছেন তিনি। খেলোয়াড়দের প্রয়োজনটা তাঁরা বোঝেন বলে মনে করেন খাজা, ‘প্যাটি, অ্যান্ড্রু ও জর্জ এটা বোঝে যে মানসিকভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পারফর্ম করা কত কঠিন। সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গায় তারা না থাকলে আমার মনে হয় না খেলোয়াড়েরা এ বছর যেভাবে পারফর্ম করেছে, সেটা করতে পারত। আমি ব্যাপারটা জানি বলেই বলছি। খেলোয়াড়দের ওপর থেকে চাপ সরিয়ে নিয়ে তারা যেন নিজেদের সেরাটা দিতে পারে, সে জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছে তারা।’
তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে এখন পাকিস্তান দলকে আতিথ্য দিচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। ১৪ ডিসেম্বর পার্থে শুরু হতে যাওয়া প্রথম টেস্টের প্রস্তুতি নিচ্ছেন খাজা। সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের সঙ্গে আলাপে খাজা কিছু বিস্ফোরক তথ্যও জানিয়েছেন। টেস্ট ম্যাচে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য এর আগে অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়দের নাকি বকুনি শুনতে হতো। টিম ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে খেলোয়াড়দের অপ্রয়োজনীয় ওয়ার্মআপও করানো হয়েছে বলে দাবি করেন খাজা, ‘পাঁচ বছর আগেও আমি যদি কোনো ক্রিকেট ম্যাচে ঘুমাতাম, তাহলে বকুনি দেওয়া হতো। টেস্ট ম্যাচ পাঁচ দিনের। কঠিন একটা কাজ। কিন্তু “ম্যাচের মধ্যে ঘুমোচ্ছ কেন, জেগে ওঠো”—এসব বলা হতো। এখন ম্যাচের মধ্যে ঘুমালে প্যাটি কিংবা অন্য কেউ একটি কথাও বলে না।’
খাজা বিষয়টি আরেকটু ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘এমনকি ওয়ার্মআপের মতো ছোটখাটো ব্যাপারও ম্যাচের জন্য প্রস্তুত হতে সহায়তা করে। সে জন্য একটু মানসিক শক্তিও লাগে। তবে যে ওয়ার্মআপ করতে চান না, সেটির জন্য প্রতিদিন জোর করে ওঠার দরকার পড়ে না। ধরুন, আগের দিন ক্যাচ দিয়েছি, তাই ব্যাটিং করছি না, তাহলে ওয়ার্মআপের কী প্রয়োজন? আবারও মাঠে নামার আগপর্যন্ত আমার তো ওয়ার্মআপের প্রয়োজন নেই।’
খাজা জানিয়েছেন, এই ব্যাপারগুলো দেখভালের দায়িত্ব খেলোয়াড়দের ওপর এখন দেওয়া হয়েছে এবং তাতে সুফলও মিলছে, ‘অনেক দিন পর খেলোয়াড়দের পরিণত হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং তারাও পরিণত মানুষের মতো আচরণ করছে, অন্তত বেশির ভাগ সময়।’