সাকিবকে ছোঁয়া কোহলির ইনিংসটি ‘ভারত চিরকাল মনে রাখবে’
দিল্লি ক্যাপিটালসের ‘এক্স’ হ্যান্ডল থেকে ছবিটি পোস্ট করা হয়েছে। ক্রিজে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আঙুল উঁচিয়ে কিছু একটা দেখাচ্ছেন কোহলি। জায়ান্ট স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে একটি লেখা, ‘ম্যায় হুঁ না ইন্ডিয়া’—অর্থাৎ, (ভেবো না) ভারত, আমি তো আছি! ছবিটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ‘ভারত এই ৯৫ চিরকাল মনে রাখবে।’
নিউজিল্যান্ডের ২৭৩ তাড়া করতে নেমে শেষ ১৮ বলে ৭ রান দরকার ছিল ভারতের। কোহলির তখন ৯৩। ধর্মশালার গ্যালারিতে তখন কোহলির আরেকটি শতক ঘিরে উত্তেজনা! বাংলাদেশের বিপক্ষে আগের ম্যাচে শেষ দিকে দলের জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রান একাই করে শতক তুলে নিয়েছিলেন কোহলি। আজও (গতকাল) কি তার পুনরাবৃত্তি ঘটবে! কোহলি সেটাই চেয়েছিলেন।
৪৮তম ওভারে ম্যাট হেনরির প্রথম বলে ২ রান নিয়ে পরের দুই বলে সিঙ্গেল নেননি। চতুর্থ বলে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে ‘ফ্লিক’ করে ছক্কা মেরে একসঙ্গে শতক ও জয়সহ ম্যাচের পর্দা নামাতে চেয়েছিলেন কোহলি। কিন্তু এ যাত্রায় ধরা পড়তে হয় গ্লেন ফিলিপসের হাতে। যাহ! শচীন টেন্ডুলকারের ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ শতকের রেকর্ডটা ধরা হলো না! কিন্তু এই যে উত্তেজনা, এই যে প্রত্যাশা, আর ম্যাচের চিত্রপট থেকে গতিপথ নিজের ব্যাটে লিখে জয় তুলে নেওয়া—কোহলি নিশ্চয়ই এসবের জন্যই বাঁচেন!
নিউজিল্যান্ডের সাবেক পেসার ও ধারাভাষ্যকার সাইমন ডুল ঠিক এই কথাটাই বলেছেন। ভারতের ৪ উইকেটে জয়ের পর স্টার স্পোর্টসে ম্যাচ-পরবর্তী বিশ্লেষণে কোহলির রান তাড়া করার ক্ষমতা নিয়ে ডুলের ভাষ্য, ‘ব্যাটিংয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে কাজটা করতে চিন্তাভাবনাটা পরিষ্কার থাকতে হয়, যেটা হয়তো সবার নেই। আর সে যেভাবে এটার (রান তাড়া) পরিকল্পনা করে রান তাড়ার ভিতটা তৈরি করে, (দেখে মনে হয়) এটাই তাঁর জীবন।’
‘জীবন’ না অন্য কিছু সেটা কোহলিই ভালো বলতে পারবেন। তবে ভারতের ব্যাটিং ‘মায়েস্ত্রো’কে নিয়ে কারও কারও এমন ভাবনাকে দোষ দেওয়া যায় না। ৩৪তম ওভারে সূর্যকুমারের রান আউটে কোহলির ‘অবদান’ও ছিল। তাতে ভারতের পঞ্চম উইকেট পড়ে গিয়েছিল এবং ওই ওভার শেষে ৯৬ বলে দরকার ছিল ৮৩ রান। এখান থেকে যেকোনো কিছুই ঘটতে পারত। কিন্তু ওই যে দিল্লি ক্যাপিটালসের সেই ছবিতে জায়ান্ট স্ক্রিনের কথাটা—‘ম্যায় হুঁ না ইন্ডিয়া!’ মাঠে ব্যাটের তুলিতে কথাটার একদম আক্ষরিক অনুবাদ করেছেন কোহলি। চাইলে ভারতের সাবেক ক্রিকেটার মোহাম্মদ কাইফের ‘এক্স’ পোস্টটি স্মরণ করতে পারেন, ‘বিরাট কোহলি কখনো হাল ছাড়ে না। তার (জয়ের) ক্ষুধাটা সব সময় তীব্রই থাকে। সব সময় দলের জন্যই খেলে এবং বিশ্ব ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় “চেজ মাস্টার” (রান তাড়ার ওস্তাদ)। এই যোদ্ধাকে স্যালুট দেওয়া প্রয়োজন জাতির।’
কোহলি ১০৪ বলে ৯৫ রানের ইনিংসটি খেলার পথেও রেকর্ড গড়েছেন। ক্রিস গেইলের ২৯৪২ রান পেছনে ফেলে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে আইসিসির সাদা বলের টুর্নামেন্টে পেয়েছেন ৩ হাজার রানের মাইলফলকের দেখা। সনাৎ জয়াসুরিয়াকে (১৩৪৩০) টপকে ওয়ানডেতে চতুর্থ সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও এখন কোহলি (১৩৪৩৭)। শুধু কী তাই, কোহলি একটি জায়গায় ধরে ফেলেছেন সাকিব আল হাসানের দারুণ এক কীর্তিকেও। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৫০+ ইনিংসে কোহলি এখন যৌথভাবে দ্বিতীয়। ১২টি ৫০+ ইনিংস খেলা কোহলি ধরে ফেললেন সাকিব ও কুমার সাঙ্গাকারাকে। দুজনেই বিশ্বকাপে ১২টি করে ৫০+ ইনিংস খেলেছেন। সর্বোচ্চ ২১টি ৫০+ ইনিংস শচীন টেন্ডুলকারের।
তবে কোহলির গতকালের ৫০+ ইনিংসটি ভারতের সমর্থকেরা সত্যিই অনেক দিন মনে রাখবেন। বড় লক্ষ্য ছিল না, কিন্তু ব্যাটকে ‘সার্জিক্যাল নাইফ’ বানিয়ে যেভাবে ব্যাট চালিয়েছেন, তাতে কিউইদের সব রকম পরিকল্পনারই জবাব ছিল। ম্যাচ শেষে নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক টম ল্যাথামই বলেছেন, ‘বিরাট কোহলি অসাধারণ এক ইনিংস খেলেছে। ম্যাচটা নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং সবাই তাকে কেন্দ্র করে ব্যাট করেছে। (প্রতিপক্ষের) বেশির ভাগ পরিকল্পনারই জবাব থাকে বিরাটের কাছে।’
আর সেসব জবাব কী নিখুঁত ব্যাটিংয়েই না দেন! তাতে যেন সমর্থকেরাও হারিয়ে যান। হার্শা ভোগলেও যেন গতকাল কোহলির নিখুঁত ব্যাটিংয়ে হারিয়ে গিয়েছিলেন। ‘এক্স’-এ তাঁর পোস্টটি যেন কোহলির সব সমর্থকের মনের কথা, ‘কয়েক বছর আগে একটি তথ্যচিত্রে বলেছিলাম, আমার মনে হয় কোহলি প্রায়ই নিজের “পারফেকশনে”র মধ্যে হারিয়ে যায়। কিন্তু আজ (গতকাল) তাকে দেখার সময় আমি তার পারফেকশনের মধ্যে হারিয়ে গিয়েছিলাম।’
এই যে মায়াপুরীর ব্যাটিং—সে জন্য নিশ্চয়ই স্যালুট পাচ্ছেন কোহলি!