২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

ইতিহাস গড়া উগান্ডার ক্রিকেট সম্পর্কে আপনি কতটা জানেন

প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছে উগান্ডাউগান্ডা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন এক্স

মাশরাফি বিন মুর্তজার কি সেই ম্যাচটির কথা মনে পড়ে? ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে কেনিয়ায় স্বাগতিক দল এবং পাকিস্তান ও উগান্ডার সঙ্গে চার জাতির একটা টি–টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট খেলেছিল বাংলাদেশ। উগান্ডার বিপক্ষে অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন মাশরাফি, তবে সে সময় উগান্ডার টি-টোয়েন্টি মর্যাদা ছিল না বলে অফিশিয়াল রেকর্ডে সেই ম্যাচ খুঁজে পাওয়া যায় না।

সেই টুর্নামেন্টে উগান্ডা ‘অঘটনের’ জন্ম দিয়েছিল কেনিয়াকে হারিয়ে। কেনিয়া তখনো বিশ্ব ক্রিকেটে বিস্মৃত হয়নি, কদিন পরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও খেলেছিল। শুধু সেই টুর্নামেন্টে কেন, উগান্ডার ওই দলের সদস্যদের কাছে সেটিই ছিল তখন পর্যন্ত সেরা জয়, যেটি তাঁদের উজ্জীবিত করেছিল বিশেষভাবে।

সেই কেনিয়া, জিম্বাবুয়েকে টপকে আজ নতুন ইতিহাসই গড়ল উগান্ডা। রুয়ান্ডাকে হারিয়ে আফ্রিকান বাছাইপর্বের দ্বিতীয় দল হিসেবে আগামী বছর জুনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত করে ফেলেছে উগান্ডা। ক্রিকেটের যেকোনো বিশ্বকাপে এই প্রথম দেখা যাবে আফ্রিকার দেশটিকে।

আরও পড়ুন

গতকাল কেনিয়াকে হারিয়ে নিজেদের কাজটি অনেকটাই সহজ করে এনেছিল উগান্ডা। আজকের প্রতিপক্ষ রুয়ান্ডার সঙ্গে এর আগে কখনোই হারেনি তারা, এবারও তাদের পাত্তা দেয়নি ‘ক্রিকেট ক্রেনস’ নামের উগান্ডা। রুয়ান্ডাকে ৬৫ রানে আটকে দিয়ে ৮.১ ওভারেই জয় নিশ্চিত করে ফেলে তারা।

উগান্ডার বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করা অনেকের মনের বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে। প্রশ্নও জেগেছে অনেকের মনে, উগান্ডার কি ক্রিকেট ঐতিহ্য বলে কিছু আছে? কেমন সেই দেশের ক্রিকেট কাঠামো? স্বাভাবিকভাবেই ক্রিকেট–বিশ্ব এখন এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে চাইছে।

অন্য অনেক দেশের মতোই ইংরেজরা উগান্ডায় নিয়ে গিয়েছিল ক্রিকেট, ভারতীয়দেরও একটা প্রতিনিধিত্ব ছিল। স্কুলগুলোতে, সব গোত্রের মধ্যেই ক্রিকেট ছড়িয়ে পড়তে খুব একটা সময় লাগেনি। প্রথম ১৯৫১ সালে উগান্ডায় হয়েছিল প্রথম শ্রেণির ম্যাচ, যদিও সে ম্যাচের রেকর্ড আর্কাইভে নেই। তবে ক্রিকেট সেখানে আছে অনেক দিন ধরেই। মূলত ‘মিনি ক্রিকেট’ ও স্কুল ক্রিকেটই উগান্ডার জাতীয় দলের সবচেয়ে বড় ‘পাইপলাইন’।

২০০৭ সালে কেনিয়ায় চার জাতি টুর্নামেন্টে খেলেছিল উগান্ডা
এএফপি

১৯৭৫ সালে প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলেছিল পূর্ব আফ্রিকা নামে একটি দল, যাতে ছিল কেনিয়া, তানজানিয়া, জাম্বিয়া ও উগান্ডার প্রতিনিধিত্ব। ১৯৯৭ সালে উগান্ডা ছিল পূর্ব ও মধ্য আফ্রিকা দলের অংশ, যারা খেলেছিল আইসিসি ট্রফি। ১৯৯৮ সালে উগান্ডা আইসিসির সহযোগী সদস্যের মর্যাদা পায়। গত দশকের শুরুর দিকে বেশ সম্ভাবনা জাগিয়েছিল দলটি, সে সময় দক্ষিণ আফ্রিকার পর সে অঞ্চলে ক্রিকেটের দ্বিতীয় পরাশক্তি হয়ে উঠবে তারা—ভাবা হচ্ছিল এমনও।

কিন্তু উগান্ডা এরপর হোঁচট খায় আবার। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে এর মাঝে খেললেও সিনিয়র পর্যায়ে বাছাইপর্ব পেরিয়ে আসতে পারেনি তারা। গতবার আফ্রিকা অঞ্চলের বাছাইপর্ব পেরিয়ে এলেও মূল বাছাইপর্বে নিজেদের গ্রুপে শেষেই থাকে।

আগামী বছরের বিশ্বকাপে বাড়ানো হয়েছে দলের সংখ্যা, স্বাভাবিকভাবেই তাতে সুযোগ বেড়েছে উগান্ডার মতো দলের। তবে এরপরও তাদের বড় বাধা ছিল প্রতিপক্ষের নাম। এর আগে টানা দুটি বিশ্বকাপ খেলা নামিবিয়ার সঙ্গে জিম্বাবুয়ে ও সম্প্রতি আবার উত্থানের গল্প লিখতে শুরু করা কেনিয়ার বাধা টপকাতে হতো তাদের। উগান্ডা সে বাধা টপকে গেল ঠিকই। এক নামিবিয়া ছাড়া এবার বাছাইপর্বে সব কটি ম্যাচই জিতেছে তারা। হুট করেই যে এমন সাফল্য, তা নয়। এ বছরই জিতেছে বড় দুটি টুর্নামেন্ট। সর্বশেষ গত জুনে আফ্রিকা কন্টিনেন্টাল কাপের ফাইনালে কেনিয়াকে হারায় তারা, যে টুর্নামেন্টে উগান্ডা জেতে ১২ ম্যাচের মধ্যে ১১টিই।

উগান্ডার এবারের দলে যেমন আছেন ১৯ বছর বয়সী পেসার প্যাসকেল মুরুঙ্গী, তেমনি আছেন ৪৩ বছর বয়সী ফ্র্যাঙ্ক এনসুবুগাও। ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফিতে পূর্ব ও মধ্য আফ্রিকার হয়ে খেলা এনসুবুগাও উগান্ডার হয়ে খেলছেন তিনটি ভিন্ন দশকে। ৩২ বছর বয়সী অধিনায়ক ব্রায়ান মাসাবাও খেলছেন বয়সভিত্তিক পর্যায় থেকেই। সব প্রজন্মের জন্যই যে উগান্ডার ক্রিকেটের সবচেয়ে স্মরণীয় দিনটি এসেছে আজ, সেটি বলাই যায়। উগান্ডা যে খেলবে বিশ্বকাপ!

আরও পড়ুন