১৪.৯২ গড়ে ৭১ উইকেট—বুমরার মতো এমনকিছু খুব কমই দেখেছে ক্রিকেট
১৩ টেস্টে ১৪.৯২ গড়ে ৭১ উইকেট!
২০২৪ সালটা এমন অবিশ্বাস্য পরিসংখ্যান নিয়েই শেষ করলেন যশপ্রীত বুমরা। ২০২৪ সালে তো বটেই, ২০১৬ সালের পর টেস্টে এক বছরে ভারতীয় পেসারের চেয়ে বেশি উইকেট পাননি অন্য কোনো বোলার। শুধু পেসারদের হিসাব করলে ২০০৮ সালের পর বুমরার ৭১-ই এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ।
বুমরার আগে টেস্টে পেসারদের মধ্যে এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বশেষ ৭০-এর বেশি উইকেট পেয়েছিলেন ডেল স্টেইন। ২০০৮ সালে ১৩ টেস্টে ২০.০১ গড়ে ৭৪ উইকেট নিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকান ফাস্ট বোলার।
পেসার ও স্পিনার মিলিয়ে বুমরার আগে সর্বশেষ এক পঞ্জিকাবর্ষে ‘৭০’ ছুঁয়েছিলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ২০১৬ সালে ১২ টেস্টে ২৩.৯০ গড়ে ৭২ উইকেট পেয়েছিলেন ভারতীয় অফ স্পিনার।
১৪৭ বছরের টেস্ট ইতিহাসে কোনো বোলারের বছরে ৭০ বা এ বেশি উইকেট নেওয়ার ঘটনা ১৮টি। সর্বপ্রথম ১৯৬৪ সালে এই কীর্তি গড়েন অস্ট্রেলিয়ার ফাস্ট বোলার গ্রাহাম ম্যাকেঞ্জি। ১৪ টেস্টে ২৪.৪৬ গড়ে ৭১ উইকেট নিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে মোট ৬০টি টেস্ট খেলা ম্যাকেঞ্জি।
এক পঞ্জিকাবর্ষে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার রেকর্ডটা শেন ওয়ার্নের। অস্ট্রেলিয়ার প্রয়াত লেগ স্পিন কিংবদন্তি ২০০৫ সালে ১৫ টেস্টে ২২.০২ গড়ে নেন ৯৬ উইকেট। ওয়ার্ন ভাঙেন ১৯৮১ সালে ডেনিস লিলির ৮৫ উইকেটের রেকর্ড (১৩ টেস্ট, ২০.৯৫ গড়)।
ওয়ার্নের রেকর্ডটি পরের বছরই হুমকির মুখে ফেলেছিলেন মুত্তিয়া মুরালিধরন। শ্রীলঙ্কান অফ স্পিনার ২০০৬ সালে ১১ টেস্টেই ১৬.৯০ গড়ে নেন ৯০ উইকেট। টেস্টে টেস্ট ক্রিকেটে শীর্ষ দুই উইকেটশিকারি ছাড়া আর কেউ এক বছরে ৯০ উইকেট পাননি। শেন ওয়ার্ন মোট ৪ বার এক বছরে ৭০টির বেশি উইকেট পেয়েছেন। মুরালি যা পেয়েছেন তিনবার। এ ছাড়া ভারতের কপিল দেবই শুধু এক বছরে দুবার ৭০টির বেশি উইকেট পেয়েছেন।
এক পঞ্জিকাবর্ষে মোট উইকেটশিকারে ম্যাকেঞ্জির সঙ্গে যৌথভাবে ১৫তম স্থানে আছেন বুমরা। তবে ভারতীয় ফাস্ট বোলার এ বছর কী করেছেন সেটি শুধু উইকেটের সংখ্যায় ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। ২০২৪ সালে বুমরার বোলিং ১৪.৯২। টেস্ট ইতিহাসে বুমরার আগে ১৫ এর কম গড়ে এক বছরে কমপক্ষে ৫০ উইকেট নিতে পেরেছেন মাত্র দুজন বোলার। দুজনের নামের আগেই কিংবদন্তি লিখতে দুবার ভাবতে হয় না। সেই দুজনও অবশ্য বুমরার মতো ৭০ উইকেট নিতে পারেননি।
প্রথমজন সিডনি বার্নস। ইংল্যান্ডের মিডিয়াম পেসার ১৯১২ সালে ৯ টেস্টে ৬১ উইকেট পেয়েছিলেন ১৪.১৪ গড়ে। ৭০ বছর পর পাকিস্তানের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ইমরান খান ৯ টেস্টেই ৬২ উইকেট নেন ১৩.২৯ গড়ে। ৪২ বছর পর বুমরাতে ফিরল ইমরানের কীর্তি।
বার্নস ও ইমরানের গড় বুমরার চেয়ে কম হলেও স্ট্রাইক রেটে বুমরাই এগিয়ে। এ বছর প্রতি ৩০.১ বলে ১টি উইকেট পেয়েছেন বুমরা। অন্যদিকে ১৯১২ সালে বার্নসের স্ট্রাইক রেট ছিল ৩৬.০, ১৯৮২ সালে ইমরানের স্ট্রাইক রেট ৩৮.০।
১৫ রানের কম গড়ে বছরে ৫০ উইকেট
চলমান বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির প্রথম ৪ টেস্টেই ৩০ উইকেট পেয়ে গেছেন বুমরা। টেস্ট ক্রিকেটে ২০১৩ সালের পর এই প্রথম কোনো পেসার এক সিরিজে ৩০ উইকেট পেলেন। সর্বশেষ ২০১৩-১৪ মৌসুমে ঘরের মাঠের অ্যাশেজে ৫ টেস্টে ৩৭ উইকেট পেয়েছিলেন অস্ট্রেলীয় ফাস্ট বোলার মিচেল জনসন।
টেস্টে ভারতীয় পেসারদের এক সিরিজের রেকর্ড ভাঙতে ৩ উইকেট দরবার বুমরার। ১৯৭৯-৮০ মৌসুমে ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬ টেস্টে ৩২ উইকেট নিয়েছিলেন কপিল দেব। পেস-স্পিন মিলিয়ে ভারতীয় রেকর্ডটা ভগবত চন্দ্রশেখরের। ১৯৭২-৭৩ মৌসুমে ইংল্যান্ডের ভারত সফরে ৫ টেস্টে ৩৫ উইকেট পেয়েছিলেন এই লেগ স্পিনার।
টেস্টে এক সিরিজে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার রেকর্ডটা সিডনি বার্নসের। ১৯১৩-১৪ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ৪ টেস্টে ৪৯ উইকেট পেয়েছিলেন ইংলিশ পেসার!