রোহিতের মুখে তারুণ্যের জয়গান
রোহিত শর্মা গর্বিত। সেটা শুধু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ এক ম্যাচ হাতে রেখেই জেতার জন্য নয়। আরেকটু গভীরে তাকালে ভারত অধিনায়কের গর্বের কেন্দ্রবিন্দুটা দেখা যায়। ইএসপিএনক্রিকইনফো সেখানে আলোকপাত করায় দেখাটাও সহজ—ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইটটির দাবি, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই সিরিজে জেতা তিনটি ম্যাচ ভারতের সেরা ছয়টি টেস্ট জয়ের ‘বিশেষ’ তালিকায় স্থান পাবে। বিশেষ—এই কথাটা একটু ব্যাখ্যার দাবি রাখে। প্রতিপক্ষ দলের অভিজ্ঞতা এবং সে তুলনায় অনভিজ্ঞ দল নিয়ে জয়—এই মাপকাঠিতে বিশেষ।
২০০০-০১ মৌসুমে চেন্নাইয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভারতের জেতা টেস্টটি উদাহরণ হিসেবে টেনেছে ইএসপিএনক্রিকইনফো। সে টেস্টে স্টিভ ওয়াহর অস্ট্রেলিয়াকে ২ উইকেটে হারিয়েছিল সৌরভ গাঙ্গুলীর ভারত। অন্তত ম্যাচ খেলার সংখ্যা বিচারে সেই টেস্টে সৌরভের দলের চেয়ে ২.৮৩ গুণ বেশি অভিজ্ঞ ছিল অস্ট্রেলিয়া দল।
এবার পাঁচ ম্যাচ টেস্ট সিরিজে বিশাখাপট্টনম, রাজকোট ও রাঁচিতে হার মানা ইংল্যান্ডও দলও কিন্তু ম্যাচ খেলার সংখ্যা বিচারে রোহিতের দলের চেয়ে দ্বিগুণ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ছিল। কিন্তু তারুণ্যের সময়োচিত শীতল মাথার কাছে হার মেনেছে অভিজ্ঞতা। রাজকোটে ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে যশস্বী জয়সোয়ালের ‘ডাবল’ সেঞ্চুরি, দুই ইনিংসেই সরফরাজ খানের ফিফটি—এসব তারুণ্যের জয়গান। কিংবা বিশাখাপট্টনমে জয়সোয়ালের ‘ডাবল’ এবং শুবমান গিলের সেঞ্চুরি, এসব পারফরম্যান্স তো অভিজ্ঞতার বিপক্ষে তারুণ্যেরই জবাব।
রাঁচিতে ৫ উইকেটে জিতে সিরিজও ৩-১ ব্যবধানে জয় নিশ্চিতের পর সংবাদ সম্মেলনে রোহিত তাই বললেন, ‘সন্দেহ নেই সিরিজে কঠিন লড়াই হয়েছে। চার ম্যাচ শেষে জয়ী দলের কাতারে থাকতে পেরে সত্যিই ভালো লাগছে। ড্রেসিংরুমের সবাইকে নিয়ে আমি গর্বিত। অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল আমাদের সামনে। ভিন্ন ভিন্ন টেস্ট ম্যাচে ভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে, আমরা দারুণভাবে সবকিছুর জবাব দিয়েছি।’
জবাব দেওয়ার এই তালিকায় রোহিতের দলের তরুণেরাই থাকবেন সবার ওপরে। রাঁচি টেস্টের কথাই ধরুন। ১৯২ রান তাড়া করতে নেমে রোহিত নিজে করেছেন ৫৫। কিন্তু রাঁচিতে চতুর্থ ইনিংসে শিরোনাম হবে—ভারতের তরুণদের ধৈর্য। এই রান তাড়া করার পথে টানা ৩১ ওভারের একটি সময় গিয়েছে, যখন ভারতের ব্যাটসম্যানেরা কোনো বাউন্ডারি মারেননি, আর ধৈর্যের এই পরীক্ষায় বেশ বড় অবদান দুই তরুণ ধ্রুব জুরেল (৭৭ বলে ৩৯* ও শুবমান গিলের (১২৪ বলে ৫২*)। চাপটা শুষে নিয়ে ঠান্ডা মাথায় জিতিয়েছেন দুজন।
তরুণদের নিয়ে রোহিত বলেছেন, ‘এটা পরিষ্কার যে তারা দলে থাকতেই এসেছে। অতীতে উঠে আসার পথে তারা যত পরিশ্রম করেছে, স্থানীয় ক্লাব ক্রিকেট থেকে ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করা, এরপর এখানে...অবশ্যই টেস্ট ক্রিকেট খুব বড় চ্যালেঞ্জ। এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু আমি ওদের সঙ্গে কথা বলার সময় যেমন উত্তর পাই সেসব সত্যিই প্রেরণাদায়ক। তাই আমার এবং রাহুল ভাইয়ের (প্রধান কোচ রাহুল দ্রাবিড়) কাজ হলো তারা দলে যেমন পরিবেশ চায়, তেমন পরিবেশ তৈরি করা। মাঠে গিয়ে পারফর্ম করা নিয়ে তারা ভাবে না। তারা এটাই করতে চায়। তাই বারবার সেসব দায়িত্ব মনে করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। কারণ দলে আসার সময়ই তারা নিজেদের লক্ষ্যটা জানত।’
রাজকোটে অভিষেক টেস্টে ভারতের প্রথম ইনিংসে ৪৬ রান করেছিলেন জুরেল। দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর ব্যাটিংয়ে নামতে হয়নি। রাঁচিতে ভারতের প্রথম ইনিংসে তাঁর ২৩ বছর বয়সী জুরেলের ১৪৯ বলে ৯০ রানের ইনিংসটি ছিল মহাগুরুত্বপূর্ণ। তাতে ইংল্যান্ডের সঙ্গে প্রথম ইনিংসে রানের ব্যবধান ৫০ এর নিচে নেমে এসেছিল, ইংল্যান্ড নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪৫ রানে অল আউট হওয়ায় যে কারণে সব মিলিয়ে জয়ের জন্য লক্ষ্যটা বেশি হয়নি ভারতের জন্য।
জুরেল ছাড়াও অন্যদের প্রশংসাও করলেন রোহিত, ‘ধ্রুব জুরেল দ্বিতীয় ম্যাচেই নিজের ধৈর্য এবং মাথা ঠান্ডা রেখেছে। সে শট খেলতে পারে উইকেটের চার পাশেই। প্রথম ইনিংসে তার ৯০ রানটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আর দ্বিতীয় ইনিংসে শুবমান গিলের সঙ্গে পরিণত মস্তিষ্কের ছাপও রেখেছে।’